উত্তরাঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ বগুড়া সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজ। কলেজটি যার নামে সেই মুজিবুর রহমান ভান্ডারী ছিলেন বগুড়ার খ্যাতনামা শিল্পপতি ও শিক্ষানুরাগী। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের র্যাংকিংয়ে রাজশাহী বোর্ডে মেয়েদের কলেজগুলোর মধ্যে প্রথম হয় এই কলেজ। এর আগে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের র্যাংকিংয়ে ৫ম ও ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে ৬ষ্ঠ স্থান অধিকার করেছিলো।
নারী শিক্ষার প্রসারে ১৯৬৩ খ্রিষ্টাব্দের ৩১ জুলাই বগুড়া শহরের ফুলবাড়ী সুবিল খালের পাশে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করে এলাকাবাসী। ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারি কলেজটি সরকারিকরণ করা হয়।
১০০ জন ছাত্রী নিয়ে শুরু হয়েছিলো এ কলেজের পাঠদান। ১৯৬৬ খ্রিষ্টাব্দে এ কলেজের প্রথম ব্যাচ এইচএসসিতে অংশ নেয়। কৃতকার্যের হার ছিল প্রায় ৬০ শতাংশ।
কলেজটির প্রথম অধ্যক্ষ ছিলেন নুরুন নাহার বেগম। বর্তমানে এ কলেজে ৩টি অনুষদের ১৬ টি বিভাগে প্রায় ৮ হাজার ছাত্রী অধ্যয়নরত।
বর্তমানে ৫৮টি পদের বিপরীতে অধ্যক্ষসহ একজন উপাধ্যক্ষ, পাঁচজন সহযোগী অধ্যপক, ৫৪ জন সহকারী অধ্যাপক ও ৪৯ জন প্রভাষক রয়েছেন। উচ্চমাধ্যমিকে কলেজটিতে ২০১৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত ৩ বছরে রেকর্ড সংখ্যক জিপিএ ৫সহ যথাক্রমে ৯৭ দশমিক ১২, ১০০ ও ৯৯ দশমিক ৪৪ শতাংশ শিক্ষার্থী কৃতকার্য হয়েছেন। অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে ২০১৮ থেকে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত প্রায় ১৫ শতাংশ ছাত্রী ১ম বিভাগ ও ৬৫ শতাংশ ২য় বিভাগ পান।
বর্তমানে কলেজটিতে ৩টি ছাত্রীনিবাস থাকলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা যথেষ্ট নয়। জেলা শহরের বাইরের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন উপযুক্ত আরও কিছু ছাত্রীনিবাস। তবে কলেজটির ডাইনিং ব্যবস্থাপনা খুবই চমৎকার। এছাড়া কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে মেয়েরা নিজেদের মতো করে যেমন ইচ্ছে বাজার ও রান্না করে টাটকা মাছ, মাংস ও সবজি খেতে পারেন।
নিজস্ব সিসি ক্যামেরাসহ অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা জোরদার রেখেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ। তবে শিক্ষার্থীদের কলেজে যাতায়াতের জন্য্য ৪২ আসনের ৩টি মাত্র বাস রয়েছে, যা জেলা শহরের শিক্ষার্থীদেরই যাতায়াত নিশ্চিত করতে যথেষ্ট নয়। উপজেলা থেকে কলেজে আসা ছাত্রীদের জন্যও তাই পর্যাপ্ত পরিবহন জরুরি।
বর্তমান অধ্যক্ষ সবুজায়নের মাধ্যমে ফুল, ফল ও ওষুধি গাছের বাগান করেছেন। টেবিল টেনিস ও ব্যাডমিন্টন খেলার অবকাঠামো ও প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে মুক্তমঞ্চ। তবু কলেজটিতে আরও বিনোদন ব্যবস্থার প্রয়োজন আছে।
পড়াশুনার অনুকুল পরিবেশ বজায় রাখতে বিভাগীয় প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে সম্প্রতি শিক্ষা কার্যক্রমসহ বেশকিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অধ্যক্ষ। কলেজের নিজস্ব উদ্যোগে নির্মাণ করা হয়েছে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল। কলেজ এডুকেশন ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট (সিইডিপি) বাস্তবায়নে সারাদেশে ১২০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বগুড়া মহিলা কলেজের অবস্থান দ্বিতীয়, রাজশাহী বিভাগে প্রথম। এই প্রজেক্টের আওতায় কলেজে অত্যাধুনিক আইসিটি ল্যাব, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্ট সম্বলিত শ্রেণিকক্ষ ও ডিজিটাল লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের আন্তরিকতা ও সততা শিক্ষাক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে উল্লেখ করে কলেজের উপাধ্যক্ষ ড. মো. বেল্লাল হোসেন দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, আমরা চেষ্টা করছি, সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজকে একটি পরিশীলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে।
কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর জোহরা ওয়াহিদা রহমান দৈনিক আমাদের বার্তাকে বলেন, এখানে রাজনৈতিক কোন কলহ বা সহিংসতা নেই। কর্মরত শিক্ষক, কর্মচারিসহ স্থানীয় ছাত্রনেতাদের আন্তরিকতায় অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশে পাঠদান চলছে। চেষ্টা করছি, পরীক্ষার্থীর ফলাফল ও পরিবেশের দিক দিয়ে সারাদেশে বগুড়া সরকারি মহিলা কলেজের সুনাম অক্ষুন্ন রাখতে।