পদোন্নতি পরীক্ষায় ফেল করেও অধ্যাপকের যোগ্য!

এম এইচ রবিন |

ক্যাডার সার্ভিসকে সুশৃঙ্খল বলা হলেও বাস্তবে বিশৃঙ্খলা বেশি হচ্ছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে। বিভাগীয় বিধি এড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি। এ রেওয়াজ চলছে ২০০৬ সাল থেকে। এতে শিক্ষা ক্যাডারে চরম অসন্তোষ ও বিশৃঙ্খলা বিরাজ করছে। আদালত পর্যন্ত গড়ালেও বিষয়টির কোনো সুরাহা নেই শিক্ষা প্রশাসনে। বিধি ভঙ্গ করে এখন অধ্যাপক পদে পদোন্নতির খসড়া তালিকা চূড়ান্ত করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে সম্ভাব্য অধ্যাপকদের তালিকা।

বাংলাদেশ সার্ভিস রুল (বিএসআর) ১৯৮১-এর ৫, ৬ ও ৭ বিধি অনুযায়ী সব ক্যাডার পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের শুরুতে বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ, বিভাগীয় পরীক্ষায় পাস ও শিক্ষানবিশকাল শেষ করে চাকরি স্থায়ীকরণ বাধ্যতামূলক। পদোন্নতির পরীক্ষায় পাস করাও বাধ্যতামূলক। যারা এসব যোগ্যতা অর্জনে ব্যর্থ হবেন তাদের চাকরির মেয়াদ ১৫ বছর পূর্ণ হলে পরীক্ষা প্রমার্জন (ক্ষমা) সাপেক্ষে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হবেন। শিক্ষা ক্যাডারের প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদোন্নতিপ্রাপ্ত হলে পাঁচ বছর ওই পদে কর্মরত থাকার পরে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির যোগ্য হন। কিন্তু কোনোভাবেই অধ্যাপক হতে পারবেন না। যোগ্যতা অর্জনকারীরাই সহকারী অধ্যাপক পদে তিন বছর ফিডার সার্ভিস পূর্তিতে সহযোগী অধ্যাপক এবং দুই বছর ফিডার সার্ভিস পূর্তিতে অধ্যাপক হতে পারবেন।

শিক্ষকদের তথ্য অনুযায়ী, অতিসম্প্রতি মাউশি থেকে চূড়ান্ত করা অধ্যাপক পদে পদোন্নতিযোগ্যদের জ্যেষ্ঠতার তালিকা (গ্রেডেশন লিস্ট) নিয়ে হইচই পড়েছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারভুক্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে। পদোন্নতির জন্য বিভাগীয় পরীক্ষায় পাস না করেও এই তালিকায় তাদের নাম সবার উপরে। আবার বিভাগীয় পরীক্ষায় পাসসহ নিয়মিত পদোন্নতিপ্রাপ্ত ও মেধাবীদের নাম রয়েছে অপেক্ষাকৃত নিচের দিকে। এতে যোগ্যরা পদোন্নতিবঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। শিক্ষকদের অভিযোগ মাউশির একশ্রেণির কর্মকর্তার যোগসাজশে অযোগ্যদের ওই তালিকার শীর্ষে রাখা হয়েছে।

শিক্ষকদের অভিযোগ বাতিল করে মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান জানান, পদোন্নতির জন্য নির্দিষ্ট ছক অনুযায়ী তালিকা তৈরি করতে হয়। সেই ছক অনুযায়ী হয়তো কিছু ব্যক্তির নাম তালিকার উপরে এসেছে। পদোন্নতির পরীক্ষায় ফেল করে ক্ষমা (প্রমার্জন) পাওয়া কর্মকর্তা নির্দিষ্ট সময়ের পর তার যোগ্যতায় ফেরেন বলেও দাবি করেন তিনি। যোগ্যদের বাদ দিয়ে অযোগ্যদের নাম তালিকার প্রথম দিকে কীভাবে এলোÑ এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো তথ্য আমার জানা নেই। কেউ অভিযোগ করলে বিষয়টি খতিয়ে দেখব।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির সভাপতি আইকে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার বলেন, অধ্যাপক হওয়ার আগের স্তরে পদোন্নতিতে যারা প্রমার্জন পেয়েছেন তারা অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান না। এরা সর্বোচ্চ সহযোগী অধ্যাপক পর্যন্ত পদোন্নতি পাবেন।

