পছন্দের প্রার্থীকে নিয়োগ দিতে না পেরে শিক্ষকদের বেতন বন্ধ

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি |

টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জুলফিকার হায়দারের বিরুদ্ধে কুড়ালিয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন বন্ধ করার অভিযোগ উঠেছে। পছন্দের প্রার্থীকে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে না পেরে তিনি এমনটি করেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

জানা গেছে, উপজেলার বানাইল ইউনিয়নের কুড়ালিয়াপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হবে। এজন্য গত বছরের ১ ডিসেম্বর পত্রিকায় সার্কুলার দেওয়া হয়। ওই পদের জন্য আট প্রার্থী আবেদন করেন। গত ৮ মার্চ নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। নিয়োগ পরীক্ষার দায়িত্বে ছিল পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি।

ওই পরীক্ষায় পাঁচ শিক্ষক অংশ নেন। নিয়োগ কমিটিতে থাকা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জুলফিকার হায়দার এবং শিক্ষা অধিদপ্তরের ডিজির প্রতিনিধি সন্তোষ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. তোফাজ্জল হোসেন লিখিত পরীক্ষায় বরাটি নরদানা বাংলাদেশ উচ্চ বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষক আব্দুল ওহাব মিয়াকে ১৫ নম্বর এবং সনদের জন্য সাত নম্বর দেন। এছাড়া বাঙ্গুরী দাখিল মাদরাসার শিক্ষক মো. ফারুক হোসেনের খাতায় ঘষামাজা করে লিখিত পরীক্ষায় ১৭ এবং সনদে সাত নম্বর দেন। এতে ফারুক হোসেন প্রথম স্থান অধিকার করেন। শিক্ষা কর্মকর্তা তাকে নিয়োগ দিতে এ অনৈতিক কাজ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে, খাতায় ঘষামাজার বিষয়টি নিয়োগ কমিটির অন্য তিন সদস্যের নজরে আসলে তাদের কাছে বিষয়টি অসঙ্গতি মনে হলে তারা ওই খাতায় সই করা থেকে বিরত থাকেন। এ নিয়ে ডিজি প্রতিনিধি এবং শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে মধ্যে তাদের মনমালিন্য হয়। এতে প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষার নম্বর দেওয়া থেকেও বিরত থাকেন ডিজি প্রতিনিধি এবং শিক্ষা কর্মকর্তা।

এই টানাপোড়েনের কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়া বিলম্ব হওয়ায় বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি নিয়োগ বাতিল করে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে উপজেলা মাধ্যমিক কর্মকর্তা ওই বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক ও কর্মচারীদের মে মাসের বেতন বন্ধ রাখার জন্য ব্যাংক কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে জানতে অগ্রণী ব্যাংক মির্জাপুর শাখা ব্যবস্থাপক মো. শরিফুল ইসলামের মোবাইলফোনে কল করা হলেও তা বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে পারভেজ আহমেদ নামে ব্যাংকের সিনিয়র এক কর্মকর্তা বলেন, হাজিরা শিটে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সই না থাকায় বেতন পোস্টিং দেওয়া হয়নি। তাছাড়া শিক্ষা কর্মকর্তা ফোন করে শাখা ব্যবস্থাপককে বেতন পোস্টিং না দিতে অনুরোধ করেছেন বলেও জানান তিনি।

বিদ্যালয়ের নিরাপত্তা প্রহরী ফারুক হোসেন বলেন, বেতন না পাওয়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে আছি।

