দৈনিক শিক্ষাডটকম, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জে ৯ মাস স্কুল বন্ধ রেখে শিক্ষা কর্মসূচির বরাদ্দ আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্প এলাকা সরজমিন পরিদর্শন, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর বরাদ্দপত্র পর্যালোচনা ও গোপনীয় অনুসন্ধান করে জানা গেছে, জেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো গোপালগঞ্জের সহকারী পরিচালক শুভ বনিক ও অফিস সহকারী এস কে আলীমের সহযোগিতায় প্রকল্প বাস্তবায়নকারী এনজিও স্বদেশ উন্নয়ন সংস্থা কাশিয়ানী, কোটালীপাড়া ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ২০৫টি শিখন কেন্দ্রে (স্কুল) দীর্ঘ ৯ মাস বন্ধ রাখে। পরে শিক্ষক ও সুপারভাইজারদের স্বাক্ষর নকল করে ভুয়া মাস্টার রোল ও বিল ভাউচার তৈরি করে জুলাই ২০২৩ হতে নভেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত মোট পাঁচ মাসের শিক্ষক সুপারভাইজারদের বেতন ও শিখন কেন্দ্র ভাড়া বাবদ ১ কোটি ৩৭ হাজার ৫ শত টাকা এবং শিক্ষা উপকরণ ও শিক্ষদের মাসিক সভাসহ অন্যান্য ব্যয় বাবদ ৪৫ লাখ ২৩ হাজার ৭ শত ৭৫ টাকা উত্তোলন করে। পরে সহকারী পরিচালক, লিড এনজিও এবং সহযোগী এনজিও পরিচালকগণ ভাগাভাগি করে সমুদয় অর্থ আত্মসাৎ করে।
গোপন একটি সূত্র জানিয়েছে, তৎকালীন সময়ে লিড এনজিও ও সহকারী পরিচালকের লুটপাটের আহ্বানে সাড়া না দিয়ে টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় স্কুল পরিচালনা করা সহযোগী এনজিও সংস্থা ‘পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচি’ সঠিক নিয়মে স্কুল পরিচালনা করে। এ কারণে এনজিওটির নির্বাহী পরিচালক সাবিনা ইয়াসমিনকে বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হয়েছিল। কাশিয়ানী, কোটালীপাড়া ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় শিক্ষাপ্রকল্পের কয়েকজন শিক্ষক ও সুপারভাইজার জানান, দীর্ঘ ৯ মাস তারা এনজিও’র নির্দেশে স্কুল বন্ধ রেখেছেন। এই নয় মাস তারা কোনো বেতন পাননি। শিক্ষার্থীদের কোনো উপকরণ দেয়া হয়নি।
তারা অন্যান্য জেলা ও পার্শ্ববর্তী টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় স্কুল চলার কথা শুনেছেন। কী কারণে তাদের স্কুল বন্ধ রাখতে বলেছে সঠিকভাবে জানেন না তারা।
প্রকল্পের গাইডলাইন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া, কাশিয়ানী ও গোপালগঞ্জ সদর উপজেলায় প্রথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরো কর্তৃক পরিচালিত আউট অব স্কুল চিলড্রেন এডুকেশন প্রকল্প ২০২০ খ্রিষ্টাব্দে অনুমোদন পায়। এরপর আনুষঙ্গিক কর্মযজ্ঞ শেষে ২০২২ খ্রিষ্টাব্দের জানুয়ারি মাস থেকে ২৬৫টি শিখন কেন্দ্রের মাধ্যমে চার উপজেলার ঝরেপড়া শিশুদের শিক্ষা দেয়া শুরু হয়। জেলার চার উপজেলা ব্যাপী এই শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় স্বদেশ উন্নয়ন সংস্থা গোপালগঞ্জ নামের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান। পাশাপাশি এই এনজিওটির সহযোগী সংস্থা হয়ে মাঠপর্যায়ে শিক্ষা কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহযোগিতা করছিল গোপালগঞ্জ সদরের বঙ্গীয় গণউন্নয়ন সমিতি, পল্লী মহিলা উন্নয়ন সংস্থা, কাশিয়ানীর জোৎস্না সংস্থা, টুঙ্গিপাড়ায় পল্লী উন্নয়ন কর্মসূচি, কোটালীপাড়া উপজেলায় প্রভাতী সংস্থা ও মানুষ নামের এনজিও প্রতিষ্ঠান। প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুতে লিড এনজিও স্বদেশ উন্নয়ন সংস্থাসহ সহযোগী অন্যান্য এনজিও ছোট খাটো অনিয়ম করলেও ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের জুন মাস পর্যন্ত স্কুল পরিচালনা করছিল।
এরপর ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ২৬শে জুন উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর মহাপরিচালক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে স্কুল কার্যক্রম চলমান রাখার নির্দেশ দিলেও এনজিওগুলো ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের জুলাই হতে মার্চ ২০২৪ পর্যন্ত স্কুল বন্ধ রেখে কাগজে কলমে চলমান দেখায়। পরে ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দের ৬ ডিসেম্বর ৩৮.০০.০০০০.৪০০.২০.৪১১.২৩.৯২০ স্মারকে শিক্ষক সুপারভাইজাদের বেতন ও শিখন কেন্দ্রের ভাড়া বাবদ বরাদ্দকৃত ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫ শত টাকা এবং ২৮শ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে ৩৮.০০.০০০০.৪০০.২০.৪১২.২৩.৯৬৪ স্মারকে শিক্ষা উপকরণ, শিক্ষকদের মাসিক সভা ও অন্যান্য ব্যয়ের জন্য বরাদ্দকৃত টাকা লিড এনজিও স্বদেশ উন্নয়ন সংস্থার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে উত্তোলন করে। স্বদেশ উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মানুষ রায় বলেন, আমাদের কিছু কিছু স্কুল চলেছে। টাকা উঠিয়ে গচ্ছিত রেখেছি, ঈদের পরে শিক্ষদের বেতন দেয়া হবে। এ বিষয়ে সহকারী পরিচালক শুভ বনিক বলেন, এত বড় এরিয়া আমি একা কী করে তদারকি করবো। এনজিওদের সকল কাগজপত্র দেখেই আমি বিলের অনুমোদন দিয়েছি।গোপালগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) শেখ শামছুল আরেফীন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নিজ জেলায় এ ধরনের অনিয়ম প্রমাণিত হলে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে দুর্নীতিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।