পদোন্নতি নিয়ে শিক্ষা ক্যাডারে অসন্তোষ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষকদের সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির লক্ষ্যে বিষয়ভিত্তিক একটি খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। যেখানে দুই হাজার ৫০৮ জন প্রভাষকের নাম আছে। তবে তালিকা প্রকাশ হলেও পদোন্নতি কবে, কিভাবে হবে তা কেউ যানেন না। সহকারী থেকে সহযোগী, এবং সহযোগী থেকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি না হলে তাদের পদোন্নতি হচ্ছে না। ফলে দুই বছরেও বেশি সময় ধরে শিক্ষা ক্যাডারের বিভিন্ন স্তরে পদোন্নতি নিয়ে দফায় দফায় খসড়া তালিকা প্রকাশের নতুন আরেকটি পদক্ষেপের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে এবারের পদোন্নতির উদ্যোগও। কর্মকর্তারাও বলছেন, সহকারী থেকে সহযোগী ও সহযোগী থেকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি না হলে প্রভাষকদের পদোন্নতি সম্ভব হবে না। বুধবার (১০ জুন) জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন বিভাষ বাড়ৈ।

প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, শিক্ষক ও শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বছরের পর বছর ধরে সঙ্কট থাকলেও ক্ষমতাসীন সরকার ১০ বছরের চেষ্টায় সরকারী কলেজ বা বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের শিক্ষকদের পদোন্নতিতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছিল। প্রায় প্রতি বছরই দুই থেকে তিনবার বিসিএস শিক্ষকদের পদোন্নতি দেয়ার মাধ্যমে শিক্ষকদের মাঝে সরকারের অত্যন্ত ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্তাব্যক্তিদের কারণে সরকারের সব অর্জন নষ্ট হতে চলেছে। গত দুই বছরে সিভিল সার্ভিসের অন্যতম বড় শিক্ষা ক্যাডারের কোন স্তরেই কোন পদোন্নতি নেই। কেবল তাই নয়, প্রায় সাত শ’ জন সহযোগী অধ্যাপক পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েই অবসরে চলে যাচ্ছেন !

শত শত শিক্ষক আছেন যারা পদোন্নতির সব যোগ্যতা অর্জন করলেও এক যুগেরও বেশি সময় ধরে কোন পদোন্নতি পাচ্ছেন না। নেই পদ সৃষ্টিরও কোন উদ্যোগ। প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপকের পদ সৃষ্টির প্রস্তাবও ঝুলে আছে দীর্ঘদিন ধরে। ফলে শিক্ষকদের মাঝে বাড়ছে অসন্তোষ। প্রায় প্রতিদিনই শিক্ষা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের কাছে বিভিন্নভাবে দাবি জানাচ্ছেন সরকারী কলেজ শিক্ষকরা। মন্ত্রণালয় ও মাউশি কর্মকর্তারা মাসের পর মাস ধরে কেবল ‘হবে হবে’ বলে সময় কাটাচ্ছেন।

দীর্ঘদিন পদোন্নতি বঞ্চিত বিসিএস ক্যাডারের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক-কর্মকর্তারা বিভিন্ন সময় শিক্ষা অধিদফতরের কর্তাব্যক্তিদের কাছে একযোগে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তবে যথারীতি ‘কাজ চলছে’ ‘শীঘ্রই হয়ে যাবে’ বলে পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন কর্তাব্যক্তিরা। পরিস্থিতিতে ক্ষুব্ধ সরকার সমর্থক হিসেবে পরিচিত শিক্ষা ক্যাডারের প্রগতিশীল শিক্ষক-কর্মকর্তারাও।

বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের প্রগতিশীল শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সংগঠন স্বাধীনতা বিসিএস শিক্ষা সংসদের সদস্য সচিব ও মোহম্মদপুর কেন্দ্রীয় কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ জাফর হতাশা প্রকাশ করে বলেন, প্রথমত, কয়েক বছর ধরে শিক্ষা ক্যাডারে নিয়মিত পদোন্নতিতে সরকারের যে ইতিবাচক একটা মর্যাদা তৈরি হয়েছিল সেখানে ছেদ পড়েছে। এটা আমাদের কারও জন্যই ভাল নয়।

