দৈনিক শিক্ষাডটকম, জাবি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) আবাসিক হলগুলো থেকে মাদকের সিন্ডিকেট উৎখাত, হল থেকে অছাত্রদের বের করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসনিক ভবন অবরোধ করেছে ধর্ষণকান্ডে আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম ‘নিপীড়নবিরোধী মঞ্চ’। সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টায় প্রশাসনিক ভবনের ফটকে ‘অবরোধ’ লেখা সম্বলিত ব্যানার টানিয়ে দিয়ে ফটকের সামনে প্রতিবাদী সমাবেশ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলছে।
নিপীড়নের মঞ্চের দাবিগুলো হলো— ধর্ষণে অভিযুক্ত ও তাদের পালাতে সহযোগিতাকারীদের রাষ্ট্রীয় আইনের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে, মীর মোশারফ হোসেন হল ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলে প্রাধ্যক্ষসহ হল প্রশাসনের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের তদন্তে কমিটি করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে, আবাসিক হলগুলো থেকে মাদকের সিন্ডিকেট উৎখাত এবং অছাত্রদের বের করতে হবে, ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরদার করার পাশাপাশি প্রক্টর ও নিরাপত্তা শাখার বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং যৌন নিপীড়ন বিরোধী সেল গঠন করতে হবে।
সমাবেশ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, ‘গত ৪ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভা শেষে উপাচার্য বলেছিলেন পাঁচ কর্ম দিবসের মধ্যে অছাত্রদের হল থেকে বের করবেন। গতকাল ছিল শেষ কর্ম দিবস। কিন্তু প্রশাসনকে কেন কর্মতৎপরতা করতে দেখিনি আমরা। আমরা চাই প্রশাসন প্রত্যেকটি হলে প্রতিটি নিয়মিত শিক্ষার্থীকে আসন নিশ্চিত করুক। কক্ষের দরজায় তালিকা টানিয়ে দিক। নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আসন নিশ্চিত হলে স্বাভাবিকভাবেই অবৈধ ছাত্ররা অপসারিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে মাদকের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে তার পেছনে এই প্রশাসনই দায়ী। ধর্ষণের মতো ন্যাকারজনক ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মানসম্মান ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। এর দায় প্রশাসনের। র্যাব বলছে প্রশাসনের দায়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বলছে প্রশাসনের দায়।’
নিপীড়নবিরোধী মঞ্চের সদস্যসচিব পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজ ইসলাম মেঘ বলেন, ‘আমরা ন্যায্য দাবি আদায়ের জন্য এখানে এসে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছি। এই প্রশাসন আমাদেরকে দাঁড়াতে বাধ্য করেছে। আমরা বিশ্বাস করি আজকে যে গুটিকয়েক মানুষ এখানে দাঁড়িয়েছি শুধু তারাই আন্দোলনকারী নয়। বরং প্রত্যেকটি শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিনিধি হিসেবে হাজির হয়েছি আমরা।’
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি বিচার হীনতার সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে। এর আগেও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে কিন্তু বিচারহীনতার ফলে অপরাধীরা পার পেয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় যদি স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে চায় তাহলে একটি সুষ্ঠু তদন্ত দরকার। কিন্তু এই তদন্ত সুষ্ঠুভাবে হবে কিনা তার সংশয় রয়েছে।’