শিক্ষা ক্যাডারে বিশৃঙ্খলানীতিমালা উপেক্ষা করে বদলি, পদায়ন

রাকিব উদ্দিন |

নীতিমালা উপেক্ষা করে বদলি, পদায়ন ও ওএসডি করায় বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে’। প্রায় ১৬ হাজার পদের এই ক্যাডার সামলাতে দীর্ঘদিন ধরেই হিমশিম খাচ্ছে শিক্ষা প্রশাসন।

জেলা, উপজেলা ও মফস্বল এলাকার সরকারি কলেজ এবং শিক্ষা প্রশাসনের আড়াই হাজারের বেশি পদ ফাঁকা থাকলেও সেগুলোতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক পদায়ন করতে পারছে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওইসব এলাকায় পদায়ন করলেই মন্ত্রণালয়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে থাকেন বিভিন্ন স্তরের প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি ও উচ্চ পদের সরকারি কর্মকর্তারা।

অথচ ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) হয়ে কর্মহীন সময় অতিবাহিত করছেন সাত শতাধিক শিক্ষক। এই শিক্ষকদের একটি বড় অংশ পদোন্নতি পেয়েও নিচের পদে ইনসিটু হিসেবে বহাল রয়েছেন। তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো কর্মস্থলে যাচ্ছেন, আসছেন। কেউ কেউ লোভনীয় পদে বসতে নানা মহলে তদবিরও করছেন। এই তদবির সামলাতেই নাকাল অবস্থা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। এসব কারণেই শিক্ষক বদলিতে এলোমেলো অবস্থা বিরাজ করছে। শিক্ষক স্বল্পতায় মফস্বল এলাকার শতাধিক কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

দেশের সব পর্যায়ে কলেজে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপক পদায়ন এবং রাজধানীর কলেজগুলোতে প্রভাষক থেকে অধ্যাপক পর্যন্ত শিক্ষক পদায়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। ওএসডি, এটাচমেন্ট (সংযুক্ত) করে মন্ত্রণালয়। আর রাজধানীর বাইরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কলেজে প্রভাষক ও সহকারী অধ্যাপক পদায়ন করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর (মাউশি) কর্তৃপক্ষ।

এ ব্যাপারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা  বলেন, ‘এমনিতেই কাউকে ওএসডি রাখা হয় না। প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি, সংসদ সদস্য, আমলা ও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার বিশিষ্ট নাগরিকদের তদবিরেই শিক্ষকদের ওএসডি রাখা হয়। ইচ্ছে করলেই তাদের সবাইকে উপজেলা ও মফস্বল এলাকার কলেজে বদলি করা সম্ভব হয় না। এছাড়া অসুস্থতা, পারিবারিক সুবিধা ও নিরাপত্তাজনিত কারণেও নারী শিক্ষকদের সুবিধাজনক কলেজে পদায়ন করতে হয়।’

কলেজে শিক্ষক পদায়নে শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে বিগত কয়েক বছর ধরেই নানা রকম নীতিমালা, যোগ্য ও দক্ষ শিক্ষক বাছাই করতে ‘ফিট লিস্ট’ ও ‘বাছাই কমিটি’ গঠন, অনলাইনে আবেদন গ্রহণ- ইত্যাদি উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, এসব উদ্যোগ নেয়া হলেও তদবির ছাড়া কেউ ঢাকায় পদায়ন পেয়েছে- এমন নজির নেই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় বেশ কয়েকবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তিন বছরের বেশি কেউ ঢাকায় চাকরি করতে পারবেন না। এই সিদ্ধান্তেরও প্রতিফলন ঘটেনি।

জানা গেছে, সারাদেশের ৩৩৫টি সরকারি ও সদ্য জাতীয়করণ হওয়া কলেজে মোট শিক্ষকের পদ রয়েছে ১৫ হাজার ৬৬৮টি। এর মধ্যে শূন্য রয়েছে প্রায় দুই হাজার ৫০০টি। তবে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরের কলেজগুলোতে শূন্যপদের সংখ্যা নেই বললেই চলে। উপজেলা ও বিশেষ কয়েকটি জেলার কলেজগুলোতেই শূন্য পদের সংখ্যা বেশি। ফলে ওইসব কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়াও সদ্য জাতীয়করণ হওয়া এবং নবনির্মিত আরও কয়েকটি কলেজে বর্তমানে শিক্ষক পদায়নের প্রক্রিয়া চলছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি কলেজে অধ্যাপকের (প্রফেসর) মোট পদ রয়েছে এক হাজার ৭০টি। এর মধ্যে ৮৫টি পদ শূন্য রয়েছে। আবার অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েও নিচের পদে অর্থাৎ সহযোগী অধ্যাপকের পদে বহাল রয়েছেন ৮৪ জন, যাদের বেশির ভাগই নিয়মিত একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বিতরণ থাকছেন।

সব সরকারি কলেজে সহযোগী অধ্যাপকের মোট পদ রয়েছে দুই হাজার ২৩৬টি। এর মধ্যে শূন্য রয়েছে ১৬১টি। কিন্তু গত বছর সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েও ইনসিটু হিসেবে নিচের পদে বহাল রয়েছেন ২২০ জন শিক্ষক।

সরকারি কলেজে সহকারী অধ্যাপকের মোট পদ রয়েছে চার হাজার ২২৬টি। এর মধ্যে শূন্য রয়েছে ১১০টি। কিন্তু পদ নেই- এমন অজুহাত দেখিয়ে নিচের পদে (প্রভাষক) বহাল রাখা হয়েছে ৫৩ জনকে।

সারাদেশের সরকারি কলেজে প্রভাষকের (লেকচারার) মোট পদ রয়েছে আট হাজার ৫৪৬টি। এর মধ্যে শূন্য রয়েছে দুই হাজার ৩০০টি।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) কলেজ শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দর্শন, ইসলামের ইতিহাস ও ইতিহাস বিষয়েই শূন্য পদের সংখ্যা বেশি। পদ না থাকায় এসব বিষয়ের শিক্ষকরা নিয়মিত পদোন্নতিও পাচ্ছেন না। দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা বিরাজমান থাকলেও এর সমাধানে কার্যকর কোন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না। এ নিয়ে বঞ্চিত শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। তারা বিষয়ভিত্তিক পদোন্নতির পরিবর্তে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি চান।

সূত্র: দৈনিক সংবাদ


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় - dainik shiksha কাল থেকে শিক্ষা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী চলবে সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির - dainik shiksha বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার মান বাড়ানোর নির্দেশ রাষ্ট্রপতির ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ - dainik shiksha ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে দেশজুড়ে সংহতি সমাবেশ সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির - dainik shiksha সিনিয়র আইনজীবীরা বিচার বিভাগের স্বার্থে কথা বলবেন, আশা প্রধান বিচারপতির দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025200843811035