পল্লীকবি ও শিক্ষাবিদ জসীমউদ্দীনের আজ জন্মদিন। ১৯০৩ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে তিনি ফরিদপুর জেলার তাম্বুলখানা গ্রামে মাতুলালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। পৈতৃক নিবাস একই জেলার গোবিন্দপুর গ্রামে। পিতা আনসারউদ্দীন মোল্লা ছিলেন একজন স্কুল শিক্ষক। শৈশবে ফরিদপুর হিতৈষী স্কুলে জসীমউদ্দীনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হয়। তারপর ফরিদপুর জেলা স্কুল থেকে প্রবেশিকা, রাজেন্দ্র কলেজ থেকে আইএ ও বিএ এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তিনি এমএ পাস করেন।
জসীমউদ্দীনের কবিত্ব শক্তির প্রকাশ ঘটে ছাত্রজীবনেই। তখন থেকেই তিনি তাঁর কবিতায় পল্লিপ্রকৃতি ও পল্লিজীবনের সহজ-সুন্দর রূপটি তুলে ধরেন। পল্লির মাটি ও মানুষের সঙ্গে তাঁর অস্তিত্ব যেন মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছিলো।
কলেজজীবনে ‘কবর’ কবিতা রচনা করে তিনি বিপুল খ্যাতি অর্জন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালেই তাঁর এ কবিতাটি প্রবেশিকা বাংলা সংকলনের অন্তর্ভুক্ত হয়। কবি হিসেবে এটি তার এক অসামান্য সাফল্য।
জসীমউদ্দীন সাহিত্যের নানা শাখায় কাজ করেছেন, যেমন গাথাকাব্য, খন্ডকাব্য, নাটক, স্মৃতিকথা, শিশুসাহিত্য, গল্প-উপন্যাস ইত্যাদি। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ রাখালী প্রকাশিত হয় ১৯২৭ খ্রিষ্টাব্দে। তার প্রধান গ্রন্থগুলি হলো: নক্সী কাঁথার মাঠ (১৯২৯), সোজন বাদিয়ার ঘাট (১৯৩৩), রঙিলা নায়ের মাঝি (১৯৩৫), মাটির কান্না (১৯৫১), সুচয়নী (১৯৬১), পদ্মা নদীর দেশে (১৯৬৯), ভয়াবহ সেই দিনগুলিতে (১৯৭২), পদ্মাপার (১৯৫০), বেদের মেয়ে (১৯৫১), পল্লীবধূ (১৯৫৬), গ্রামের মায়া (১৯৫৯), ঠাকুর বাড়ির আঙিনায় (১৯৬১), জার্মানীর শহরে বন্দরে (১৯৭৫), স্মরণের সরণী বাহি (১৯৭৮), বাঙালীর হাসির গল্প, ডালিম কুমার ইত্যাদি। তাঁর রচিত বাঙ্গালীর হাসির গল্প (দুই খন্ড, ১৯৬০ ও ১৯৬৪) ও বোবা কাহিনী (১৯৬৪) উপন্যাস সুখপাঠ্য।
তাঁর নক্সী কাঁথার মাঠ কাব্যটি দি ফিল্ড অব এমব্রয়ডার্ড কুইল্ট এবং বাঙালীর হাসির গল্প গ্রন্থটি ফোক টেল্স অব ইষ্ট পাকিস্তান নামে ইংরেজিতে অনূদিত হয়েছে। বাংলা কবিতার ধারায় জসীমউদ্দীনের স্থানটি বিশিষ্ট। তাঁর কবিতা অনাড়ম্বর কিন্তু রূপময়। গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ও লোকজীবন জসীমউদ্দীনের কবিতায় নতুন রূপ লাভ করেছে।
জসীমউদ্দীন বাংলা সাহিত্যের একজন বিশেষ সম্মানিত ও বহু পুরস্কারে পুরস্কৃত কবি। তিনি প্রেসিডেন্টের প্রাইড অব পারফরমেন্স পুরস্কার (১৯৫৮), রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার ডিগ্রি (১৯৬৯), বাংলাদেশ সরকারের একুশে পদক (১৯৭৬) ও স্বাধীনতা দিবস পুরস্কারে (মরণোত্তর, ১৯৭৮) ভূষিত হন। তিনি ১৯৭৪ খ্রিষ্টাব্দে বাংলা একাডেমি পুরস্কারের জন্যও মনোনীত হয়েছিলেন, কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ মার্চ তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন ।