জলদস্যুদের হামলায় বঙ্গোপসাগরে নিখোঁজ ছেলে আলীমকে ফিরে পেতে হাউমাউ করে কাঁদছেন তার মা সাহিদা বেগম। ছেলের সহযোগীদের কয়েকজন ফিরে এলেও আলীমের খোঁজ এখনবধি পাওয়া যায়নি।
তিনি জানালেন, একাদশ শ্রেণিতে লেখাপড়া করেন তার ছেলে আলীম। এসএসসি পরীক্ষার জন্য খরচ জোগাতে সাগরে জেলেদের সঙ্গে মাছ ধরতে গিয়েছিল সে।
কান্নাজড়িত কণ্ঠে সাহিদা বেগম বলেন, যেদিন গেছে পোলাডায় কইয়া গেছে সামনে পরীক্ষা টাকা পয়সা লাগবে, সাগরে কয়েকটা ট্রিপ দিয়া আই। পোলাডায় যে আর আইতে পারবে না হেয়া বুঝলে যাইতে দেতাম না।
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ছেলের সহযোগী জেলেদের দেখতে এসে এভাবেই আর্তনাদে বুক ভাসান সাহিদা।
আলীমের বাড়ি বরগুনার আয়লা পাতাকাটা ইউনিয়নে। তার বাবা নাসির উদ্দিন মারা গেছেন ১৩ বছর আগে বজ্রপাতে। আলীম বরগুনা একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে লেখাপড়া করেন। গত ১৭ ফেরুয়ারি বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের হামলায় নিখোঁজ ৫ জেলের মধ্যে আলীম অন্যতম।
সাগর থেকে ছেলে না ফেরায় কাঁদতে কাঁদতে সাহিদা বেগম বলেন, ওর বাপে মারা গেছে তখন আলীমের বয়স চার বছর। মাইয়াডা তখন পেটে। স্বামী মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্ট কইরা সংসার চালাইছি। এহন পোলাডা বড় অইছে, কাম (কাজ) করে আর লেখাপড়া করে। পোলাডায় সাগরে গেছে মাছ ধরতে, হুনছি ডাকাইতরা নাকি ওগো সাগরে হালাইয়া দেছে। মোর বাবায় কি আইবে না?
আলীমের মা বলেন, আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্ট কইরা পোলা-মাইয়া নিয়া দিন পার করছি। এহনো কষ্ট করি, পোলাডায় মোর কষ্ট দেইখা লেখাপড়ার পাশাপাশি নিজেও কাজ করে। ও সাগরে যাইয়া মাছ ধরে। মোর কষ্ট দেইখা পোলাডায় সাগরে মাছ ধরতে যায়। পোলাডায় মোরে কোনো কাজ করতে দেবে না, হেই জন্য কাজ করে। মোর পোলার স্বপ্ন কি শেষ অইয়া যাইবে?
গত ১৭ ফেরুয়ারি রাত আড়াইটার দিকে পাথরঘাটা থেকে ৮০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্বে পায়রা বন্দর থেকে পশ্চিমে বয়া এলাকায়একটি মাছ ধরা ট্রলারে হামলা চালায় ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি জলদস্যু বাহিনী। এ সময় ওই ট্রলারে ১৮ জেলের ওপরে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়ে তারা ও জেলেদের কুপিয়ে গুরুতর জখম করে মালামাল লুট করে।
তখন দিকবিদিক হয়ে ৯ জেলে সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ে নিখোঁজ হন। নিখোঁজের দুইদিন পর ৪ জেলে উদ্ধার হলে তাদের পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) আব্দুল হক নামে এক জেলের মৃত্যু হয়।
এদিকে নিখোঁজ জেলেদের সন্ধান না পাওয়া পরিবারের উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে।
বরগুনা জেলা মৎস্যজীবী ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, আব্দুল হাই নামে একজন জেলে মারা গেছে। তার লাশ দাফন করা হয়েছে। এখনও ৫ জেলে নিখোঁজ রয়েছের। তার মধ্যে আলীম রয়েছে। তার মাসহ স্বজনরা আজ পাথরঘাটায় আসছে। আমাদের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে।