নুসরাত হত্যা মামলায় মানবাধিকার কমিশনের সাত সুপারিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকাণ্ডে দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা, এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন, অপরাধীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার দ্রুত সাক্ষ্য গ্রহণসহ সাত দফা সুপারিশ করেছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। এ ছাড়া পুলিশ ও প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা যারা দায়িত্বে অবহেলা ও অপরাধ করেছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। মঙ্গলবার রাজধানীর কাওরান বাজারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয়ে এ প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক এই প্রতিবেদন তুলে ধরেন।

সুপারিশে আরো বলা হয় মাদ্রাসায় সিরাজ উদ দৌলাকে যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা বলা হয়েছে। মাদ্রাসার গভর্নিং বডি পুনর্গঠনেরও সুপারিশ করা হয়। এ ছাড়া নিহত নুসরাতের পরিবারের সব সদস্যের নিরাপত্তা নিশ্চিতেরও সুপারিশ করা হয় প্রতিবেদনে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, স্থানীয় প্রশাসন ও মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদ যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির হত্যাকা- এড়ানো যেত। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন তদন্ত প্রতিবেদনে এ কথা উল্লেখ করেছে । কমিশন বলেছে, এ ঘটনায় পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবহেলা ও অপরাধ করেছেন।

জেলা প্রশাসনেরও অবহেলা ছিল। কমিশন এসব কর্মকর্তাদের অপরাধ ও অবহেলার বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়ার পর থানা পুলিশ নুসরাতকে বিভিন্ন অশালীন প্রশ্ন করে। তারা বিষয়টিতে হালকাভাবে দেখানোর চেষ্টা করে। পুলিশের সঙ্গে সাক্ষাতের ভিডিও বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এতে সোনাগাজী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের পরিপন্থী। প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরাজ উদ দৌলা ১৯৯৫ সালে দৌলতপুর মাদ্রাসার সুপার ছিলেন। তখন ওই মাদ্রাসার ছাত্রদের সঙ্গে তার সমকামিতার অভিযোগ ছিল। তার বিরুদ্ধে আদালতে একাধিক প্রতারণার মামলা চলমান আছে। প্রতারণার মামলায় তিনি এর আগে জেলও খেটেছেন। তিনি ২০০১ সাল থেকে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তিনি নিয়মিত তার অফিসে মেয়েদের ডাকতেন। তার কক্ষে একই সময় একজনের বেশি ছাত্রীর প্রবেশ নিষেধ ছিল। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ছাত্রী ও অভিভাবকেরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, মাদ্রাসার গভর্নিং বডি ও থানায় অভিযোগ করে। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসন ও মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।

প্রতিবেদন প্রকাশের সময় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেন, যে ব্যক্তির বিরুদ্ধে এত অভিযোগ তিনি একটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে কীভাবে নিয়োগ পান তা অবিশ্বাস্য। কারা তাকে নিয়োগ দিলেন, এর তদন্ত হওয়া উচিত। কাজী রিয়াজুল হক বলেন, যদি অপরাধীদের যথাযথ বিচার হয় তবেই নুসরাতের আত্মা শান্তি পাবে। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, এ ঘটনায় ইতিমধ্যে পুলিশকে ক্লোজ করা হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে পুলিশের দোষী সদস্যদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

৬ই এপ্রিলে ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে কৌশলে নুসরাতকে ছাদে ডেকে নিয়ে গিয়ে গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় মাদ্রাসার অধ্যক্ষের অনুগত কয়েকজন শিক্ষার্থী। গত ২৭শে মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে মামলা করেন নুসরাতের মা। মামলা প্রত্যাহারে রাজি না হওয়ায় নুসরাতের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। ওইদিনই গুরুতর আহত অবস্থায় মাদ্রাসা ছাত্রীকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। শরীরে ৭৫ শতাংশের বেশি পোড়া নিয়ে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে গত বুধবার হার মানেন নুসরাত। এর মধ্যে মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আসামিদের  গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মানবাধিকার কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরাজ উদ দৌলা নিজ অফিস কক্ষে নুসরাত জাহান রাফির শ্লীলতাহানি করেন। তার নির্দেশেই তার ঘনিষ্ঠ সহচরেরা নুসরাতের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। এর ফলে তার মৃত্যু হয়।

মানবাধিকার কমিশনের পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) আল-মাহমুদ ফায়জুল কবীর এবং উপ-পরিচালক (অভিযোগ ও তদন্ত) এম রবিউল ইসলাম এ তদন্ত করেন। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন মানবাধিকার কমিশনের সদস্য বাঞ্ছিতা চাকমা, নুরুন নাহার ওসমানী, উপপরিচালক সুস্মিতা পাইক প্রমুখ। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে - dainik shiksha কিরগিজস্তানে বাংলাদেশি ১২শ’ শিক্ষার্থীর আতঙ্কে দিন কাটছে বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha বিলেত সফরে শিক্ষামন্ত্রী ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা - dainik shiksha ডলার সংকটে কঠিন হচ্ছে বিদেশে উচ্চশিক্ষা সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন - dainik shiksha সুপাড়ি চুরির সন্দেহে দুই ছাত্রকে নির্যা*তন ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল - dainik shiksha ডক্টরেট ডিগ্রি পেলো বিড়াল নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে - dainik shiksha নামী স্কুলগুলোর ফলে পিছিয়ে পড়ার নেপথ্যে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044119358062744