পাঠাভ্যাস আপনাকে বদলায়!

রাজু আহমেদ, দৈনিক শিক্ষাডটকম |

একজন আমলা, পুলিশ কিংবা অন্য যেকোন কর্মজীবী- যিনি নিয়মত পড়াশোনা করেন, টুকটাক ভাবনাচিন্তা লিখেন মোটকথা পাঠাভ্যাস কেন্দ্রিক জ্ঞান চর্চা করেন তিনি অন্যান্যদের মত অন্যায়ে নিজেকে যুক্ত করতে পারেন না। পারার কথা নয়। যার মধ্যে শব্দের আলো প্রবেশ করেছে তার বিবেক ক্রিয়াশীল হয়। খুঁজলে পাবেন- দুর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, ক্ষমতার অপব্যবহারকারী কিংবা অন্যায় আচরণ-দাপট দেখানো ব্যক্তিবর্গের তালিকায় পাঠক কর্মকর্তা, লেখক শ্রমজীবীকে পাবেন না। যারা জীবনের মাকসাদে ভোগ নির্ধারণ করেছেন তারাই সব অপকর্মের হোতা! অন্তত আমার অভিজ্ঞতায় বইপ্রেমিকে অপরাধী হিসেবে পাইনি। যিনি বই নাড়েন চাড়েন, দু‘চার কথা লেখেন- তাদেরকে সদালাপী, উপকারী এবং সৎ হিসেবে পেয়েছি। আপনার অভিজ্ঞতা কী বলে? 

শিক্ষক মানেই জ্ঞানের চর্চাকারী হবেন- বাস্তবতার সঙ্গে মিলছে না। যিনি যে বিষয় পড়ান সেই বিষয়ের দু‘চারখানা বই থাকা, নেড়েচেড়ে দেখাকে যদি জ্ঞান চর্চার সম্পূর্ণ কাজ মনে করেন তবে আর তর্কে যাচ্ছি না। তবে আমি যে শিক্ষকদের কিংবা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গের কথা বলছি তিনি/তারা জ্ঞানের সাগরে সাঁতরাবেন। জ্ঞান সাগরের বেলাভূমিতে জ্ঞানের নুড়ি কুড়াবেন। যে বিষয়ে পড়াবেন সে বিষয়ের সঙ্গে বাস্তব দুনিয়াকে রিলেট করে দেবেন। এটা করতে হলে তাকে রিসোর্স পার্সন হতে হয়। অধিক ক্ষেত্র বা সূত্র থেকে না জানলে এটা সম্ভব হয় না। শিক্ষকের দুর্নীতি পাঠে ফাঁকি দেয়া। জানানোর প্রশ্নে শিক্ষার্থীদের হক আদায় না করা। যে শিক্ষক পড়ে অতঃপর পড়ান তিনি আর দশজনের মত দুর্নীতি করেন না। অন্যায়কে প্রশ্রয় দিতে পারেন না।

বই আলোর উৎস। পাঠাভ্যাস সেই আলোককে অন্তরের মধ্যে সঞ্চালন করে। জ্ঞানের আলো যার মধ্যে প্রবেশ করে- সে খুনি হলেও তার খুনের তরিকা ভিন্ন। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, জনগণের খাদেম কিংবা সাধারণ-অসাধারণ যে কেউ- যারা বইয়ের সঙ্গে, জ্ঞানের সঙ্গে সম্পর্কিত থাকেন তারা অন্যায় করেন না এবং প্রশ্রয়দান করেন না। কালো অক্ষর থেকে উদগীরণ করা আলো মানুষকে মানবিক করে গড়ে তোলে। বিবেককে শানিত রেখে তবেই দায়িত্ববোধের বেদনা জিইয়ে রাখে। একজন অপড়ুয়া মানুষ যেভাবে অবিবেচক হতে পারে, সীমারের মত কঠোর আচরণ করতে পারে, যত্রতত্র চোখ উল্টাতে পারে কিংবা বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে- বইয়ের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত একজন জ্ঞান আহরণের মৌমাছি সেভাবে সেটা কখনোই পারে না, করে না। 

যে পড়ে এবং যে পড়ে না, যে জানে এবং যে জানে না কিংবা যে লেখে এবং যে লেখে না- এই দুই শ্রেণির মানুষের মধ্যে তুলনা করে মানবিকতা মাপুন। আপনিই প্রমাণ পেয়ে যাবেন। জ্ঞান কিংবা লেখা সমাজ বদলাতে পারে কি-না এই প্রশ্নের জবাব বিতর্কের অবকাশ রাখে কিন্তু যার বই পড়ার অভ্যাস আছে, মনের ভাব প্রকাশের স্বভাব আছে তিনি বাধ্য হয়ে হলেও নীতিবোধ প্রয়োগ করতে প্রস্তুত থাকেন। অনেকগুলো চোখ তাকে অনুসরণ করতে শুরু করে।  যদি পড়া এবং না পড়া- দু‘টোরই সুযোগ থাকে তবে পড়ার পক্ষ নেবেন। হৃদয়কে শুদ্ধ করার জন্য, নিজেকে আলোকিত করা ক্ষেত্রে যতগুলো বিকল্প আছে তার মধ্যে সর্বোত্তম বিকল্প পড়া এবং পড়া। পড়ার সঙ্গে-সঙ্গে চিন্তা করার প্রয়োজন আরো বেশি।  

