পঞ্চমের শিক্ষার্থীরা যেখানে বাংলা রিডিংই পড়তে পারেন না

রুম্মান তূর্য |

চাঁদপুর সদরের মহামায়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ৪৪ জন শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছেন। তাদের মধ্যে ২০ জন শিক্ষার্থী বাংলা রিডিং পড়তে পারেন না। চতুর্থ শ্রেণির ৪৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ইংরেজি রিডিং পড়তে পারেন না ৩১ জন। তৃতীয় শ্রেণির ৬৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৩ জন গুন অংক বুঝতে পারেন না। 

সম্প্রতি ওই প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে গিয়ে এমনই চিত্র দেখেছেন চাঁদপুরের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক, সহকারী শিক্ষক ও দপ্তরিকে শোকজও করেছেন তিনি। 

ধারণা করা হচ্ছে, করোনায় ১৮ মাস স্কুল বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীরা শিখন ঘাটতিতে পড়েছেন।  

ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) অর্থায়নে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) পরিচালিত এক গবেষণাতেও শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতির তথ্য উঠে এসেছে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর এক হোটেলে ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বাংলা পড়তে পারেন না বলে ওই প্রতিবেদনে উপস্থাপিত হয়েছে উল্লেখ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, এ তথ্য তিনি মানেন না। এ গবেষণা সঠিক হয়নি।  দুর্গম চরাঞ্চলের স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও বাংলা রিডিং পড়তে পারেন। 

তবে দুর্গম চরাঞ্চল নয়, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির নিজ জেলা চাঁদপুর সদরের মহামায়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বাংলা রিডিং পড়তে না পারা অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।  

গত ৯ মে প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শনে যান জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।  তিনি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি ও নানা অনিয়ম দেখে প্রতিষ্ঠান প্রধান, শিক্ষক ও দপ্তরিকে শোকজ করেন।  

শোকজে বলা হয়,, প্রতিষ্ঠানটির ৫ম শ্রেণির ৪৪ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৪ জন বাংলা রিডিং পড়তে পারেন, বাকিরা পারেন না। চতুর্থ শ্রেণির ৪৯ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১৮ জন ইংরেজি রিডিং পড়তে পারেন, অন্যরা পারেন না। তৃতীয় শ্রেণির ৬৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ২০ জন গুন অংক বুঝতে পেরেছেন, বাকি ৪৩ জন বুঝতে পারেনি। প্রতিষ্ঠানে একজন শিক্ষককে চেয়ারে বসে ঘুমাতে দেখা গেছে। স্কুলে শিক্ষকরা দায়সারা পাঠদান করেন। প্রধান শিক্ষকের যোগ্যতার ঘাটতি রয়েছে। 

স্কুলটির বিরুদ্ধে কেনো বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে না তা জানতে চেয়ে কৈফিয়তও তলব করেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।  

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দৈনিক আমাদের বার্তাকে ফাতেমা মেহের ইয়াসমিন বলেন, করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি হয়েছে। ওই স্কুলের অনেক বাচ্চা বাংলা সাবলীলভাবে রিডিং পড়তে পারছেন না। তাদের অনেকে গুন অংক বুঝতে পারছেন না। পিছিয়ে পড়া শিশুদের বিশেষ ক্লাসের মাধ্যমে শিখন ঘাটতি দূর করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। 

চাঁদপুর সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সাঈদা আলম গতকাল বুধবার বিকেলে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, ওই শিক্ষকরা শোকজের জবাব দিয়েছেন। 

সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রাবেয়া আক্তার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, বিষয়টি আমরা জেনেছি। গত মঙ্গলবার শোকজের জবাব দেয়া হয়েছে।

মহামায়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহীনা আক্তার গতকাল বুধবার রাতে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছি, যারা দুর্বল তাদের সামনে বসানো হচ্ছে। যারা ভালো করছে তাদের পেছনের সারিতে বসানো হচ্ছে। এছাড়া শিক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ক্লাস নেয়া হচ্ছে। 

 

 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারো ভর্তি পরীক্ষা চালু হবে সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ - dainik shiksha সরকারি-বেসরকারি স্কুলে ভর্তি: দুই দিনে আবেদন প্রায় দুই লাখ শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগেও নামকাওয়াস্তে মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা হয়: গণশিক্ষা উপদেষ্টা পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তক থেকে শেখ মুজিব ও শেখ হাসিনার বিষয়বস্তু অপসারণের দাবি এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর - dainik shiksha এসএসসির ফরম পূরণ শুরু ১ ডিসেম্বর কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের গল্প কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের - dainik shiksha পাঠ্যপুস্তকে একক অবদান তুলে ধরা থেকে সরে আসার আহ্বান হাসনাতের ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024290084838867