ছিনতাইকারীর হাতে খুনপড়ার পাশাপাশি বাবাকে সহায়তায় রিকশা চালাতেন সিজার

দৈনিকশিক্ষা প্রতিবেদক |

চাঁপাইনবাবগঞ্জে নানাবাড়িতে থেকে পড়ালেখা করেছেন সিজার হোসেন (২১)। বাবা ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালিয়ে দুই ছেলেকে লেখাপড়ার খরচ জোগাচ্ছিলেন। উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) পাস করে অনার্সে ভর্তির অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। বাবাকে একটু সহায়তা করতে মাঝেমধ্যে ঢাকা এসে রিকশা চালাতেন সিজার। গত ২৯ এপ্রিল গভীর রাতে ছিনতাইকারীদের হাতে খুন হন। তাঁর লাশ ফেলে রাখা হয় শ্যামপুর শিল্প এলাকার কদমতলী স্টিল মিলস এলাকায়।  

ঘটনার পর সিজারের বাবা রবিউল ইসলাম কদমতলী থানায় অজ্ঞাতপরিচয়ের আসামিদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ছিনতাই ও হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীসহ ছয়জনকে গতকাল রোববার দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) ওয়ারি বিভাগ।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন বায়েজিদ, রাসেল, হৃদয় হাওলাদার, হুমায়ন, সেলিম ও মো. হৃদয়। গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি জানতে পারে, অটোরিকশা কেড়ে নেওয়ায় বাধা দিলে সিজারকে হত্যা করেন তাঁরা। 

সিজারের বাবা রবিউল ইসলাম আজ সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমার দুটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছিল। আমাকে একটু সহায়তা করার জন্য তারই একটি রিকশা নিয়ে বের হয়েছিল সিজার।’ 

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফজলুল হক আদিনা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন সিজার। অনার্সে ভর্তির অপেক্ষায় ছিলেন। লেখাপড়ার এই বিরতিতে বাবাকে সহায়তা করতে ঢাকায় এসেছিলেন। 

বাবা বলেন, ‘অনেক কষ্টে নিজে রিকশা চালিয়ে দুই ছেলেকে পড়ালেখা করাচ্ছিলাম। এইচএসসি পাস করে বসে থাকার ফাঁকে কিছুটা বাড়তি আয়ের জন্য রিকশা চালাত সিজার। তার আয়ের সব টাকায় আমাকে দিয়ে দিত।’ 

হত্যাকারীদের গ্রেফতারের পর আজ রাজধানীর মিন্টু রোডের ডিবি কার্যালয়ে বিস্তারিত জানান ডিএমপির ডিবির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। 

ডিবির প্রধান বলেন, ‘রাতে যারা রিকশা চালায় তারা নিশ্চয়ই গরিব পরিবারের সন্তান এবং তাদের ছেলেমেয়ে, বউ, বাচ্চা গ্রামে থাকে—এমন ধারণা রয়েছে ছিনতাইকারীদের। এসব চালকের ঢাকা শহরে খুব একটা আত্মীয়স্বজন থাকে না। তাদের একমাত্র সম্বল ওই সঙ্গের রিকশাটি। কিছু টাকাও থাকে তাদের কাছে। এই ছিনতাইকারীরা মনে করে যে যেহেতু আত্মীয়স্বজন ঢাকায় থাকে না, সেহেতু কোনো পুলিশ বা থানা জানবে না। তাদের মেরে ফেলে রাখলেও তাদের পক্ষে মামলা করার কেউ থাকবে না।’ 

গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ডিবির প্রধান বলেন, ‘ঘটনার রাতে তাদের পরিকল্পনা ছিল, যে রিকশা পাবে সেটিই ছিনতাই করবে। এর অংশ হিসেবে তারা নাজিরাবাজার থেকে রিকশা ভাড়া করে কদমতলী আসে। সেখানে বায়েজিদ, রাসেল ও সনির আগে থেকেই বসে থাকে। সেখানে এলে তারা রিকশাটি ছিনিয়ে নেওয়ার সময় বাধা দিলে সিজারকে পেছন থেকে মাথায় আঘাত করে হত্যা করে। পরে রিকশাটি নিয়ে তারা ১৭ হাজার টাকা বিক্রি করে।’ 

আমুলিয়া মডেল টাউন, মুগদা ও কদমতলীতে এর আগেও রাতে তিনটি এমন ঘটনা ঘটেছে। এ তিনটি ঘটনায় একই চক্র রয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে ডিবির প্রধান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমরা দুটি চক্রকে শনাক্ত করেছি। অন্যদেরও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের - dainik shiksha ‘২৬ লাখ টাকা’র প্রধান শিক্ষক নাজমার শাস্তি দাবি আনন্দময়ী স্কুল ছাত্রীদের জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা - dainik shiksha জানুয়ারিতেই শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া হবে: গণশিক্ষা উপদেষ্টা ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন: ব্যাংক হিসাব নিয়ে এমপিও শিক্ষকদের অসন্তোষ পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক - dainik shiksha পবিপ্রবিতে গাঁজাসহ ৫ মাদকসেবী আটক ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - dainik shiksha ভর্তিতে লটারি বাতিলের দাবিতে সড়ক আটকে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন - dainik shiksha প্রাথমিকের ১০ম গ্রেডের দাবি সর্বজনীন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0024988651275635