আসন্ন নির্বাচনে মাগুরা–১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাকিব আল হাসানকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর। দলীয় নেতা–কর্মীদেরও অনুরোধ করেছেন যার যার জায়গা থেকে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করতে। সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর ও জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা এ কথা জানিয়েছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাগুরা–১ আসনে (সদরের একাংশ ও শ্রীপুর) আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বেশির ভাগ নেতা-কর্মী বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের অনুসারী। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের নির্বাচনে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ছিলেন।
তাঁর বাবা মো. আছাদুজ্জামান মাগুরা-২ আসন থেকে চারবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। পুরো মাগুরা জেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে তাঁর প্রভাব রয়েছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী, এবারও মনোনয়ন–দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন তিনিই। তবে শেষ মুহূর্তে সাকিব এসে সব হিসাব–নিকাশ বদলে দিয়েছেন। এতে বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্যের অনুসারীরা।
এমন পরিস্থিতিতে জেলা আওয়ামী লীগ থেকে শুরু করে অনেকেই তাকিয়ে আছেন বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখরের দিকে। এমনকি গতকাল বিকেলে মনোনয়ন ঘোষণার পর মাগুরা শহরে সাকিবের বাড়িতে অনেক সমর্থক ভিড় করলেও আওয়ামী লীগের উল্লেখযোগ্য কোনো নেতাকে দেখা যায়নি।
আজ সোমবার সকালে সাকিবের বাবা খন্দকার মশরুর রেজাকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাধারণ, সম্পাদকসহ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা গেছে। জানতে চাইলে ওই বৈঠকে উপস্থিত জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র খুরশীদ হায়দার বলেন, ‘আমাদের বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ করে সাকিবের জন্য কাজ করতে। আমরা সেই কাজই শুরু করেছি।’
একই ধরনের বক্তব্য শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুনুর রশীদ মুহিতের। তিনি বলেন, ‘মাননীয় সংসদ সদস্য (সাইফুজ্জামান শিখর) আমাদের বলেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য। আমরা হয়তো আগামীকালই মিটিং ডেকে সবার সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করব।’
সাকিবের মনোনয়ন কেনার প্রতিক্রিয়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগের অনেক নেতাই এটাকে অনাকাঙ্ক্ষিত বলেছিলেন। তাঁদের অনেকেই মনে করেন, গত ১৫ বছরে মাগুরায় আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান তৈরি করেছেন সাইফুজ্জামান শিখর। ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ থেকে জেলা আওয়ামী লীগ—সব জায়গাতেই তাঁর অনুসারীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এমন পরিস্থিতে সাইফুজ্জামান শিখরকে মনোনয়নবঞ্চিত করায় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যেতে পারেন।
বিষয়টি নিয়ে বর্তমান সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর সঙ্গে আজ দুপুরে মুঠোফোনে কথা বলেছেন গণমাধ্যমকর্মীর সাথে। সাইফুজ্জামান শিখর বলেন, ‘আমার অবস্থান একদম পরিষ্কার। বিভিন্ন জনসভায় আমার বক্তব্যে বারবার বলেছি, নেত্রী আমাকে নৌকা আমানত হিসেবে দিয়েছেন।
এই আমানত ফেরত দেওয়ার দায়িত্ব আমার। যদি নেত্রী আমাকে মনোনয়ন না–ও দেন, আমি তাঁর হাতে নৌকাটা ফেরত দিয়ে তারপর আমি রিলিজ নেব। ফলে সাকিব এখানে কোনো বিষয় না, (নৌকা) যাকেই দিত, আমি আমার সর্বোচ্চ যতটুকু করার, আমি তাঁর জন্য করতাম। সাকিবের জন্যও আমার যতখানি যা করার আমি করব। এটা নিয়ে সাকিবের টেনশন (চিন্তা) করার কিছু নেই।’
সাইফুজ্জামান শিখর জানান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ জ্যেষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন। তাঁদের তিনি অনুরোধ করেছেন মিটিং ডেকে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করার জন্য। তিনি বলেন, ‘অনেকের মধ্যে কষ্ট থাকতে পারে; সেগুলো এক জায়গায় বসে সব সমাধান করে কাজে নামার কথা বলেছি।’
এক প্রশ্নের জবাবে সাইফুজ্জামান শিখর বলেন, ‘সাকিবের সঙ্গে কথা হয়েছে, তাঁর বাবার সঙ্গেও কথা হয়েছে। তাঁদের বলেছি, এটা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন, আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করেন। আমরা সাকিবকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব।’