চলতি বছরের ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে চুরি করা প্রবন্ধ ছাপানোর অভিযোগ উঠেছে। ‘শিল্প ও সংস্কৃতি’ (পরীক্ষামূলক সংস্করণ) শীর্ষক বইটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে যে প্রবন্ধটি ছাপা হয়েছে সেটি আসলে নাসরুল্লাহ শাকুরি নামে এক শিক্ষার্থীর লেখা। এরইমধ্যে চুরির অভিযোগ তুলে লেখক স্বত্ব দাবি করেছেন নাসরুল্লাহ শাকুরি। তিনি ঢাকা কলেজের বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্র।
এই চৌর্যবৃত্তির বিষয়টি নিয়ে শোরগোল পড়েছে শিক্ষা পরিমণ্ডলে। যথাযথ তদন্তের দাবি তুলেছে সচেতন মহল। এমন পরিস্থিতিতে জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কর্মকর্তারা বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে জাতীয় পর্যায়ে দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা যে রিপোর্ট দেবে, সে আলোকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম-২০২২ অনুযায়ী আলোচ্য বইটি প্রকাশ করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড। বইটি রচনা করেছেন তানজিল ফাতেমা, ড. মো. কামালউদ্দিন খান, শেখ নিশাত নাজমী, কামরুল হাসান ফেরদৌস, মো. রেজওয়ানুল হক, মুহাম্মদ রাশীদুল হাসান শরীফ, তানজিনা খানম ও সুলতানা সাদেক। সম্পাদনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন ও মঞ্জুর আহমদ।
দৈনিক আমাদের বার্তাকে নাসরুল্লাহ শাকুরি বলেন, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ‘টুঙ্গিপাড়ার সেই ছেলেটি’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখি। সেটি ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের ১৫ আগস্ট প্রকাশিত হয়। সে লেখার কিছু অংশ বাদ দিয়ে একই শিরোনামে ষষ্ঠ শ্রেণির ‘শিল্প ও সংস্কৃতি’ বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তাতে লেখকের নাম উল্লেখ করা হয়নি। একজন লেখকের লেখা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত হওয়া সম্মানের, অত্যন্ত গৌরবের। কিন্তু এখানে লেখকের নাম উল্লেখ না করে লেখায় সামান্য কিছু পরিবর্তন এনে ছাপানো হয়েছে। এজন্য অনুমতিও নেওয়া হয়নি। এটা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত।
আলোচ্য বইটিতে নাসরুল্লাহ শাকুরির অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এ বইয়ের ৫৮ নম্বর পৃষ্ঠায় ‘টুঙ্গিপাড়ার সেই ছেলেটি’ শিরোনামে প্রবন্ধটি অন্তর্ভুক্ত আছে। নাসরুল্লাহ শাকুরির প্রবন্ধটির কিছু অংশ পরিবর্তন করা হয়েছে। কয়েকটি প্যারার অবস্থান কিছুটা পরিবর্তন করে ব্যবহার করা হয়েছে। তবে লেখকের নাম দেয়া হয়নি।
উল্লেখ্য, এবার শ্রেণিভেদে শিক্ষার্থীরা দুই ধরনের বই হাতে পেয়েছেন। এর মধ্যে প্রথম, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রণীত পেয়েছেন। অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পুরনো শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রণীত বই পেয়েছেন। নতুন পাঠ্যপুস্তকগুলোর মধ্যে প্রথম আলোচনায় আসে সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বই। বইটির প্রথম অধ্যায় ‘জীববৈচিত্র্য পাঠে’ দেখা গেছে, বেশকিছু অংশ ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ওয়েবসাইট থেকে হুবহু অনুবাদ করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে যখন ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়, তখন বইটি সম্পাদনার সঙ্গে যুক্ত থাকা অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও অধ্যাপক হাসিনা খান দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেন ।