পাঠ্যবই ছাপার শুরুতেই গলদ ২০০ টন কাগজ বাতিল

নূর মোহাম্মদ |

চলতি বছর পাঠ্যবই ছাপার শুরুতেই বিতর্কের মুখে পড়েছে। বই ছাপার প্রাথমিক ধাপেই নিম্নমানের কাগজ দেয়ায় বাতিল করা হয়েছে ২০০ টন কাগজ। কাগজের জিএসএম ৬০ শতাংশের জায়গা ৫২ থেকে ৫৪ ডিএসএম দেয়ায় এ কাগজ বাতিল করা হয়। এদিকে নিম্নমানের কাগজ ও বইয়ের মান বাছাইয়ের জন্য পরিদর্শন এজেন্ট নিয়োগে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষাক্রম বোর্ড (এনসিটিবি)। প্রাথমিক, মাধ্যমিক স্তরের বইয়ে মান মনিটরিং করার জন্য প্রতি বছর পরিদর্শন এজেন্ট নিয়োগ দেয় এনসিটিবি। প্রাথমিক বই মনিটরিং-এর জন্য পরিদর্শন টিম স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হলেও মাধ্যমিক স্তরের পরিদর্শন টিম নিয়োগে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর  (ডিপিই) ও এনসিটিবিতে নিম্নমানের কাজের একাধিকবার কালো তালিকাভুক্ত ‘ব্যুুরু বাইডার্স’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার আগামী দুই বছরের জন্য এ প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দেয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে এনসিটিবি সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) প্রফেসর ড. মিয়া ইনামুল হক রতন সিদ্দিকী বলেন, নিম্নমানের কাজ ধরার জন্য পরিদর্শন এজেন্ট নিয়োগ দেয়া হয়। ৭ হাজার টন কাগজের পরিদর্শন শুরু হয়েছে। কিছু কাগজ বাতিল হয়েছে। তাই পরিদর্শন এজেন্ট নিয়োগের বিষয়টি সব সময় গুরুত্ব দিয়ে থাকি। 

এনিসিটিবির বিতরণ শাখার তথ্যমতে, মাধ্যমিক স্তরের বই দুইভাগে ছাপানো হয়। প্রথম ভাগে কাগজ কিনে সিট মেশিনে বই ছাপানো হয়। ছোট প্রেসগুলো এ কাজ পেয়ে থাকে। এজন্য ৭ হাজার টন কাগজ ও আর্ট পেপার মিলিয়ে সর্বমোট ৮৩০০ টন কাগজের পরিদর্শনের কাজ পেয়েছে বসুন্ধরা পেপার মিল, আল নূর পেপার মিলসহ ৯টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের পরিদর্শনের কাজ পেয়েছে কন্টিনেন্টাল বিডি। সবাই নির্ধারিত সময়ে কাগজ পরিদর্শনের চিঠি দিলেও ৩ হাজার টন কাগজের কাজ পাওয়া আল নূর পেপার মিলস কাগজ পরিদর্শনের চিঠি দেয় ১ মাস পর। ৩ হাজার টন কাগজের মধ্যে প্রথম ধাপে ২০০ টন কাগজ পরিদর্শন করতে গিয়ে পুরোটাই বাতিল করা হয়েছে। জিসিএম ৬০ গ্রাম হওয়ার কথা থাকলেও তা মানেনি এ পেপার মিল। তারা ‘রি সাইক্লিং’ করে অত্যন্ত নিম্নমানের কাগজ দিয়েছে। জিএসএম ৬০ জায়গায় তারা ৫৫ থেকে ৫৬ জিএসএমের কাগজ দিয়েছে। এজন্য এসব কাগজ বাতিল করে এনসিটিবিকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে এনসিটিবি সদস্য রতন সিদ্দিকী বলেন, কাগজ বাতিল হয়েছে এটা জানি। তবে কত সেটা দেখে বলতে হবে। 

