পদ্মা সেতুর চালুর প্রভাব পরেছে নদী পথে। বরগুনার আমতলী লঞ্চঘাট থেকে তেমন যাত্রী লঞ্চে ঢাকা যাচ্ছেন না। অধিকাংশ অসুস্থ রোগীরাই লঞ্চের যাত্রী। লঞ্চ কর্তৃপক্ষ দাবি করছেন, পদ্মা সেতুর খুলে দেয়ায় তেমন প্রভাব পরেনি। যাত্রীরা দাবি করছেন, সড়ক পথে দ্রুত যাওয়ার কারণে নদী পথ লঞ্চে যাত্রী কমে গেছে।
জানা গেছে, নদীপথ আমতলী-ঢাকা রুটে এমভি তরঙ্গ-৭, এমভি ইয়াদ-১, এমভি সুন্দরবন-৭ ও ঈদ স্পেশাল এমভি শতাব্দি বাঁধন নামের চারটি লঞ্চ সার্ভিস রয়েছে। আমতলী লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন অন্তত ৫০০ থেকে ৬০০ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে লঞ্চে যায়। কিন্তু পদ্মা সেতুর খুলে দেয়ার প্রভাবে প্রথম দিন রোববার লঞ্চে যাত্রী সংখ্যা কমে গেছে। সময় নিয়ন্ত্রণে মানুষ নদী পথ পরিহার করে সড়ক পথে যেতে শুরু করেছে। লঞ্চে যারা যাচ্ছেন তাদের অধিকাংশই অসুস্থ ও পরিবার পরিজন নিয়ে যাচ্ছেন।
বরিবার আমতলী লঞ্চঘাট ঘুরে দেখা গেছে, লঞ্চে যাত্রী নেই। দুপুর ২ টা পর্যন্ত আমতলী ঘটে এমভি তরঙ্গ-৭ লঞ্চে মাত্র ৪৫ জন যাত্রী বিছানা পেতে বসে আসেন। ওই ৪৫ জন যাত্রীর মধ্যে ৯ জন যাত্রীর সঙ্গে কথা হয়। তারা পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছেন। ৯ জন যাত্রীর মধ্যে আবার ৬ জনই রোগী। লঞ্চে ৯৭ টি কেবিনের কোন যাত্রী আসেনি। ৩৫ টি কেবিন বুকিং হয়েছে। ওই যাত্রী আসা নিয়ে সংশয় রয়েছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ।
পদ্মা সেতু চালু হওয়ার আগে প্রতিদিন দুপুর ২ টা পর্যন্ত দেড় থেকে দুই শতাধিক যাত্রী ঘাটে টোল দিয়ে লঞ্চে ওঠে বিছানা পেতে বসে থাকতো বলে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান টোল আদায়কারী মো. হানিফ গাজী। কিন্তু পদ্মা সেতু চালুর প্রথম দিনে লঞ্চে যাত্রী নেই। মাত্র ৪৫ জন যাত্রী টোল দিয়েছেন। এদিকে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় প্রভাব লঞ্চে পরেনি। চারদিন লঞ্চ চলাচল বন্ধ ছিল বিধায় লঞ্চে যাত্রী কম। কিন্তু যাত্রীরা দাবি করেন সময় নিয়ন্ত্রণে মানুষ নদী পথ পরিহার করে সড়ক পথে যাতায়াত শুরু করেছে।
নাচনাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা লঞ্চ যাত্রী মো. আবু জাফর দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, ‘মেয়ে অসুস্থ তাই লঞ্চে ঢাকা যাচ্ছি। না হলে এতো সময় ব্যয় করে লঞ্চে যেতাম না।’
তিনি আরও বলেন, ‘লঞ্চে ঢাকা পৌছতে ১২ থেকে ১৩ ঘন্টা সময় লাগে। আর সড়ক পথে বাসে যেতে সময় লাগে মাত্র ৬ ঘন্টা।’
উত্তর টিয়াখালী গ্রামের ট্রাক চালক মো. বাচ্চু হাওলাদার দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকায় যেতে হয় বিধায় লঞ্চে যাচ্ছি। নাহলে এখন লঞ্চে ঢাকা যাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় নদী পথের অর্ধেক সময় কম লাগে সড়ক পথে।
দক্ষিণ পশ্চিম আমতলী গ্রামের বাসিন্দা লাকি বেগম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বাসে উঠলে অসুস্থ্য হয়ে যাই। তাই লঞ্চে ঢাকা যাচ্ছি।
চালিতাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. জসিম উদ্দিন দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, আমার হার্টে সমস্যা তাই গাড়িতে চড়তে সমস্যা হয়। তাই ডাক্তার দেখাতে লঞ্চে ঢাকা যাচ্ছি।
তালতলী উপজেলার গেন্ডামারা গ্রামের বাসিন্দা নারী যাত্রী জাহানারা বেগম ও আমতলীর শাহিদা বেগম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, লঞ্চে নিরাপদে ঘুমিয়ে যাওয়া যায়, তাই সময় বেশি লাগলেও লঞ্চে যাচ্ছি। তারা লঞ্চের ভাড়া কমানোর দাবি জানান।
আমতলী লঞ্চঘাটে টোল আদায়কারী মো. হানিফ গাজী দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, যাত্রী অনেক কম। পদ্মা সেতু চালুর আগে প্রতিদিন এমন সময় (দুপুর ২ টা পর্যন্ত) অন্তত দেড় থেকে দুই শতাধিক যাত্রী টোল দিয়ে লঞ্চে যেতো কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র ৪৫ জন যাত্রী টোল দিয়ে লঞ্চে গেছেন।
এমভি তরঙ্গ লঞ্চের টিকেট মাস্টার মো, জসিম উদ্দিন যাত্রী কমের কথা স্বীকার করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, লঞ্চে ৯৭ টি কেবিন আছে। তার মধ্যে ৩৫ টি কেবিন বুকিং হয়েছে। তাও যাত্রী আসবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।
এমভি তরঙ্গ-৭ লঞ্চের সুপার ভাইজার মো. হুমায়ুন কবির পদ্মা সেতু চালু হওয়ার যাত্রী কমের কথা অস্বীকার করে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, চার দিন লঞ্চ বন্ধ ছিলো তাই যাত্রী কম। পদ্মা সেতুর প্রভাব নদী পথে পরবে কিনা তা এখনো বলা যাবে না। কিছু দিন গেলে বুঝতে পারবো।