পরীক্ষার হলে নয়, পেটে গুলি নিয়ে অস্ত্রোপচারকক্ষে

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি |

নির্বাচন কী, তা বোঝার বয়সই হয়নি শিশুটির। অথচ নির্বাচনী সহিংসতার ক্ষত শরীরে নিয়ে হাসপাতালের শয্যায় ছটফট করছে সে। গতকাল বুধবার শিশুটির থাকার কথা ছিল পরীক্ষার কক্ষে। এর বদলে যেতে হয়েছে অস্ত্রোপচারকক্ষে। পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলা অস্ত্রোপচার শেষে ছোট্ট শারমীনের পেট থেকে গুলি বের করেছেন চিকিৎসকেরা।

গত মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর কাথারিয়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দুই চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয় ১০ বছরের শারমীন আক্তার। প্রথমে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখান থেকে চিকিৎসকদের পরামর্শে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্বজনেরা। হাসপাতালের শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন সে।

শারমীনদের বাড়ি বাঁশখালীর কাথারিয়া ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামে। ইউনিয়নের দক্ষিণ বাগমারা আবু আহমেদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে সে। বাড়ির পাশেই বিদ্যালয়টি। এই বিদ্যালয় কেন্দ্রেই ভোট গ্রহণের সময় গোলাগুলির ঘটনায় শিশু শারমীনসহ মোট পাঁচ ব্যক্তি গুলিবিদ্ধ হয়। সবাই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনজনের অবস্থা আশঙ্কামুক্ত বলে জানান চিকিৎসকেরা।

শারমীনরা পাঁচ ভাইবোন। তার বাবা গোলাম কাদের অন্য লোকের জমি চাষ করে সংসার চালান। গতকাল বিকেলে হাসপাতালের শিশু সার্জারি ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, অস্ত্রোপচারপরবর্তী কক্ষে রাখা হয়েছে শারমীনকে। প্রায় অচেতন অবস্থায়ও শিশুটি ছটফট করছে। মেয়ের পায়ে হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছেন মা খালেদা বেগম। তাঁর চোখে পানি। তিনি বলেন, সেদিন সকালে ভোট দেওয়ার জন্য তিনি ও তাঁর স্বামী ভোটকেন্দ্রে যান। কেন্দ্রের কাছেই তাঁদের বাড়ি। হঠাৎ দুপুর পৌনে ১২টার দিকে গোলাগুলি শুরু হয়। তখন তিনি কেন্দ্রেই ছিলেন। পরিস্থিতি একটু শান্ত হলে শুনতে পান তাঁর মেয়ে শারমীন গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তখন সে বাড়ির উঠানে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলছিল।

খালেদা বেগম বলেন, ‘আমার দুনিয়া অন্ধকার হয়ে গেছে। কোন অপরাধে আমার ছোট্ট মেয়েটা এত কষ্ট পাচ্ছে।’

শিশুটির পেটের বাঁ পাশ দিয়ে গুলিটি ঢুকে ডান পাশের নাড়ির ভেতরে আটকে যায় বলে জানান হাসপাতালের শিশু সার্জারি ওয়ার্ডের চিকিৎসক মো. গোলাম হাবীব। তিনি  বলেন, গতকাল বুধবার সকাল পৌনে নয়টায় শিশুটির অস্ত্রোপচার শুরু হয়ে বেলা আড়াইটায় শেষ হয়। বেশ জটিল অস্ত্রোপচার ছিল। তাকে ৪৮ ঘণ্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। শিশুটির সেরে উঠতে বেশ সময় লাগবে বলে জানান তিনি।

গোলাগুলির ওই ঘটনায় গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত মামলা হয়নি বলে জানান বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর হোসেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ইবনে আমিন ও বিদ্রোহী প্রার্থী জয়নাল আবেদীনের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ওই ঘটনা ঘটেছে।

বাঁশখালীর ১৪টি ইউনিয়নে গত মঙ্গলবার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নয়টি, বিএনপি চারটি এবং একটি ইউপিতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জয়ী হয়েছেন। শারমীনের ওপরে সহিংসতা ঘটা কাথারিয়া ইউনিয়নে জয়ী হয়েছেন বিএনপির প্রার্থী মো. শাহজাহান চৌধুরী।

শারমীনের বড় ভাই নাছির উদ্দিন চট্টগ্রাম সিটি কলেজে স্নাতক (সম্মান) রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র। গতকাল বিকেলে তিনি হাসপাতালে  বলেন, শারমীন সবার খুব আদরের। কার গুলিতে সে আহত হয়েছে তা জানেন না তাঁরা। কিন্তু এই ঘটনার বিচার চান তাঁরা। তিনি বলেন, শারমীনকে দেখতে গতকাল বিকেলে হাসপাতালে এসেছিলেন আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী ইবনে আমিন।

শারমীন যে বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে সেই দক্ষিণ বাগমারা আবু আহমেদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২৩ এপ্রিল থেকে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা শুরু হয়েছে। ইউপি নির্বাচনের কারণে পরীক্ষা দুদিন বন্ধ ছিল। গতকাল শারমীনের গণিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. শাহাদাত হোসেন মুঠোফোনে  বলেন, শারমীন পড়াশোনায় মনোযোগী। দুঃখজনক ঘটনায় মেয়েটি এ পরীক্ষায় আর অংশ নিতে পারছে না। সুস্থ হয়ে ওঠার পর তার পড়াশোনার বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

এদিকে শারমীনের চিকিৎসার ভার নিয়েছে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ প্রশাসন। জেলা পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা বলেন, মানবিকতার খাতিরে শিশুটির পাশে দাঁড়িয়েছেন তাঁরা। শিশুটির সার্বক্ষণিক খোঁজখবর রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পুলিশের তিনজন সদস্যকে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0053730010986328