জানা গেছে, মাধ্যমিক স্তরের জন্য চলতি বছর প্রায় ১৯ কোটি বই ছাপানো হবে। এসব বই ও কাগজ মনিটরিংয়ের জন্য প্রতি বছর পরিদর্শন এজেন্ট নিয়োগ দেয়া হয়। এবারো গত ১২ জুন টেন্ডার দেয়া হয়। এতে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। ৬৫ লাখ ৭৪ হাজার টাকায় প্রথম হয় ‘হাই এইচ এস’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ৮০ লাখ ৭০ হাজার টাকায় দ্বিতীয় হয় বালটিক বিডি লিমেটেড, ৮১ লাখ ৩৪ হাজার টাকায় তৃতীয় হয় কন্টিনেন্টাল বিডি, ৮৭ লাখ ৬১ হাজার চতুর্থ হয় ব্যুরু বাইডার্স। আর ১ কোটি ৫ লাখ টাকা দিয়ে পঞ্চম হয় ‘সো বল্ড’ নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান। গত বৃহস্পতিবার প্রথম তিনটি প্রতিষ্ঠানকে বাদ দিয়ে চতুর্থ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছে এনসিটিবি। চতুর্থ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ায় আইন ভঙ্গ ছাড়াও সরকারের ২২ লাখ টাকা অতিরিক্ত গচ্ছা যাচ্ছে।   

সংশ্লিষ্টরা জানান, কাজ পাওয়া ‘ব্যুরু বাইডার্স’ ২০১৬ সালে প্রাথমিকের বই পরিদর্শনের দায়িত্ব পায়। দায়িত্ব অবহেলা ও মুদ্রণ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আঁতাত করে খারাপ কাগজের অনুমোদন দেয়া বই ছাপায় অনুমতি দেয়ায় পারফরমেন্স সিকিউরিটি ২০ শতাংশ প্রায় ৫৭ লাখ টাকা জরিমানা করে ডিপিই। তার আগে এনসিটিবিতে দুইবার কালো তালিকাভুক্ত ও আর্থিক অঙ্কের বড় জরিমানা করা হয় এ প্রতিষ্ঠানকে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানকে চলতি বছর কাগজের দায়িত্ব দেয়ার পেছনে কয়েকজন মুদ্রণ ব্যবসীয়া কলকাঠি নেড়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পুরো কাজটি করেছে এনসিটিবির সদস্য (অর্থ) শাহজাহান আলী, সচিব প্রফেসর ড. মো. নিজামুল করিম ও আনু হেনা নামের একজন কর্মকর্তা।

এ ব্যাপারে সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) রতন সিদ্দিকী বলেন, প্রথমটি অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধা নেই। দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রতিষ্ঠানের দরপত্রের চাহিদা অনুযায়ী মেশিন নাই। যেটি চতুর্থ প্রতিষ্ঠানের সে ধরনের মেশিন থাকায় তাদের কাজ দেয়া হয়েছে  এর বেশি তিনি জানেন না বলে জানান। 

এ ব্যাপারে বিতরণ নিয়ন্ত্রক মো. জিয়াউল হক জানান, দরপত্রে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়নি এতটুকু নিশ্চিয়তা দিতে পারি। তিনি বলেন, পরিদর্শন এজেন্ট নিয়োগের জন্য এনসিটিবি, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর) সমন্বয়ে একটি টেকনিক্যাল কমিটি কাজ করেছে। তাদের সবার সিদ্ধান্তে চতুর্থ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়েছে।   

কর্মকর্তারা বলছেন, বালটিক বিডি গত দুই বছর ধরে মাধ্যমিক বইয়ের পরিদর্শন এজেন্ট নিয়োগ দেয়া হয়। গত মাসের এ দুই বছরের ভালো পারফরমেন্সের জন্য সনদ দেয়া হয়েছে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটি গত এক যুগ ধরে এনসিটিবিতে নিয়মিত কাজ করছে। এ ব্যাপারে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালক আবদুল কাইয়ুম বলেন, আমি ৩৫ বছর ধরে পরিদর্শন শাখায় কাজ করছি। আর এনসিটিবিতে এক যুগের বেশি। এবার কেন আমার প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হলো না তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। একই মেশিন ও জনবল নিয়ে গত বছর কাজ করতে পারলে এবার কেন পারবো না তা প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, এবার যে প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে তা অনেকটা বিতর্কিত। আর কন্টিনেন্টাল বিডি গত বছরে সরকারের প্রায় এক কোটি টাকা সাশ্রয় করে প্রাথমিকের বইয়ের পরিদর্শনের কাজ পায়। আর চলতি বছর মাধ্যমিকের ৭ হাজার টন কাগজের পরিদর্শন করছে। 

 

সৌজন্যে: মানবজমিন


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাকে নির্যাতনের অভিযোগ শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস - dainik shiksha শিক্ষার্থী বিক্ষোভের মধ্যে ইহুদিবিদ্বেষ নিয়ে বিল পাস সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল - dainik shiksha সপ্তদশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষা কাল দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023329257965088