বঞ্চিতদের অভিযোগ, রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজের ইতিহাস বিষয়ের এক ‘ল’ অদ্যাক্ষর নামের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি দশম বিসিএসসের (সাধারণ শিক্ষা) মাধ্যমে ক্যাডার সার্ভিসে যোগ দেন। বিভাগীয় পরীক্ষায় ফেল করেও ২০১০ সালে সহকারী অধ্যাপক ও ২০১৪ সালে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পান। ক্ষমা (প্রমার্জন) পেয়ে পদোন্নতি পেলেও বিধান অনুযায়ী তিনি অধ্যাপক হতে পারেন না। কিন্তু মাউশির গ্রেডেশন লিস্টে তার নাম শীর্ষে। একইভাবে ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিষয়ের অধ্যাপক পদে পদোন্নতির খসড়া তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন ‘জ’ অদ্যাক্ষর নামের এক কর্মকর্তা। অথচ বিভাগীয় পরীক্ষায় পাসসহ নিয়মিত পদোন্নতিপ্রাপ্ত ও মেধাবীদের নাম রয়েছে অপেক্ষাকৃত নিচের দিকে। ‘ই’ অদ্যাক্ষর নামে এক শিক্ষক ২০০৫ সালে সহযোগী অধ্যাপক হন। তার সঙ্গে নিয়োগপ্রাপ্ত বর্তমান মাউশির মহাপরিচালক ড. এসএম ওয়াহিদুজ্জামান ২০০৫ সালে সহযোগী অধ্যাপক ও ২০১২ সালে অধ্যাপক হন। বিগত দিনে বিধি লঙ্ঘন করে পদোন্নতির বলি হয়েছেন ‘ই’ অদ্যাক্ষর নামের কর্মকর্তা, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডের ‘অ’ এবং ‘শ’ অদ্যাক্ষরের নামের দুইজনসহ এই ক্যাডারে বিধি মোতাবেক পদোন্নতিবঞ্চিত আরও অনেক কর্মকর্তা। এরা জানান, শিক্ষা ক্যাডারটি পার্শ্ব (লেটারাল এন্ট্রি) প্রবেশের। অর্থাৎ বিসিএস পরীক্ষায় পাস না করেও আত্মীকৃত শিক্ষক, প্রদর্শক থেকে পদোন্নতিসহ বিভিন্নভাবে এ ক্যাডারে প্রবেশের সুযোগ রয়েছে। বিধি অনুযায়ী শিক্ষা ক্যাডারের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারিত হবে পদোন্নতিপ্রাপ্ত পদে যোগদানের তারিখ থেকে। পদোন্নতির খসড়া তালিকা করার ক্ষেত্রে মাউশি এ বিধি অনুসরণ করেনি।

একটি শিক্ষা বোর্ডে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা ড. আনোয়ারুল হক প্রামাণিক বলেন, ক্যাডারে পদোন্নতির বিধান অনুযায়ী অনেক আগে অধ্যাপক হওয়ার কথা ছিল। এবারের তালিকায় আমার নাম অনেকটা অবহেলিত দেখে বিস্মিত হয়েছি। অথচ যাদের অধ্যাপক হওয়ার যোগ্যতা নেই তাদের নাম আমার আগে রয়েছে।

উল্লেখ্য, মাউশির এই ১ হাজার ২৬০ জনের তালিকা থেকে ৩০০ জনকে অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দেওয়া হতে পারে।

সূত্র: আমাদেরসময়


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ - dainik shiksha অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র - dainik shiksha ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026538372039795