অফিস সহায়ক সাজ্জাদ খান বলেন, আমার বেতন দিয়ে ছোট ভাইয়ের লেখাপড়ার খরচ বহন করতে হয়। গত মাসের বেতন না পাওয়ায় চলতি মাসের খরচ দিতে পারিনি।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ১২ হাজার ৫০০ টাকা বেতনে আমাদের চলা খুব কষ্টের। তারপরও আবার বেতন বন্ধ। এ বিষয়টি দ্রুত সমাধানে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেওয়ান এমসাদ হোসেন নয়ন বলেন, আমরা স্বচ্ছভাবে লিখিত পরীক্ষা নিয়েছি। কিন্তু ফারুক হোসেনের পরীক্ষার খাতায় ঘষামাজা করে ১৭ নম্বর দেওয়া হয়েছে। তিনি খাতায় যা লিখেছেন তা পুনঃমূল্যায়ন করা হলে ১৭ নম্বর আসে না। শিক্ষা কর্মকর্তার পছন্দের হওয়ায় তিনি তাকে নিয়োগ পাইয়ে দিতে এ কাজটি করেছেন। এজন্য নিয়োগ কমিটির তিনজন সই করিনি। নিয়োগ পক্রিয়া বিলম্ব হওয়ায় বিদ্যালয়টি পরিচালনা কমিটি নিয়োগ বাতিল করেছেন বলে জানান।

তিনি আরও বলেন, মে মাসের বেতন পেতে হাজিরা শিটে সই নিতে গেলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সই করেননি। তিনি উল্টো বেতন না দিতে অগ্রণী ব্যাংক মির্জাপুর শাখা ব্যবস্থাপককে নিষেধ করেছেন। বেতন পেতে হাজিরা শিটে সই ছাড়াই কাগজপত্র ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়েছে। কয়েকদিন পর ঈদ। ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেও লাভ হয়নি।

বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. শাহজামাল খান বলেন, সঠিকভাবে খাতা মূল্যায়ন করা হয়নি। পক্ষপাতিত্ব ও ঘষামাজা করে নম্বর দেওয়া হয়েছে। এজন্য সই করিনি। নিয়োগ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্র করে বিদ্যালয়ের সব শিক্ষক ও কর্মচারীর বেতন বন্ধ রাখার বিষয়টি অমানবিক।

জানতে চাইলে মির্জাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জুলফিকার হায়দার বলেন, নিয়োগ পরীক্ষায় সমন্বয় না করায় ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ডিজি প্রতিনিধি মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন, লিখিত, সনদ ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বরের বিষয়টি আমার মনে নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিলা বিনতে মতিন বলেন, শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন বন্ধের বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কলেজে সাংস্কৃতিক-ক্রীড়া কোটায় ভর্তির সুযোগ - dainik shiksha কলেজে সাংস্কৃতিক-ক্রীড়া কোটায় ভর্তির সুযোগ শিক্ষা সংস্কারে বাংলাদেশ-চীন কাজ করবে - dainik shiksha শিক্ষা সংস্কারে বাংলাদেশ-চীন কাজ করবে বয়স ৯ না হলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন নয় - dainik shiksha বয়স ৯ না হলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন নয় প্রাথমিকের ডিজিকে অপসারণে পঞ্চম দিনের আন্দোলন - dainik shiksha প্রাথমিকের ডিজিকে অপসারণে পঞ্চম দিনের আন্দোলন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য আহ্বান ‘মিনিস্ট্রি অডিটর’ হতে আগ্রহী হাজারো শিক্ষা ক্যাডার ! - dainik shiksha ‘মিনিস্ট্রি অডিটর’ হতে আগ্রহী হাজারো শিক্ষা ক্যাডার ! শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়া কর্মচারীদের তথ্য আহ্বান - dainik shiksha শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরি পাওয়া কর্মচারীদের তথ্য আহ্বান এমপিওবিহীন ৩য় শিক্ষকদের বাদ পড়ার কারণ জানতে চায় অধিদপ্তর - dainik shiksha এমপিওবিহীন ৩য় শিক্ষকদের বাদ পড়ার কারণ জানতে চায় অধিদপ্তর সৃজনশীল পদ্ধতির পরীক্ষা ফিরছে - dainik shiksha সৃজনশীল পদ্ধতির পরীক্ষা ফিরছে অষ্টম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন শুরু ১০ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন শুরু ১০ সেপ্টেম্বর দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0063180923461914