পদোন্নতি চান না অনেক শিক্ষক

রুম্মান তূর্য |

সরকারি চাকরি জীবনের শেষ বেলায় প্রধান শিক্ষক পদের প্রশাসনিক দায়িত্বকে ‘ভেজাল’ বলে মনে করছেন সিনিয়র শিক্ষকদের অনেকেই। আর প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতিতে তাদের বেতনও বাড়বে না। প্রতিষ্ঠান প্রধানের চলতি দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষকদের বাড়তি দেড় হাজার টাকা ভাতাও মিলবে না পদোন্নতিতে। তাই প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি পেতে চাইছেন না তারা। 

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, প্রতিটি উপজেলা থেকে ১০ থেকে ২০ জন সহকারী শিক্ষক পদোন্নতি পেতে অনিচ্ছুক। তারা উপজেলা শিক্ষা অফিসে আবেদনও করেছেন। সে হিসেবে দেশের কয়েক হাজার সহকারী শিক্ষক পদোন্নতি পেতে অনীহা দেখাচ্ছেন। তবে সাড়ে চার লাখ প্রাথমিক শিক্ষকের অনেকেই পদোন্নতি চাইছেন। তারা বলছেন, চাকরি জীবনে একদিন হলেও প্রধান শিক্ষক হতে চাই।

গতকাল সোমবার বিকেলে দৈনিক আমাদের বার্তার সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয় পদোন্নতিতে অনাগ্রহী এক শিক্ষিকার সঙ্গে। নাম পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে দৈনিক আমাদের বার্তাকে তিনি বলেন, ২৫ বছর শিক্ষকতা করেছি। এখন আর ভেজাল ভালো লাগে না। 

পদোন্নতি না চাওয়া অপর এক শিক্ষক দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, টাইম স্কেল ও ইনক্রিমেন্ট মিলে এখন যে বেতন পাই প্রমোশনের পরও সেটাই পাবো। আর চলতি দায়িত্বে থাকারা যে দেড় হাজার টাকা ভাতা পান তা পদোন্নতির পর আর পাবেন না। সে হিসেবে ভাতা কমবে দেড় হাজার টাকা। 

পদোন্নতি না চাওয়া অনেকের মতে, প্রধান শিক্ষক পদে গেলে ম্যানেজিং কমিটি ও স্থানীয়দের তোপের মুখে পড়তে হয়। আর্থিক সংশ্লিষ্টতা থাকায় অনেকে অভিযোগ ওঠার সম্ভাবনা থাকে। দীর্ঘদিন শিক্ষকতা শেষে সম্মানহানির ঝুঁকি কে নিতে চায়! 

মেহেরপুর সদর উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা মোহা. ফারুক উদ্দীন গতকাল সোমবার বিকেলে দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমার উপজেলা শিক্ষকদের কেউ কেউ প্রশাসনিক পদের দায়িত্ব এড়াতে চাচ্ছেন। দীর্ঘদিন পর পদোন্নতির জ্যেষ্ঠতার তালিকা তৈরির কাজ শুরু হলে তারা পদোন্নতি চান না বলে আবেদন দিয়েছেন। আসলে তারা দীর্ঘদিন চাকরির পর উচ্চতর গ্রেড বা টাইম স্কেলসহ যে আর্থিক সুবিধা পাচ্ছেন প্রধান শিক্ষক হলে তা বাড়বে না। আর নারী শিক্ষকদের অনেকে প্রধান শিক্ষকের প্রশাসনিক দায়িত্ব চাচ্ছেন না।

জানা গেছে, অনেকের পদোন্নতি না চাওয়ার বিষয়টি নজরে এসেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। পদোন্নতিতে অনাগ্রহী শিক্ষকদের আর পদোন্নতির আবেদন করবেন না বলে অঙ্গীকারসহ নিজ হাতে লেখা লিখিত আবেদন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারে প্রত্যয়ন ও মতামতসহ পাঠাতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে বলেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। গত ২৫ মে এ সংক্রান্ত চিঠি প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে পাঠাতে বলা হয়েছে। 

দৈনিক আমাদের বার্তার হাতে থাকা উপসচিব মোহম্মদ কবির উদ্দিন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, প্রতি উপজেলায় গড়ে ১০-২০ জন শিক্ষক পদোন্নতি নিতে চান না বলে আবেদন করেছেন। পদোন্নতি নিতে না চাওয়া শিক্ষকদের আবেদন যাচাই বাছাই জরুরি। তা না হলে সহকারী শিক্ষকদের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে ও আদালতে মামলা হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। পদোন্নতির মতো স্পর্শকাতর বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে ভবিষ্যতে যাতে তা প্রশ্নবিদ্ধ না হয় সে জন্য কার্যক্রমে স্বচ্ছতার সঙ্গে হওয়া জরুরি। তাই পদোন্নতিতে অনাগ্রহী শিক্ষকরা আর পদোন্নতির আবেদন করবেন না বলে অঙ্গীকারসহ নিজ হাতে লেখা আবেদন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের প্রত্যয়ন ও মতামতসহ পাঠাতে বলা হয়েছে অধিদপ্তরকে। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজ সভাপতি শাহিনুর আল-আমিন গতকাল সোমবার দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে চাকরি করা শিক্ষকদের অনেকে পদোন্নতি চাচ্ছেন না। বেতন না বাড়া, চলতি দায়িত্বপ্রাপ্তদের ভাতা কমা ও প্রশাসনিক দায়িত্বের জটিলতায় তারা পদোন্নতি চাচ্ছেন না বলে জানতে পেরেছি। তবে,  অনেক শিক্ষক পদোন্নতি চান। আমি নিজেও ব্যাক্তিগতভাবে চাই একদিনের জন্য হলেও প্রধান শিক্ষক হয়ে চাকরি জীবন শেষ করতে।

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক শিক্ষার ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক শিক্ষাডটকমের ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
হামলায় মোল্লা কলেজের ৩ শিক্ষার্থী নিহত, দাবি কর্তৃপক্ষের - dainik shiksha হামলায় মোল্লা কলেজের ৩ শিক্ষার্থী নিহত, দাবি কর্তৃপক্ষের সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত নৈরাজ্যকারীদের প্রতিহত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান কাজ: সারজিস - dainik shiksha নৈরাজ্যকারীদের প্রতিহত করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধান কাজ: সারজিস মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! - dainik shiksha মিনিস্ট্রি অডিটরদের গরুর দড়িতে বাঁধবেন শিক্ষকরা! সোহরাওয়ার্দী কলেজ বন্ধ ঘোষণা - dainik shiksha সোহরাওয়ার্দী কলেজ বন্ধ ঘোষণা সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha সাত কলেজের অনার্স ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা স্থগিত কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে অনতিবিলম্বে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করতে হবে: নুর - dainik shiksha অনতিবিলম্বে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত করতে হবে: নুর কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002810001373291