দৈনিক শিক্ষাডটকম, যশোর : এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় মা-বাবার বকুনিতে অভিমান করে বাড়ি ছাড়েন সেসময়কার কিশোর ইদ্রিস আলী মোল্যা। বাড়ি ফেরার জন্য অপহরণ নাটক তৈরি করেন।
অবশেষে ছয় বছর পর তাকে উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার একটি স্টিল মিল থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে আদালতের মাধ্যমে পরিবারে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে ইদ্রিস আলীকে (২৩)। তিনি যশোরের কেশবপুর উপজেলার সারুটিয়া গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে।
বৃহস্পতিবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যশোরের পুলিশ সুপার (এসপি) রেশমা শারমিন বলেন, এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া বাবা মা তাকে বকাঝকা করেন। তখন ইদ্রিস আলী মোল্যা তার বাবা-মায়ের ওপর রাগ করে কাউকে কিছু না জানিয়ে বাড়ি থেকে চলে যান। -২০১৯ সালে ইদ্রিস তার পরিবারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। তখন তিনি নারায়ণগঞ্জ বলে পরিবারকে জানান। বছরে কয়েকবার বিভিন্ন নম্বর থেকে বাবা-মাকে ফোনকল দিতেন তিনি।
দীর্ঘদিন পার হলেও ইদ্রিস তার বাবা-মা, ভাই-বোন বা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ না করায় সবাই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকতেন। গত বছরের ৩০ জুন সকাল ১০টা ৪৬ মিনিটের দিকে ইদ্রিস তার ছোট ভাইয়ের মোবাইল নম্বরে কল করে জানান, নারায়ণগঞ্জ থেকে তিনি বাড়িতে আসছেন। তখন পরিবারের সদস্যরা তাকে এগিয়ে নিতে কেশবপুরের মোহনপুর বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষা করতে থাকেন। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলেও তিনি আর আসেননি। এরপর গত বছরের ৪ জুলাই আরেক মোবাইল নম্বর থেকে ইদ্রিসের ভাইয়ের নম্বরে কল করে এক ব্যক্তি জানান, ইদ্রিসকে খোঁজাখুঁজির দরকার নেই, তিনি ভালো আছেন। তার সঙ্গে কথা বলতে হলে দুই লাখ টাকা দিতে হবে।
পরে ১৩ জুলাই অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি ইদ্রিস আলীর ব্যবহৃত ‘স্পন্দিত চাদর’ নামের ফেসবুক মেসেঞ্জারের মাধ্যমে পুনরায় দুই লক্ষ টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে স্বজনদের জানান। তখন তার পরিবারের লোকজন ইদ্রিসের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তার সব মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর ইদ্রিসের পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধারের জন্য যশোরের পিআইবি পুলিশ সুপার বরাবর আবেদন করেন। তারপর তারা আদালতে মামলা দায়ের করেন। আদালতের নির্দেশে পিবিআই মামলাটির তদন্ত শুরু করে। চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানাধীন ওই স্টিল মিল থেকে ইদ্রিসকে উদ্ধার করে পিবিআইয়ের টিম। ৭ ফেব্রুয়ারি তাকে আদালতে উপস্থাপন করা হলে ফৌজদারী কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারা মোতাবেক তিনি জবানবন্দি দেন।
তিনি জানান, এসএসসি পরীক্ষায় আশানুরূপ ফলাফল না করায় তার বাবা-মা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা তাকে বকাঝকা করেন। রাগে-ক্ষোভে-মনোকষ্টে ইদ্রিস আলী নিজে থেকেই বাড়ি ছেড়ে চলে যান। তিনি নারায়ণগঞ্জে আত্মগোপনে ছিলেন এবং সেখানে পরিচয় গোপন করে হুসাইন নামে পরিচিতি দেন। তাকে কেউ অপহরণ করেনি বা মুক্তিপণ চায়নি। ইদ্রিস আলী নিজেই তার ভাইকে কল করে বাড়ি আসার নাটক সাজিয়েছিলেন। তবে বর্তমানে ইদ্রিস আলী তার বাবা-মা অর্থাৎ পরিবারের সঙ্গে থাকার ইচ্ছা পোষণ করেন বিধায় তাকে তাদের জিম্মায় তুলে দেওয়া হয়।