মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা পবিত্র ওমরাহ অবশেষে সীমিত পর্যায়ে চালু হচ্ছে। তবে প্রথমেই সৌদি আরবে বসবাসকারীরা নির্দিষ্ট শর্ত সাপেক্ষে পবিত্র ওমরাহ পালনের অনুমতি পাবেন। এরপর ধীরে ধীরে বিদেশিরাও পবিত্র ওমরাহ পালনের সুযোগ পাবেন। তবে সেটাও সীমিত পর্যায়ে এবং সীমিত সংখ্যায় হবে।
পবিত্র দুই মসজিদ হারামাইন শরিফাইন সূত্র জানায়, করোনাভাইরাস পরিস্থিতি উন্নতি সাপেক্ষে সীমিত পর্যায়ে ওমরাহ পালনের অনুমতি দেওয়ার চিন্তাভাবনা চলছে। সে ক্ষেত্রে প্রথমে স্থানীয়রা (সৌদি আরবে বসবাসকারী),পরে ভিনদেশিরা অনুমতি পাবেন।
এদিকে, দেশটির প্রভাবশালী ইংরেজি দৈনিক সৌদি গেজেটের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্থানীয়দের নির্দিষ্ট প্রক্রিয়া মেনে নিবন্ধন করতে হবে। নিবন্ধনের সময় করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট বাধ্যতামূলকভাবে দাখিল করতে হবে।
নিবন্ধন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে ওমরাহ পালনের সময়, তারিখ উল্লেখ করে ‘ওমরাহ পারমিট’ দেওয়া হবে। তবে এ-সংক্রান্ত বিস্তারিত ঘোষণা ও পরিকল্পনা, ওমরাহ শুরুর তারিখ সম্পর্কে হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় খুব শিগগির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে।
সৌদি সরকার আরো জানিয়েছে, গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিল (জিসিসি) সদস্যভুক্ত দেশের (কাতার, কুয়েত, ওমান, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও সৌদি আরব) নাগরিকরা ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে সৌদি আরবে যাতায়াত করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে তাদের ভ্রমণের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে করোনাভাইরাস পরীক্ষার নেগেটিভ সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এসব দেশের এক্সিট এবং রি-এন্ট্রি ভিসা, ওয়ার্ক ভিসা, রেসিডেন্স পারমিট ও ভিজিট ভিসাধারীরা এই সুযোগ পাবেন।
এ ছাড়া সৌদি আরবের নাগরিকরা বিশেষ কাজের জন্য দেশের বাইরে যেতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক, আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থার কাজ, পরিবারের সদস্যরা বাইরে থাকলে, বিদেশে শিক্ষা এবং চিকিৎসাসহ কয়েকটি জরুরি গুরুত্বপূর্ণ কাজে দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ পাবেন সৌদি নাগরিকরা।
২০২১ খ্রিষ্টাব্দের ১ জানুয়ারির পর সৌদি আরব নাগরিকদের জন্য জল,স্থল ও বিমানপথে চলাচলে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা পুরোপুরি প্রত্যাহার করবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে মার্চ থেকে সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট স্থগিত করে সৌদি আরব।
পরে গত সোমবার সৌদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, গালফ দেশগুলোর নাগরিকরা এবং যারা সৌদি নাগরিক নন, তারা আজ মঙ্গলবার থেকে সৌদি আরবে প্রবেশের অনুমতি পাবেন। সীমিত পরিসরে চালু হয়েছে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট। যাদের বৈধ কাগজপত্র রয়েছে, শুধু তারাই সৌদিতে ঢুকতে পারবেন, তবে করোনামুক্ত প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।
সৌদি আরবে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ২৬ হাজার ছাড়িয়ে গেছে এবং দেশটিতে মৃত্যু হয়েছে চার হাজার ৩০৫ জনের। বিশ্বের অন্য দেশগুলোর মতো সৌদি আরব করোনা সংক্রমণের কারণে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ওমরাহ বন্ধ করে দেয়। তবে মক্কার মসজিদুল হারামে সীমিত মুসল্লিদের অংশগ্রহণে জুমা ও জামাত চালু রয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে কঠোর বিধিনিষেধের মধ্য দিয়ে শুধু সৌদি আরবে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের অল্পসংখ্যক মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মেনে হজ পালন করেছেন।
হজ শেষে ধারণা করা হচ্ছিল, ওমরাহর কার্যক্রম শুরু করবে দেশটি। কারণ, ৪ আগস্ট দেশটির হজ ও ওমরাহবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী ড. হুসাইন আল শরিফ সৌদি গেজেটকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, হজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে শিগগিরই ওমরাহ কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছে সৌদি সরকার।
ওই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, হজ মন্ত্রণালয় শিগগির ওমরাহর প্রস্তুতি পর্ব শুরু করতে যাচ্ছে। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সদ্য সমাপ্ত হওয়া হজের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে ওমরাহর জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হবে।
সেই থেকে অপেক্ষায় রয়েছে বিশ্ববাসী, কবে থেকে শুরু হবে ওমরাহ। বিশেষ করে বাংলাদেশি মুসলমানরা। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা হজ ও ওমরাহ পালনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি এ কার্যক্রমে জড়িত বেসরকারি হজ এজেন্সিগুলো চরম ক্ষতির মুখে পড়েছে। সম্প্রতি করোনা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হওয়ায় ধাপে ধাপে ওমরাহ কার্যক্রম চালুর পর বিদেশিরা ওমরাহর সুযোগ পেলে এজেন্সিগুলোর দুর্দিন কিছুটা লাঘব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
সাধারণত প্রতিবছর হজের পর মহররমের মাঝামাঝি থেকে পবিত্র ওমরাহ কার্যক্রম চালু করে সৌদি আরব। পবিত্র রমজান মাসের শেষ পর্যন্ত ওমরাহ ভিসা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ থেকে বছরে লক্ষাধিক ধর্মপ্রাণ মানুষ পবিত্র ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরব যান।
করোনার কারণে আকস্মিকভাবে গত ফেব্রুয়ারিতে ওমরাহ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেকে ভিসা ও উড়োজাহাজের টিকেট কাটা সত্ত্বেও সৌদি যেতে পারেননি। পরে অবশ্য সংশ্লিষ্টরা টিকেটের টাকা ফেরত দেন।
একাধিক হজে এজেন্সি মালিক জানিয়েছেন, ওমরাহ পালনে আগ্রহী অনেকেই তাদের পাসপোর্ট এখনো এজেন্সিতে জমা দিয়ে রেখেছেন। আবার কবে ওমরাহ ভিসা চালু হবে, সে খোঁজখবর নেওয়া শুরু করেছেন তাঁরা।
ওমরাহ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় বেসরকারি দেড় হাজারের বেশি এজেন্সি চরম বিপাকে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে এজেন্সির অফিসগুলো বন্ধ, তারপরও স্টাফদের বেতন, অফিস ভাড়া ও অন্যান্য খরচ চালিয়ে নিতে হচ্ছে। এতে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এজেন্সি মালিকরা। আপাতত ওমরাহ চালু হলে এসব ক্ষতি কিছুটা পোষানো সম্ভব হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।