নীতিমালা মানছে না সিংহভাগ বেসরকারি মেডিকেল কলেজ

আয়নাল হোসেন ও সাইফ সুজন |

গুলশানের বেসরকারি সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, তাদের হাসপাতালে শয্যা সংখ্যা ৫০০। যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিদর্শক দল সরেজমিন গিয়ে শয্যা দেখেছে অর্ধেকেরও কম। কলেজটির জন্য সাড়ে ৬ কাঠা ও হাসপাতালের ১১ কাঠা জমির কথা বলা হলেও তা ব্যক্তির নামে নিবন্ধিত। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটিতে স্বল্পসংখ্যক রোগী থাকলেও ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে দেখানো হয় কাগজে-কলমে। ৯০ আসনের কলেজটির শ্রেণীকক্ষও অপরিসর ও অপরিচ্ছন্ন। পর্যাপ্ত সরঞ্জামাদি নেই মিউজিয়ামে। প্রকট শিক্ষক সংকট সব বিভাগেই।

যদিও বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনাসংক্রান্ত নীতিমালায় বলা আছে, ৫০ আসনের একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ২৫০ শয্যার আধুনিক হাসপাতাল থাকতে হবে। আসনসংখ্যা ১০০ হলে হাসপাতালের শয্যা থাকতে হবে ৫০০টি। ৭০ শতাংশ শয্যায় আবার সার্বক্ষণিক রোগী ভর্তি থাকতে হবে। আর প্রতি ১০ জন শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক থাকতে হবে একজন। এসবের কোনোটিই মানছে না বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা মেডিকেল কলেজটি।

চিকিৎসা শিক্ষার মান যাচাইয়ে নিয়মিত বেসরকারি মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। চলতি বছর পরিদর্শন করা সিংহভাগ বেসরকারি মেডিকেল কলেজের বিরুদ্ধেই নিয়ম না মানার প্রমাণ পেয়েছে অধিদপ্তরের পরিদর্শন দল। একে হতাশাজনক বলছেন খোদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারাই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (চিকিৎসা, শিক্ষা ও জনশক্তি উন্নয়ন) অধ্যাপক আবদুর রশীদ বলেন, বেসরকারি কলেজগুলো পরিদর্শনে যে চিত্র পাওয়া গেছে তা হতাশাজনক। শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে বিভিন্ন ধরনের অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে এসব প্রতিষ্ঠান। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিলেও তাদের জন্য ন্যূনতম সুবিধাও নিশ্চিত করছে না। অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই রোগীর সংখ্যা খুবই কম পাওয়া গেছে। অথচ চিকিৎসা শিক্ষার ক্ষেত্রে হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সংখ্যক রোগী থাকা জরুরি।

নিয়ম না মানা বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর আরেকটি আশুলিয়ার নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজ। এটি পরিদর্শনে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়াই অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি এবং বিষয়ভিত্তিক ল্যাবরেটরি ও মিউজিয়াম শিক্ষা উপকরণের ঘাটতি পেয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। শিক্ষার্থী অনুপাতে প্রয়োজনীয় শিক্ষকও দেখাতে পারেনি বেসরকারি মেডিকেল কলেজটি।

পরিদর্শন প্রতিবেদনে নাইটিংগেল মেডিকেল কলেজ সম্পর্কে বলা হয়েছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপন ও পরিচালনা নীতিমালার অনেক শর্তই পূরণ করেনি তারা। মোটেই সন্তোষজনক নয় শিক্ষার মান ও পরিবেশ।

অনিয়মের তালিকায় থাকা আরেক প্রতিষ্ঠান বেসরকারি আশিয়ান মেডিকেল কলেজ। রাজধানীর খিলক্ষেতে কলেজটিতে গিয়েও পরিদর্শক দল বিভিন্ন অনিয়ম খুঁজে পেয়েছে। কলেজটির বিষয়ে পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নীতিমালা অনুযায়ী হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা অপ্রতুল। রোগী ভর্তির হারও অনেক কম। শিক্ষকস্বল্পতা রয়েছে বেসিক ও ক্লিনিক্যাল সায়েন্সের। মেডিকেল কলেজটির একাডেমিক ও হাসপাতালের কার্যক্রমও মানসম্মত নয়।

বেসরকারি মেডিকেল কলেজ পরিদর্শনে বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্য হিসেবে ছিলেন কলামিস্ট ও লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ। পরিদর্শন বিষয়ে তিনি বলেন, পরিদর্শনের অংশ হিসেবে আমরা আট থেকে ১০টি মেডিকেল কলেজে যাই। দুঃখজনক হলেও সত্য, কোনো মেডিকেল কলেজের কার্যক্রমেই আমরা সন্তুষ্ট হতে পারিনি। কিছু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোনো রোগীই পাওয়া যায়নি। আবার অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই শিক্ষকস্বল্পতা রয়েছে। চিকিৎসা শিক্ষা ও সেবা প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক যন্ত্রপাতিও অনুপস্থিত মেডিকেল কলেজগুলোয়।

এমন আরেকটি বেসরকারি মেডিকেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রংপুরের নর্দান (প্রা.) মেডিকেল কলেজ। মেডিকেল কলেজটি পরিদর্শনে হাসপাতালে ৫০০ শয্যার স্থলে মাত্র ১৪০ শয্যার অস্তিত্ব পেয়েছে পরিদর্শক দল। পাশাপাশি আর্থিক অনিয়মের প্রমাণও মিলেছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। কলেজের নিজস্ব স্থায়ী আমানতের ১ কোটি টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।

