মাদরাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার এজহারভুক্ত আসামি হাফেজ আবদুল কাদেরকে (২৫) গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ ও পিবিআই। মামলা দায়েরের ৮ দিন পরও তাকে গ্রেফতার না করায় স্থানীয়রা ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেছেন।
নুসরাত হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত একমাত্র পলাতক আসামি আমিরাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব সফরপুর গ্রামের মনছুর খান পাঠান বাড়ির আবুল কাসেমের ছেলে হাফেজ আবদুল কাদের মানিক। সোনাগাজী ইসলামীয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক ও একই মাদরাসার ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি অধ্যক্ষ সিরাজের অনুগত হিসেবে মাদরাসার হোস্টেলে থাকতেন।
৬ এপ্রিল নুসরাত অগ্নিদগ্ধ হওয়ার পরদিন মালামাল নিয়ে হোস্টেল ত্যাগ করে বাড়িতে অবস্থান করেন আবদুল কাদের। ৮ এপ্রিল কাদেরসহ ৮ জনের নাম উল্লেখ করে নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান মামলা দায়ের করলে তিনি আত্মগোপনে চলে যান।
স্থানীয় জসিম উদ্দিন ও আজগর হোসেন জানান, ১২ এপ্রিল বিকেলে বসতঘরে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান আবদুল কাদেরের বাবা-মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা। তার এক ভাই দিনমজুর, একভাই মালদ্বীপ ও এক ভাই ঢাকায় একটি কারখানায় চাকরি করেন। তিন বোন বিবাহিত। বাড়ির লোকজনদের সঙ্গেও রয়েছে তার পরিবারের সদস্যদের বিরোধ। ৬ শতক জমির মধ্যে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করে নির্দিষ্ট সীমানায় বসবাস করছে তার পরিবার। কয়েক মাস আগে ঋণ নিয়ে এবং আবদুল কাদেরের উপার্জনের টাকা দিয়ে বসত ঘরের চারপাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা হয়। কাদেরের সেই টাকার উৎস নিয়েও এলাকাবাসীর মাঝে নানা সন্দেহের সৃষ্টি হয়।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইএর পরিদর্শক মো. শাহ আলম জানান, আবদুল কাদেরকে ধরতে পুলিশ একাধিকবার অভিযান চালিয়েছে। বর্তমানেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আমরা আশা করছি দ্রুত তাকে গ্রেফতার করতে পারবো।
হাফেজ আবদুল কাদেরসহ ওই মামলায় ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ ও আমিরাবাদ ইউনিয়নের চরকৃষ্ণ গ্রামের মৃত কলিম উল্লার ছেলে এসএম সিরাজ উদ দৌলা (৫৫), সোনাগাজী পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মুকছুদ আলম (৪৫), পৌরসভার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের আহসান উল্লার ছেলে নুর উদ্দিন (২০), একই গ্রামের ভূঞাবাজার এলাকার শাহাদাত হোসেন শামিম (২০), রহমত উল্লার ছেলে জাবেদ হোসেন (১৯), তুলাতলি এলাকার আবুল বশরের ছেলে যোবায়ের আহম্মেদ (২০), মাদরাসার ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আবছার উদ্দিনের (৩৫) নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়াও হাতমোজা, চশমা ও বোরকাপরা ৪ জনসহ অজ্ঞাত আরও অনেককে আসামি করা হয়েছে।
আলোচিত এ মামলায় এখন পর্যন্ত ১৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ও পিবিআই। এদের মধে ওই অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলা, কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, সহপাঠি আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্লাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষের ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, যোবায়ের আহাম্মদ, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন, মো. শামীম, কামরুন নাহার মনি ও জান্নাতুল আফরোজ মনি। এদের মধ্যে মামলার এজহারভুক্ত আটজনের মধ্যে ৭ আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। হাফেজ আবদুল কাদের নামে এজহারভুক্ত আরও এক আসামিকে এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
গত ৬ এপ্রিল সকালে আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসায় যান নুসরাত জাহান রাফি। সেখানে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ১০ এপ্রিল (বুধবার) রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান অগ্নিদগ্ধ নুসরাত। পরদিন সকালে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ স্বজনদের বুঝিয়ে দিলে বিকেলে সোনাগাজী পৌরসভার উত্তর চরচান্দিয়া গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।