দ্বিতীয়ত, আমরা বহুবার এমনকি আমি নিজেও সাবেক সচিব সোহরাব হোসেইনের সঙ্গে দেখা করে পদোন্নতির উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করেছি। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ’১৮ সালের শেষদিকে তিনি বলেছিলেন নির্বাচনটা হলেই ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু আজও হয়নি। এতে শিক্ষা ক্যাডারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে ব্যাপক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ছে। শিক্ষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন বিভিন্নভাবে।

কার্যকর উদ্যোগের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট। পদোন্নতি ও পদ সৃজনের উদ্যোগ না নেয়ায় আজ সঙ্কট। যত তাড়াতাড়ি উদ্যোগ নেয়া হবে ততই মঙ্গল। কারণ শত শত শিক্ষক এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পদোন্নতি বঞ্চিত। আমি ১৭তম ব্যাচের শিক্ষক। আমার পদোন্নতিও হয়েছে ৯ বছর হয়ে গেছে। শত শত শিক্ষক আছেন যারা সব যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও পদোন্নতি বঞ্চিত হয়ে অবসরের যাচ্ছেন। বিষয়টি উদ্বেগের।

এদিকে পদোন্নতির ক্ষেত্রে বৈষম্যের চিত্রও। ১৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ’৯৩ সালের নবেম্বরে বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে যোগ দেয়া বহু শিক্ষক এক যুগেও পদোন্নতি পাননি। অথচ একই ব্যাচের অনেকেই অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। একই ব্যাচের কর্মকর্তাই এ ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদ মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ পরিচালকসহ (কলেজ ও প্রশাসন) বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন রয়েছেন। মাউশি মহাপরিচালকের পদটি গ্রেডে-১-এর পদ। একই ব্যাচের কেউ বেতন স্কেলের সর্বোচ্চ ধাপে, কেউ-বা পঞ্চম ধাপে চাকরি করছেন।

জানা গেছে, এই বৈষম্যমূলক অবস্থা সৃষ্টির কারণ একটি নিয়ম। এই নিয়মানুযায়ী বিসিএসের অন্যান্য ক্যাডারে ব্যাচভিত্তিক পদোন্নতি চালু থাকলেও শিক্ষা ক্যাডারে বিষয়ভিত্তিক পদোন্নতি ঘটে। ফলে ১৪তম বিসিএসের অনেক কর্মকর্তা এখনও অধ্যাপক হতে পারেননি। অথচ ১৫ ও ১৬তম বিসিএসের অনেক কর্মকর্তা অধ্যাপক হয়ে আগেই তাদের টপকে গেছেন। এতে সরকারী কলেজে সিনিয়র শিক্ষকদের কাজ করতে হচ্ছে জুনিয়রদের অধীনে, যা তাদের মনোবেদনা ও হতাশার অন্যতম কারণ। শিক্ষা ক্যাডারে পদোন্নতি বঞ্চনার মারাত্মক শিকার বিসিএসের ১৪তম ব্যাচ। এ ব্যাচের বহু শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক পদ থেকে পদোন্নতির সব শর্ত পূরণের পরও অধ্যাপক হওয়ার প্রহর গুণছেন বছরের পর বছর ধরে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য শিক্ষা অধিদফতরের একটি প্রস্তাবনাতেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে পদোন্নতি বঞ্চনার উদ্বেগজনক চিত্র। যেখানে অধিদফতর বলেছে, ‘প্যাটার্ন অনুযায়ী অধ্যাপকের পদ সৃষ্টি না হওয়ায় অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেয়া যাচ্ছে না। ৬৮৬ সহযোগী অধ্যাপক ১০ থেকে ১২ বছর আগে পদোন্নতির সব যোগ্যতা অর্জন করেও পদোন্নতি পাচ্ছেন না। পদোন্নতি বঞ্চিত হয়েই অনেকে অবসরের পথে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা - dainik shiksha চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? - dainik shiksha স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার - dainik shiksha কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039141178131104