সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচিতে জনগণের অংশগ্রহণ বাড়াতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বিধিমালা পরিবর্তন করে সুযোগ- সুবিধা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেশকিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তবে চালু থাকা চারটি স্কিম অব্যাহত থাকবে। আপাতত নতুন কোনো স্কিম অন্তর্ভুক্ত হবে না। গতকাল সোমবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের পরিচালনা পর্ষদের প্রথম সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সভা শেষে সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষের সদস্য গোলাম মোস্তফা বলেন, সব দেশের পেনশনে সব সময় সংস্কারের সুযোগ থাকে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই কখনও বয়স, কখনও সুবিধা বাড়ে। সামনের দিকে এগোতে পেনশন কর্তৃপক্ষ যদি মনে করে, কোনো জায়গায় পরিবর্তন আনলে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা বাড়বে, তাহলে তা করা হবে। আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলেও যে কোনো সংস্কার বিধিমালা দিয়েই করা সম্ভব। পরিবর্তন আনলে এ কর্মসূচি আরও আকর্ষণীয় হবে। অর্থ উপদেষ্টা এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। সার্বিকভাবে এ কর্মসূচি জোরদার করার বিষয়ে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, পেনশন কর্তৃপক্ষ স্থানীয় প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করে উদ্যোগ নেওয়ায় অংশগ্রহণ ব্যাপক হারে বেড়েছিল। কিন্তু পরবর্তী প্রেক্ষাপটে গত কয়েক মাস আর সেভাবে প্রচারণা চালানো সম্ভব হয়নি। এ কারণে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয়ে বাড়তি উদ্যোগ নেয়ার বিষয়টি সভায় উপস্থাপন করা হয়েছে। তবে এ কার্যক্রম চাঙ্গা করতে একটু সময় লাগবে। তা ছাড়া সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, চালু থাকা চারটি স্কিম অব্যাহত থাকবে। আপাতত নতুন কোনো স্কিম অন্তর্ভুক্ত হবে না। পেনশন স্কিমের অর্থ বিনিয়োগ করে যে মুনাফা হয়েছে, তা বণ্টনের বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম মোস্তফা বলেন, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত যে মুনাফা হয়েছে, তার হিসাব করে চলতি মাসেই গ্রহণকারীদের হিসাবে মুনাফার অর্থ বণ্টন করে দেয়া হবে। স্কিম গ্রহণকারীরা তাদের হিসাবে ঢুকে জমা করা অর্থের পরিমাণ ও মুনাফার পরিমাণ দেখতে পারবেন।
সর্বস্তরের জনগণকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা কাঠামোর আওতায় আনতে গত বছরের ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার। প্রাথমিকভাবে প্রবাস, প্রগতি, সুরক্ষা এবং সমতা- এই চার স্কিম নিয়ে সর্বজনীন পেনশন চালু করা হয়। পরবর্তী সময়ে সব স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীর জন্য সর্বজনীন পেনশন স্কিমে 'প্রত্যয় স্কিম' নামে নতুন স্কিম চালু করার ঘোষণা দেয়া হলেও তা কার্যকর করা যায়নি।
সভায় উপস্থাপিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত সর্বজননী পেনশন স্কিমে চাঁদা পরিশোধ করে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন ৩ লাখ ৭২ হাজার ৩৭৮ জন। আর তাদের জমা দেওয়া চাঁদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩০ কোটি ৯৬ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। এর মধ্যে ১২৪ কোটি ৯৯ লাখ ৫৫ হাজার ৬৬৯ টাকা সরকারি ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করা হয়েছে।
পেনশন স্কিমে নিবন্ধের ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছেন দরিদ্র মানুষ, যাদের বার্ষিক আয় সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকা। এদের জন্য সমতা স্কিমের মাসিক চাঁদার পরিমাণ ১ হাজার টাকা। এর মধ্যে ৫০০ টাকা স্কিম গ্রহণকারী দিচ্ছেন এবং বাকি ৫০০ টাকা দিচ্ছে সরকার। এ স্কিমে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৫ হাজার ৮৮৪ জন। আর জমা পড়া চাঁদার পরিমাণ ৪১ কোটি ৭০ লাখ ২৯ হাজার টাকা।
অন্যদিকে পেনশন স্কিম গ্রহণ করে চাঁদা বাবদ সব থেকে বেশি অর্থ জমা দিয়েছেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীরা। তাদের জন্য চালু করা প্রগতি স্কিমে ইতোমধ্যে চাঁদা জমা পড়েছে ৪৭ কোটি ২৫ লাখ ৫০০ টাকা। এ স্কিমে নিবন্ধনকারীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২২ হাজার ৪১০ জন। চাঁদা দেয়া এবং নিবন্ধন করা দুদিক থেকেই সবার নিচে রয়েছে প্রবাসীরা। প্রবাস স্কিমে এখন পর্যন্ত ৯১০ জন ৪ কোটি ৮৫ লাখ ২৪ হাজার টাকার চাঁদা দিয়েছেন। এ ছাড়া অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য সুরক্ষা স্কিমে ৬৩ হাজার ১৭৪ গ্রাহক চাঁদা দিয়েছেন ৩৭ কোটি ১৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা।