নুসরাত হত্যা মামলার রায় আগামী মাসে

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলার রায় আগামী মাসেই হতে পারে বলে জানিয়েছেন বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। গত ২০ জুন থেকে ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আলোচিত এ মামলার বিচার কাজ শুরু হয়। বর্তমানে মামলাটির শুনানি শেষ পর্যায়ে। ইতিমধ্যে মামলার মূল সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। 

বাদীপক্ষের আইনজীবীরা দাবি করেছেন, সাক্ষ্যপ্রমাণ হাজির করে নুসরাত হত্যায় জড়িতদের অপরাধ প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে। তবে আসামিপক্ষের দাবি, বাদীপক্ষ প্রত্যক্ষ সাক্ষী হাজির করতে ব্যর্থ হয়েছে।

গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ-উদ-দৌলা একই মাদ্রাসার ছাত্রী নুসরাতকে যৌন নির্যাতন করে। এ নিয়ে মামলায় সিরাজকে গ্রেফতার করা হলে ৬ এপ্রিল নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যা করে তার সহযোগীরা। 

এ মামলায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মাত্র ৩৩ কার্যদিবসে তদন্ত শেষ করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এতে আসামি করা হয় তৎকালীন অধ্যক্ষ সিরাজসহ ১৬ জনকে। পিবিআই ৮০৮ পৃষ্ঠার ডকেট আদালতে উপস্থাপন করেছে। চার্জশিটে ৯২ জনকে সাক্ষী করা হয়। 

মামলায় সরকারপক্ষের আইনজীবী হাফেজ আহাম্মদ জানান, মামলার বিচার শুরুর পর প্রত্যেক কার্যদিবসে বিরতিহীনভাবে শুনানি চলছে। আদালতের বিচারক, সরকারপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সহযোগিতায় খুব দ্রুত বিচার কাজ এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে মূল ৩৩ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়েছে। বাকি সাক্ষীদের সাক্ষ্য নিতে তেমন সময়ের প্রয়োজন নেই। প্রতিদিন ৫-৬ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হবে। এ পর্যন্ত প্রত্যেক সাক্ষীই নির্দিষ্ট দিন হাজির হয়ে সাক্ষ্য দিয়েছেন। ইতিমধ্যে যারা সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাতে আসামিদের বিরুদ্ধে জড়িত থাকার প্রমাণ মিলেছে। 

বাদীপক্ষের আইনজীবী শাহজাহান সাজু বলেছেন, আগস্ট মাসে মামলায় রায় হয়ে যাবে বলে তিনি আশা করছেন। মামলার ১৬ আসামির প্রত্যেকেই যে নুসরাত হত্যায় জড়িত- তা সন্দেহাতীতভাবে আদালতে প্রমাণ করা সম্ভব হয়েছে। 

তবে আসামিপক্ষের আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু পিপির বক্তব্য নাকচ করে বলেছেন, নুসরাত হত্যা মামলায় প্রত্যক্ষ সাক্ষী হাজির করতে ব্যর্থ হয়েছে পিবিআই। ঘটনাস্থলের আশপাশের প্রত্যক্ষদর্শীদের আদালতে হাজির করা হয়নি। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা 

বলেন, কেবল ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে সাজা দেওয়া যায় না। এ মামলার ১২ জন আসামি পিবিআইর নির্যাতনের মুখে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য হয়েছে। 

মামলার বাদী নুসরাতের ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান মামলার ব্যাপারে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, নুসরাতের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড হবে। মামলায় সরকারপক্ষের আইনজীবী, তাদের আইনজীবী ও সাক্ষীরা আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। 

নুসরাতের সল্ফ্ভ্রম বাঁচাতে নিজের পাঞ্জাবি খুলে দেন সহপাঠী :এদিকে গতকালও নুসরাত হত্যা মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। এ সময় মোহাম্মদ আকবর নামে নুসরাতের এক সহপাঠী জানান, নুসরাতের সল্ফ্ভ্রম রক্ষায় পরীক্ষার হলে বসেই নিজের পাঞ্জাবি খুলে তাকে দিয়েছিলেন তিনি। আকবরও ছিলেন আলিম পরীক্ষার্থী। 

গতকাল রোববার আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় এ তথ্য জানান আকবর। ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে এদিন চারজনের সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা শেষ হয়। আদালত আজ সোমবার আরও পাঁচ সাক্ষীকে হাজির রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।

সকালে নুসরাত হত্যার ১৬ আসামিকে ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে হাজির করা হয়। প্রথমে সাক্ষ্য দেন নুসরাতের সহপাঠী তাহমিনা আক্তার। তিনি আদালতে বলেন, হলে পরীক্ষার খাতা বিতরণের কিছুক্ষণ পর আসামি কামরুন নাহার মনি প্রবেশ করে। তার একটু পরেই আগুন আগুন, বাঁচাও বাঁচাও বলে নুসরাত সিঁড়ি দিয়ে নামতে থাকেন। 

আকবর আদালতকে বলেন, চিৎকার শুনে তিনি নুসরাতের কাছে গিয়ে দেখতে পান, তার শরীরের কাপড় পুড়ে গেছে। তখন যার কাছে যা ছিল তাই নুসরাতের গায়ে জড়িয়ে দেওয়া হয়। তিনি তার গায়ের পাঞ্জাবি খুলে নুসরাতকে দেন। এর পর সাক্ষ্য দেন মাদ্রাসার শিক্ষার্থী বিবি হাজেরা ও আবু বক্কর সিদ্দিক। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023880004882812