নীতিমালা অনুযায়ী জমির স্বল্পতা রয়েছে রাজধানীর বেসরকারি নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের। কলেজটির পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসপাতালের ওয়ার্ডগুলো সুবিন্যস্ত নয়। গ্রন্থাগারে পর্যাপ্ত নয় বইয়ের সংখ্যাও। ভর্তি ও হিসাবসংক্রান্ত কয়েকটি অনিয়ম পাওয়ায় বেসরকারি উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজকে সতর্ক করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। পরিদর্শন প্রতিবেদনের আলোকে কলেজটিকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অনিয়মের জন্য সতর্ক করা হলো। এছাড়া রেজিস্টার্ড অডিট ফার্মের মাধ্যমে অডিট সম্পন্ন করতে হবে।

বেসরকারি কেয়ার মেডিকেল কলেজ বিষয়ে পরিদর্শন প্রতিবেদনে বলা হয়, কলেজটির নামে নির্ধারিত পরিমাণ জমি কেনা হয়নি। এমনকি কলেজের নিজস্ব হাসপাতালও নেই। এসব ঘাটতি পূরণের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ ও বেড অকুপেন্সি বাড়াতে বলা হয়েছে কলেজটিকে।

একইভাবে শিক্ষার্থী অনুপাতে শিক্ষক ও রোগীর সংখ্যা বাড়ানোর তাগিদ দেয়া হয়েছে বেসরকারি আইচি মেডিকেল কলেজকেও। পরিদর্শনের আলোকে কলেজটিকে বলা হয়েছে, নীতিমালা অনুযায়ী ২ একর জমি ক্রয় নিশ্চিত, আলাদা একাডেমিক ভবন নির্মাণ ও বেসমেন্ট থেকে অ্যানাটমি বিভাগ স্থানান্তর করতে হবে।

মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি, শিক্ষক নিয়োগসহ সার্বিক একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম তদারকিতে সংশ্লিষ্ট আছে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এগুলোর একটি বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ বলেন, মন্ত্রণালয়, বিএমডিসি ও সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রমে সমন্বয়হীনতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম করছে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো। তবে সম্প্রতি তদারকি প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ের জন্য একটি গাইডলাইন প্রণয়নের কাজ চলছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের চিকিৎসকদের বড় একটি অংশ বের হচ্ছে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো থেকে। এসব কলেজে নানা অনিয়ম ও ঘাটতিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে মানসম্পন্ন চিকিৎসক তৈরির উদ্যোগ। উল্টো নিম্নমানের উদ্বৃত্ত চিকিৎসক তৈরি করছে বেসরকারি এসব মেডিকেল কলেজ।

দেশে চিকিৎসকের চাহিদা ও জোগান নিয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে দেশে ৬৩ হাজার ৩৯৫ জন চিকিৎসকের চাহিদার বিপরীতে জোগান ছিল ৭৪ হাজার ৯২৪ জন। চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধির বিদ্যমান হার অব্যাহত থাকলে ২০২১ সালে ৬৭ হাজার ২৬৫ জনের চাহিদার বিপরীতে অতিরিক্ত চিকিৎসকের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫৩ হাজার ৪০২। এর পাঁচ বছর পর উদ্বৃত্ত চিকিৎসকের সংখ্যা বেড়ে হবে ১ লাখ ২২ হাজার ৯৬৫। ৭১ হাজার ৩৭০ জনের চাহিদার বিপরীতে ২০২৬ সালে দেশে চিকিৎসকের সংখ্যা পৌঁছবে ১ লাখ ৯৪ হাজার ৩৩৫ জনে।

দেশের চিকিৎসা সেবায় এরই মধ্যে এর প্রভাব পড়ছে বলে জানান চিকিৎসা শিক্ষাবিদ ও ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন ফর মেডিকেল এডুকেশনের সিনিয়র অ্যাডভাইজার অধ্যাপক ডা. মোজাহেরুল হক। তিনি বলেন, বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় একদিকে অনিয়ম করে আসনের অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে। আবার শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্তসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ ও অবকাঠামো তৈরি করা হচ্ছে না। সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোয় এ ধরনের সমস্যা, বিশেষ করে অবকাঠামো ও শিক্ষক সংকট রয়েছে। এর ফলে দেশের মেডিকেল শিক্ষার মান নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। তৈরি হচ্ছে না দক্ষ চিকিৎসক, যার প্রভাব পড়ছে সার্বিক চিকিৎসা সেবায়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিদর্শন অনুযায়ী, বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি। অধিকাংশ বেসরকারি মেডিকেল কলেজই অনুমোদনের বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করছে।

তবে নীতিমালা অনুযায়ী বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো পরিচালিত হচ্ছে বলে দাবি করেন বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমসিএ) অর্থ সম্পাদক ইকরাম হোসেন বিজু। তিনি বলেন, মানের দিক থেকে মেডিকেল কলেজগুলোর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কোনোটির মান অনেক ভালো, আবার কোনোটির কম। তবে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করার মাধ্যমেই সরকার মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দেয় এবং সেগুলো পরিচালিতও হচ্ছে সে অনুযায়ী।

যদিও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিদর্শন দল নীতিমালার বাইরে গিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির প্রমাণ পেয়েছে অনেক বেসরকারি মেডিকেল কলেজের বিরুদ্ধে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন না নিয়ে নীতিমালা লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করানো মেডিকেল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে, সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ, ডাক্তার সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ, ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ, সাহাবউদ্দিন মেডিকেল কলেজ, মার্কস মেডিকেল কলেজ, এনাম মেডিকেল কলেজ, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ, ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন মেডিকেল কলেজ, কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ, রংপুর নর্দান মেডিকেল কলেজ ও হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজ। অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করায় এসব মেডিকেল কলেজকে জরিমানাও করা হয়েছে।

 

সৌজন্যে: বণিক বার্তা


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035660266876221