পদোন্নতি বঞ্চিত ৩০ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক চরম ভোগান্তিতে

সুতীর্থ বড়াল, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

সুতীর্থ বড়াল, দৈনিক শিক্ষাডটকম:  পদোন্নতি বঞ্চিত প্রাথমিকের প্রায় ৩০ হাজার সহকারী শিক্ষক নানা সমস্যায় দিন পার করছেন। দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দূর করতে কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ তাদের। 

পদোন্নতির যোগ্য হয়েও বঞ্চিত সহকর্মীদের কেউ মারা গেছেন, কেউবা অবসরে। কিন্তু এই ভোগান্তির অবসান ঘটছে না। 

অন্যদিকে স্থায়ী প্রধান শিক্ষক না থাকায় স্কুলগুলোও চলছে ঢিমেতালে। ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম। 
এমন পরিস্থিতিতে পদোন্নতি বঞ্চিতরা চাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ দ্রুতই যেনো তাদের পদোন্নতি চালু করে দুর্দশা লাঘব করে। একইসঙ্গে বদলি কার্যক্রমে যে জটিলতা রয়েছে তা সহজ করার দাবিও জানান তারা।  
তবে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বলছে, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। অন্যথায় তাদের কিছুই করার নেই।

জানা যায়, ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দের গেজেটের ভুল ব্যাখ্যার কারণে মামলা করেছেন জাতীয়করণ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। এতে আটকে গেছে পুরো পদোন্নতি কার্যক্রম। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সহকারী শিক্ষকেরা।
কিন্তু ১৪ বছর পর গত বছরের আগস্টে শুরু হয়েছিলো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি কার্যক্রম। কিন্তু মাত্র ছয় মাসের মাথায় ফের মামলাসংক্রান্ত জটিলতায় আটকে গেছে তা। 
এরপর জাতীয়করণকৃত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৫০ শতাংশ চাকরিকাল গণনাসংক্রান্ত মামলায় ফের আটকে যায় পদোন্নতি কার্যক্রম।

জানা যায়, গত ৩ আগস্ট লক্ষ্মীপুর জেলার সদর, কমলনগর ও রায়পুর উপজেলার ২০১ জন সহকারী শিক্ষককে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতির আদেশ জারি করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরপর ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ১৯ উপজেলায় ১ হাজার ৬৩ জন সহকারী শিক্ষক পদোন্নতি পেয়েছেন প্রধান শিক্ষক হিসেবে।

পরে লক্ষ্মীপুরের যে পদোন্নতি হয়েছে তা আদালত অবমাননার সামিল উল্লেখ করে পিটিশন দায়েরের কারণে হঠাৎ করে থেমে যায় পদোন্নতি কার্যক্রম। তখন আশাহত হন পদোন্নতি বঞ্চিত সহকারী শিক্ষকেরা। কিন্তু এই পিটিশন নিয়ে আপিল বিভাগে গেলে সর্বশেষ চলতি বছরের ২৩ এপ্রিল শুনানি শেষে আদালত অবমাননার মতো কোনো বিষয় খুঁজে না পাওয়ায় সর্বোচ্চ আদালত তা বাতিল করে দেন বলে দাবি করেন পদোন্নতি প্রত্যাশীরা। 

তারা বলেন, এর ফলে এখন আর পদোন্নতি দিতে কোনো বাধা থাকলো না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কাছে তারা দাবি জানান পদোন্নতি কার্যক্রম দ্রুত চালু করে তাদের দুর্ভোগ লাঘব করতে। 

পদোন্নতি বঞ্চিত নেত্রকোনার সুসং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (চলতি দায়িত্ব) এমদাদ হোসেন চৌধুরী বলেন, লক্ষ্মীপুরের পদোন্নতিতে আদালতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে অবমাননার কোনো বিষয় পায়নি বলে জানানোর ফলে পদোন্নতিতে কোনো বাধা নেই। লক্ষ্মীপুরসহ অন্যান্য উপজেলার মতো বাকি জেলার উপজেলাগুলোতে পদোন্নতি দিতে সমস্যা নেই। আমরা আশাকরি খুব শীঘ্রই পদোন্নতি চালু করা হবে।  

