ক্যাসিনো কারবার, টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে থাকা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারই এখন বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছে দলটি। আসছে নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া যুবলীগের কেন্দ্রীয় কংগ্রেসের মধ্য দিয়ে ওই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতাদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে আনা হবে।
সে ক্ষেত্রে বর্তমান কমিটির মতো ৬০-৭০ বছর বয়সী নেতাদের বাদ দিয়ে অনূর্ধ্ব ৪০-৪৫ বছর বয়সীদের নেতৃত্বে আনার বিষয়টি ভাবছেন আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন তৈমুর ফারুক তুষার।
তবে যুবলীগের বর্তমান কমিটির বেশির ভাগ ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় অনেক নেতাই বয়সসীমা ৪৫ বছরের মধ্যে বেঁধে দেওয়ার বিপক্ষে। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর একাধিক সদস্য ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় এক ডজন নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটি জানা গেছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ বলেন, ‘অনেকেই যুবলীগের নেতৃত্বে আসার আগ্রহ জানাচ্ছেন। তবে দলীয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এখনো মনোনয়নপ্রত্যাশীদের নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। তবে এবারে নেতাদের যোগ্যতা দেখে কমিটিতে স্থান দেওয়া হবে। আর ৪০-৪৫ বছর বয়সীদের নিয়ে কমিটি করা হবে।’
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর আরেকজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যুবলীগে বিশুদ্ধ রক্তপ্রবাহে তরুণদের নেতৃত্বে আনার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তবে এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। বয়সসীমা বেঁধে দেওয়ার ভালো-মন্দ দুই দিকই রয়েছে।’
যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘যুবলীগের নেতাদের বয়সসীমা বেঁধে দেওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি সিদ্ধান্ত নেবেন। তিনি এখনো আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। তবে যারা যুবলীগের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে পারবে—এমন নেতৃত্বই আসার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এমন নেতৃত্ব আসতেই হবে।’
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, যুবলীগের এবারের কমিটি গঠনে সংগঠনের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার এবং টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে নেতাকর্মীদের দূরে রাখার লক্ষ্যকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফলে নতুন কমিটিতে শিক্ষিত, পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির তরুণ নেতাদের মূল্যায়ন করা হবে। সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের মধ্যে যাঁরা আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে বিশেষ করে এক-এগারোর (২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ক্ষমতাগ্রহণ) রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে রাজপথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তাঁদের অনেকেরই স্থান হবে যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে।
তবে পুরনোদের ঢালাওভাবে বাদ দিয়ে তরুণদের মূল্যায়ন করা হলে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় অনেক নেতা। তাঁরা বলেন, ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারে যুবলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন—এমন সব নেতাকে বাদ দিয়ে নতুনদের দায়িত্ব দেওয়া হলে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এর আগে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অনভিজ্ঞ দুই নেতাকে শীর্ষ পদে বসানো হলেও পরবর্তী সময়ে নানা অভিযোগে তাঁদের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। যুবলীগের ক্ষেত্রেও যেন এমনটি না হয় সেই দিকটি ভাবতে হবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি বলেন, ‘পুরনো ও নতুনদের মিশ্রণে কমিটি হলে আগামী দিনে যুবলীগ আরো শক্তিশালী হবে। পুরনোদের অভিজ্ঞতা আর নতুনদের উদ্যম মিলে সংগঠন পরিচালিত হলে একটি উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ গঠনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্ন বাস্তবায়নে যুবলীগ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে। শুধু নতুনদের দিয়ে কমিটি গঠন বা বয়সসীমা ৪৫ বেঁধে দিলে ত্যাগী অনেক নেতাই বাদ পড়বেন। এতে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা বজায় রাখা কঠিন হবে।’
যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে শেখ ফজলুল হক মনি। ফলে দীর্ঘদিন ধরেই যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনে শেখ পরিবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে এসেছে। যুবলীগের বর্তমান চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী হলেন শেখ ফজলুল হক মনির ভগ্নিপতি। কমিটি গঠনে কয়েক দশক ধরেই শেখ মনির ভাই এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট অনেকটা ভিন্ন। যুবলীগের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জন্য শেখ সেলিম ও ওমর ফারুক চৌধুরীর প্রতি আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আস্থা আগের মতো নেই। ফলে কমিটি গঠনে শেখ হাসিনা গোয়েন্দা তথ্য ও নিজস্ব সাংগঠনিক চ্যানেলে তথ্য সংগ্রহ করে সেগুলো যাচাই-বাছাই করে নেতৃত্ব নির্বাচন করবেন বলে দলীয় সূত্রগুলো বলছে।
আগামী ২৩ নভেম্বর রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে যুবলীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। এর আগে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কংগ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।