বই আপনাকে পরিবর্তন করবে। ভেতর থেকে বাহ্যিকসহ স্থায়ী পরিবর্তন। পড়ার পরিবেশ আপনাকে মানুষ বানাবে। যে পড়ে, বিষয়ের গভীর জ্ঞান রাখে তার কাছে বসে দেখুন- সমৃদ্ধ হবেন। আলোর বিচ্ছুরণ ঘটে। বই যাদের চক্ষুশূল কিংবা বই কেনার ক্ষেত্রে যারা মনে করে বই, সে তো আমারও একখানা আছে- তাদের সঙ্গে তর্কে/ঝগড়ায় আপনি জিতবেন না।  যারা বোধের বদলে মাথা দিয়ে ঠেলে, যার মুখের জবাবে হাত ব্যবহার করে তারা এই আলোতেও বর্বর। বই পড়া ছাড়া সভ্যতার পরিবর্তন সম্ভব নয়। বই কেবল সেলফে সাজিয়ে রাখার জন্য নয় বরং মস্তিষ্কের খোরাক তৈরির জন্য কিনুন। পড়বেন তো বদলাবেন। সমাজে যতোজন ভালো লোক তাদের প্রত্যেকেই কমবেশি পড়ে। অথর্ব-বর্বর বইকে বিষের ভান্ডার মনে করে। কাণ্ডজ্ঞানের অভাবে ভোগা রুচিহীনরা বই কেনাকে অপচয় মনে করে। জ্ঞানের থেকে যাদের কাছে টাকার মূল্য বেশি- তাদের এড়িয়ে চলাই শ্রেয়। 

কেবল বই পড়ার আন্দোলন দিয়ে এই সমাজ বদলে দেয়া সম্ভব। পাঠাভ্যাস বাড়ানো ব্যতীত জাতিকে সংশোধন করা প্রায় অসম্ভব। লোকমুখে শুনে সত্য জানা যায় না। সত্য ধর্মগ্রন্থের পৃষ্ঠায়, গল্প-কবিতার বুক থেকে খুঁজে-খুঁজে বের করতে হয়। যে প্রজন্মের পাঠাভ্যাস নেই সে প্রজন্মের মূর্খতাই শক্তি। যারা পড়ে এবং যারা পড়ে না তাদের মধ্যে তুলনার প্রশ্ন অবান্তর। অজ্ঞতা যাদের শক্তি, অহংকার তাদের অস্ত্র। একজন বিনয়ী মানুষ, সৎ এবং ন্যায়পরায়ণ মানুষ অবশ্যই পড়েন। বিশ্বের ধনীরাও কল্পনাতীত সময় বের করেন বইয়ের থেকে জীবনের অর্থ খোঁজার আশায়। বই মানুষের ক্ষুদ্রতাকে প্রকাশ করে। ভুল সংশোধন করতে সহায়তা করে। যিনি অধিক জানে তিনি সবচেয় বেশি চুপ থাকেন। শত্রু না বাড়াতে চাইলে, দুঃখ থেকে বাঁচার জন্য মনের মধ্যে ভুবন তৈরি করতে চাইলে পাঠের বিকল্প নেই। আপনি কী পড়বেন সে ব্যাপারে সিলেক্টিভ হতে পারেন। কিন্তু পড়বেন না অথচ মানুষ হবেন- অসম্ভব! 

লেখক: প্রাবন্ধিক

(মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন)


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু - dainik shiksha পিকনিকের বাসে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আইইউটির ৩ ছাত্রের মৃত্যু অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত - dainik shiksha অনার্স কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণি বাদ দেয়া উচিত ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ১ম থেকে ৯ম শ্রেণিতে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে - dainik shiksha প্রাথমিকে ২০ হাজার শিক্ষকের পদ সৃষ্টি হচ্ছে স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত - dainik shiksha স্কুল শিক্ষাকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্ধিত করা উচিত নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প - dainik shiksha নতুন পাঠ্য বইয়ে থাকছে শহীদ আবু সাঈদ ও মুগ্ধের বীরত্বগাথার গল্প শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি - dainik shiksha শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা পিছিয়ে আছি ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো - dainik shiksha ইএফটিতে বেতন দিতে এমপিও আবেদনের সময় এগোলো কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে - dainik shiksha গুচ্ছভুক্ত ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঞ্চম পর্যায়ের ভর্তি আজকের মধ্যে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.006248950958252