অপরদিকে ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার আরেক সহকারী শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা জেষ্ঠ্যতা অনুযায়ী পদোন্নতি বঞ্চিত। মামলা জটিলতার কারণে আমাদের ভাগ্যে পদোন্নতি জোটেনি। যেহেতু জটিলতার নিরসন হয়েছে, এখন আশা করছি দ্রুতই পদোন্নতি পাবো।  

এদিকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৫টি। এসব বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২ কোটি ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৯১। আর শিক্ষক আছেন ৩ লাখ ৬২ হাজার ৭০৯ জন।

সূত্র জানায়, সারাদেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রধান শিক্ষকের পদোন্নতিযোগ্য শূন্য পদ ছিলো ২৯ হাজার ১৬৭। এর মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের চলতি দায়িত্ব দিয়েছে ১৫ হাজার ৪৯৮টি বিদ্যালয়ে। আর বাকি ১৩ হাজার ৬৬৯ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদে সিনিয়র শিক্ষকেরা দায়িত্ব পালন করছেন। গত ৭ মাসে আরো প্রায় ১ হাজার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অবসরে গিয়েছেন। সেই হিসাবে শূন্য পদের সংখ্যা ৩০ হাজারের কম নয়।

এ বিষয়ে ডিপিইর ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মামলার কারণে বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে পদোন্নতি। 

জানা যায়, ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দে একটি মামলার কারণে সারা দেশে পদোন্নতির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণ বন্ধ হয়ে যায়।

২০১৪ খ্রিষ্টাব্দে এ মামলার নিষ্পত্তি হয়। কিন্তু একই বছর প্রধান শিক্ষকের পদ দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করা হয়। এতে ওই পদে নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়টি চলে যায় বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) অধীনে।

ফলে আবার বন্ধ হয়ে যায় পদোন্নতির মাধ্যমে শূন্য পদ পূরণ। পরে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে ২৩ মে থেকে প্রধান শিক্ষকের শূন্য পদে চলতি দায়িত্ব দেয়া হয় সহকারী শিক্ষকদের।

এদিকে স্থায়ী প্রধান শিক্ষক না থাকায় সুশৃঙ্খলভাবে বিদ্যালয় পরিচালনা সম্ভব হচ্ছে না অনেক জায়গায়। ব্যাহত হচ্ছে শ্রেণিকক্ষে পাঠদানও। দেশের বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বেহাল অবস্থা উঠে এসেছে।

 

 

শিক্ষাসহ সব খবর সবার আগে জানতে দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গেই থাকুন। ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

দৈনিক আমাদের বার্তার ইউটিউব চ্যানেল  SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ডিআইএর নতুন পরিচালক অধ্যাপক আবু কাইয়ুম - dainik shiksha ডিআইএর নতুন পরিচালক অধ্যাপক আবু কাইয়ুম জাতীয়করণসহ তিন দাবিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরিদের অবস্থান - dainik shiksha জাতীয়করণসহ তিন দাবিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরিদের অবস্থান এমপিওর দাবিতে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষকদের পদযাত্রা - dainik shiksha এমপিওর দাবিতে প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় শিক্ষকদের পদযাত্রা কারিগরিতে ৪০ শতাংশ নম্বরে উপবৃত্তি - dainik shiksha কারিগরিতে ৪০ শতাংশ নম্বরে উপবৃত্তি কাউকে হেনস্তা না করার আহ্বান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের - dainik shiksha কাউকে হেনস্তা না করার আহ্বান বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের আটকের পর বিজিবিকে যে প্রলোভন দেখান বিচারপতি মানিক - dainik shiksha আটকের পর বিজিবিকে যে প্রলোভন দেখান বিচারপতি মানিক নয় বছরের শিক্ষিকাকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হতে বললেন প্রধান শিক্ষক - dainik shiksha নয় বছরের শিক্ষিকাকে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হতে বললেন প্রধান শিক্ষক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0048620700836182