পাঁপড় বিক্রেতা থেকে মেধাবী শিক্ষার্থীর কারিগর

নিজস্ব প্রতিবেদক |

আনন্দ কুমারের জন্ম হয়েছিল ভারতের পাটনায়। দরিদ্র পোস্ট মাস্টারের ঘরে জন্ম নেয়া আনন্দ ছোটবেলা থেকেই গণিত পছন্দ করতেন। গণিতের যেকোনো সমস্যা সমাধান করার জন্য তিনি উদগ্রীব থাকতেন সবসময়। আনন্দের পিতামাতাও সবসময় তাদের ছেলেকে উৎসাহ দিয়েছেন পড়াশুনা করার জন্য। আনন্দের জন্ম যে জায়গায় সেখানে শিক্ষার আলো তখনো ঘরে ঘরে পৌঁছায় নি। পাটনার সে অঞ্চলে দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা ছোটবেলা থেকেই বাবা-মায়ের সাথে কাজে সাহায্য করা শুরু করে আর উচ্চবিত্ত ঘরের সন্তানরা আইআইটিসহ বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পড়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। এসবের মাঝেও আনন্দ নিজেকে ভালো একজন ছাত্র হিসেবে গড়ে তোলেন। একসময় আনন্দ গণিতের বড় একটি সমস্যার সমাধান করে বিদেশি জার্নালে পাঠান এবং সেটি প্রকাশও পায়। আনন্দ কুমার সুযোগ পান ক্যামব্রিজে পড়াশুনা করার।

আনন্দের দরিদ্র পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। কিন্তু বাঁধ সাধে পরিবারের আর্থিক অক্ষমতা। আনন্দ ও তার বাবা সাহায্য চেয়েও কারো সাহায্য পান নি বিদেশে যাবার অর্থ যোগাড় করার জন্য। আনন্দের ক্যামব্রিজে যাওয়া হয় না। এই শোক সইতে না পেরে মারা যান আনন্দের বাবা। আনন্দ ও তার পরিবার পড়ে যায় অথৈ সাগরে। পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায় আনন্দের, তিনি ও তার ছোট ভাই তাদের মাকে নিয়ে পাঁপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। আনন্দ বাসে বাসে গিয়ে পাঁপড় বিক্রি করা শুরু করেন। কিন্তু একদিন ভাগ্যের ফেরে ঠিকই আনন্দ সুযোগ পান ছাত্রদের গণিত শিক্ষা দেয়ার। শিক্ষকতা পেশায় খুব অল্প সময়ের মাঝেই দারুণ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন আনন্দ। কিন্তু একদিন এক দরিদ্র শিক্ষার্থীকে দেখে আনন্দের মনে পড়ে যায় তার অতীতের কথা। তিনি উপলব্ধি করেন তিনি যে সুযোগটি পান নি, সে সুযোগটি পাবার জন্য দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের সাহায্য করবেন তিনি। ভালো চাকরি, অর্থের নিশ্চয়তা ছেড়ে তিনি শুরু করেন নিজের কোচিং সেন্টার- সুপার থার্টি। 

গণিত বিষয়ক বেস্টসেলার বই দেখতে ক্লিক করুন

গণিত করব জয় (চিত্রসহ সহজ ভাষায় দেওয়া আছে, যা ২য় থেকে ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের জন্য গণিত সহায়কা হিসেবে কাজ করবে)

তোত্তোচান: জানালার ধারে ছোট্ট মেয়েটি (শিশুদের শিক্ষাব্যবস্থা)

আনন্দের ইচ্ছা ছিল দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের দেশসেরা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ করে দিতে তিনি যতটুকু সম্ভব সাহায্য করবেন। এজন্য তিনি নিজের ঘরের পাশে ছোট একটি টিনের ঘরে শুরু করেন কোচিং। এই কোচিং এর জন্য ৩০ জন মেধাবী শিক্ষার্থী বাছাই করতেন তিনি, যাদের একটি পরীক্ষার মাধ্যমে এই কোচিং এর শিক্ষার্থী হতে হতো। এসব শিক্ষার্থীর সবাই অতি-দরিদ্র পরিবারের সন্তান, যার কারণে আনন্দ এই ৩০ জন শিক্ষার্থীকে নিজের বাড়িতেই রাখতেন এবং খাবার-দাবারও সরবরাহ করতেন। এসব করতে গিয়ে আনন্দ তার সকল সঞ্চয় ফুরিয়ে ফেলতেন কিন্তু কারও কাছ থেকে সাহায্য নেন নি কখনোই। এই ৩০ জন শিক্ষার্থীকে আনন্দ তৈরি করতেন দেশসেরা সব প্রতিষ্ঠান থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষা দেয়ার জন্য। এই সুপার থার্টি প্রোগ্রাম থেকে ২০০২ সাল থেকে প্রতি বছরই আইআইটিসহ ভারতের দেশসেরা সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা সুযোগ পায়। প্রতি বছরই সাফল্যের হার থাকে প্রায় শতভাগ। আনন্দের হাত ধরে দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীরা প্রতি বছরই সুযোগ পায় তাদের স্বপ্নকে সত্যি করতে। আনন্দ তার জীবনের দুঃখ থেকে শিক্ষা নিয়ে আনন্দ ছড়িয়ে দিয়েছেন শত শত ছাত্রছাত্রীর মাঝে। তার শিক্ষার্থীর অনেকেই এখন নাসায়, কেউবা মেরিন আর্কিটেক্ট, কেউবা ইঞ্জিনিয়ার। অথচ আনন্দ এখনো পাটনার ছোট্ট একটি ক্লাসরুমে বসে ক্লাস নেন তার সুপার থার্টি প্রোগ্রামের দরিদ্র শিক্ষার্থীদের। সেখানে বসে তাদের গণিতকে ভালোবাসতে শেখান, শিক্ষাকে ধনী-দরিদ্র সবার জন্য সমান করতে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যান। এভাবেই তো আনন্দ কুমার আনন্দ কুমার হয়ে উঠেছেন, এভাবেই তিনি বিশ্বকে দেখিয়েছেন  মেধা কীভাবে পড়ে থাকে সড়কের খানাখন্দে, ময়লার গাড়িতে, বাসের দরজায়। শিক্ষক আনন্দ কুমার এভাবেই উদাহরণ গড়ে গিয়েছেন কীভাবে একজন শিক্ষক নিঃস্বার্থভাবে শিক্ষার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যেতে পারেন। পুরো পৃথিবীতেই আরও শত শত আনন্দ কুমার প্রয়োজন শিক্ষাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য।

গণিতের বেস্ট সেলিং ৫টি বই (রকমারি কালেকশন)

গণিতের মজা মজার গণিত - মুহম্মদ জাফর ইকবাল

প্রাণের মাঝে গণিত বাজে ২টি বই রকমারি কালেকশন - সৌমিত্র চক্রবর্তী

গণিত অলিম্পিয়াড প্রস্তুতির সকল বই (রকমারি কালেকশন)


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033650398254395