নুসরাত হত্যা মামলায় অপ্রয়োজনীয় সাক্ষীর ছড়াছড়ি

ফেনী প্রতিনিধি |

ফেনীর সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় অপ্রয়োজনীয় সাক্ষীর ছড়াছড়ি বলে জানিয়েছেন আসামি ও সরকারপক্ষের আইনজীবীরা। তারা বলছেন, অতিরিক্ত ও অপ্রয়োজনীয় সাক্ষ্য বিভ্রান্তি সৃষ্টি করছে। বিপুলসংখ্যক সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরায় অসঙ্গতি ও পরস্পরবিরোধী তথ্য পাওয়া গেলে আসামিরা 'বেনিফিট অব ডাউট' (সন্দেহ হলে নির্দোষ মনে করা) সুবিধা পেতে পারে।

চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলায় পিবিআই ১৬ জনকে আসামি করে মে মাসের শেষদিকে আদালতে চার্জশটি দাখিল করে। চার্জশিটে মোট ৯২ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা বলছেন, তাদের মধ্যে হত্যারহস্য উদ্ঘাটনে প্রয়োজনীয় সাক্ষী যেমন রয়েছেন, তেমনি অপ্রয়োজনীয় লোকও রাখা হয়েছে। এ পর্যন্ত নুসরাতের পরিবারের সদস্যসহ ৫১ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।

ফৌজদারি আইনে অভিজ্ঞ ফেনীর প্রবীণ আইনজীবীরা বলেছেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বিচার কাজ শেষ করতে হয়। মামলায় অতিরিক্ত সাক্ষী থাকলে বিচার কাজে বিঘ্ন ঘটে। নুসরাত হত্যা মামলায় এত সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ সময়সাপেক্ষ। এ কারণে প্রতিদিন সাক্ষ্য গ্রহণ করতে হচ্ছে। কোনো কোনোদিন ৫-৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হচ্ছে। এতে বাদী ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারছেন না।

আসামিপক্ষের অন্যতম আইনজীবী আহসান কবির বেঙ্গল ফেনী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের কাছে প্রতিদিনের পরিবর্তে বিরতি দিয়ে শুনানি করার অনুরোধ  করেছিলেন। তবে আইনে বেঁধে দেয়া সময়ের কথা বিবেচনা করে আদালত তার আবেদন নামঞ্জুর করেন।

আসামিপক্ষের প্রবীণ আইনজীবী গিয়াস উদ্দিন নান্নু বলেন, এই হত্যা প্রমাণে কেন ৯২ জন সাক্ষীর প্রয়োজন হলো, তা বোধগম্য হচ্ছে না। পিবিআই আসামিদের বিরুদ্ধে কোনো প্রত্যক্ষ সাক্ষী হাজির করতে ব্যর্থ হয়েছে। অতিরিক্ত সাক্ষী দিয়ে ঘটনা প্রমাণের চেষ্টা করা হয়ে থাকতে পারে। তবে অতিরিক্ত সাক্ষীতে বিভ্রান্তি বেড়েছে।

বাদীপক্ষের এক আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, অতিরিক্ত সাক্ষীর জবানবন্দিতে পরস্পরবিরোধী তথ্য চলে আসছে। আইনজীবী কামরুল হাসান বলেন, পিবিআই প্রত্যেক সাক্ষীর বক্তব্য চার্জশিটের সঙ্গে আদালতে পেশ করেছে। তাতেও বিভ্রান্তি দেখা যায়। আদালতে পেশ করা সাক্ষী মো. আকরাম, নূর উদ্দিন ও এনামুল হক রেজার জবানবন্দিতে নুসরাত হত্যা তারিখ ৬-৮-১৯ (৬ আগস্ট ২০১৯) বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এই তারিখ এখনও আসেনি। ঘটনা ঘটেছে ৬-৪-১৯ তারিখে।

আসামিপক্ষের আইনজীবী নূরুল ইসলাম, ফরিদ উদ্দিন নয়ন ও মাহফুজুল হক বলেন, ডাঙ্গী খাল, মাদরাসা পুকুর ও আসামি উম্মে সুলতানা পপির বাড়ি থেকে হত্যার সময় ব্যবহৃত বোরকা উদ্ধার ও অন্যান্য ঘটনায় অতিরিক্ত ৪০-৫৫ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। এর কোনো প্রয়োজন ছিল না। অন্যান্য ব্যাপারেও পিবিআই অতিরিক্ত সাক্ষী হাজির করেছে বলে তারা অভিমত দিয়েছেন।

কয়েকজন আইনজীবী জানান, হত্যাকাণ্ডের মূল সাক্ষী ২০-২৫ জন। সঙ্গে ডাক্তার, কারাগার ও পুলিশ কর্মকর্তা মিলিয়ে ৪০-৪৫ জন সাক্ষীর জবানবন্দিতে জড়িতদের বিষয় প্রমাণ করা সম্ভব ছিল। পিপি হাফেজ আহামদও মামলায় সাক্ষীর সংখ্যা বেশি বলে স্বীকার করেন।

তিনি জানান, মামলায় অনেক সময় সাক্ষীরা ইচ্ছাকৃতভাবে অনুপস্থিত থাকেন। তবে নুসরাত হত্যা মানুষের মনে মারাত্মকভাবে দাগ কেটেছে বলে কোনো সাক্ষী অনুপস্থিত ছিলেন না। এতে সাক্ষীর সংখ্যা বেশি মনে হচ্ছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ইন্সপেক্টর শাহ আলমও অতিরিক্ত সাক্ষীর কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি বলেন, নুসরাত হত্যা মামলায় আলামত উদ্ধারের ১০টি ঘটনায় ৩৫ জন, আলীম পরীক্ষার্থী ৬ আসামির শিক্ষকসহ ১২ জন মিলে ৪৭ জন সাক্ষী রয়েছেন। এতে সাক্ষীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে তিনি জানান, আদালত ইচ্ছা করলে সবার সাক্ষ্য না নিতেও পারেন। এটা আদালতের এখতিয়ার।

গত ৬ এপ্রিল সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার ছাত্রী নুসরাতের শরীরে আগুন দিয়ে হত্যা করে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার অনুসারীরা। এ ঘটনা দেশ-বিদেশে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করলে পিবিআই ৫০ দিনের মাথায় ২৯ মে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে। এতে সিরাজসহ ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? - dainik shiksha শ্রেষ্ঠ শিক্ষকের মানদণ্ড কী? অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ - dainik shiksha অবসর-কল্যাণে শিক্ষার্থীদের দেয়া টাকা জমার কড়া তাগিদ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে - dainik shiksha সুপ্রিম কোর্টের ফতোয়ার রায় পাঠ্যপুস্তকে নিতে হবে সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0027520656585693