পাঠ্যবই-নোটবইয়ে মনগড়া ইতিহাস, কাঠগড়ায় শিক্ষা ক্যাডার

নিজস্ব প্রতিবেদক |

পাঠ্যবই ও গাইড বইয়ে মনগড়া ইতিহাস লিখে তার মাশুল গুণছেন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। নবম-দশম শ্রেণির সরকারি পাঠ্যবইয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তথ্যবিভ্রাট প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলে রুল জারি করেছে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান ও একজন সদস্যকে তলব করা হয়েছে। আগামী ১০ নভেম্বর তাদের সশরীরে আদালতে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। এনসিটিবির চেয়ারম্যান প্রফেসর নারায়ণ চন্দ্র সাহা ও সদস্য প্রফেসর ড. মো. মশিউজ্জামান দুইজনই বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তা। নারায়ণ চন্দ্র বেসরকারি কলেজ থেকে আত্তীকৃত। 

এদিকে গাইড বইয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী বঙ্গবন্ধুর শাসনামল নিয়ে শিক্ষার্থীদের ভুল তথ্য দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দুইজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। মাগুরার সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান ও কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজের একই বিষয়ের প্রভাষক মো. আবু বকর সিদ্দিকের লেখা একটি গাইড-বইয়ে স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনৈতিক শাসনামল নিয়ে ভুল তথ্য উপস্থাপন করা হয়েছে। একে চরম ইতিহাস বিকৃতি বলছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর । সেইসাথে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে অধিদপ্তর। 

মাধ্যমিকের পাঠ্যবইয়ে ভুল তথ্য :

নবম-দশম শ্রেণির সরকারি পাঠ্যবইয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তথ্যবিভ্রাট প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুলে হাইকোর্ট রুল জারি করেছে। একই সঙ্গে এনসিটিবি চেয়ারম্যান ও একজন সদস্যকে তলব করা হয়েছে। আগামী ১০ নভেম্বর তাদের সশরীরে আদালতে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। হাইকোর্টের বিচারপতি এম  ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মুস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে গতকাল রোববার এ আদেশ দেন। ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

আরও পড়ুন : পাঠ্যবইয়ে তথ্যবিভ্রাট : এনসিটিবি চেয়ারম্যান-সদস্যকে হাইকোর্টে তলব

আদালত সূত্রে জানা গেছে, নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্বসভ্যতা বইয়ের ১৮৭ পৃষ্ঠায় শেখ মুজিবুর রহমানকে মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি বলা হয়েছে। অথচ স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে শেখ মুজিবুর রহমানকে প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি বলা হয়েছে। একই বইয়ের ১৭৪ পৃষ্ঠায় ৯ নম্বর লাইনে 'আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান' না লিখে লেখা হয়েছে দলীয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদের লাইনটিও ভুলভাবে তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে।

নবম ও দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয় বইয়ের ২৯ পৃষ্ঠায় বঙ্গভবনকে লেখা হয়েছে প্রেসিডেন্ট ভবন। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যকাল পাঁচ বছর বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ সংবিধানের কোথাও আলাদাভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যকালের কথা উল্লেখ নেই। এমন অনেক ভুল সংশোধন করতে অনেক অভিভাবক এনসিটিবিকে চিঠি দিলেও কর্ণপাত করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন এক অভিভাবক।

রিটকারীর আইনজীবী জানান, তারা চান দ্রুত এই রিটের শুনানি হোক। কারণ নতুন শিক্ষাবর্ষে এসব ভুল সংশোধন না হলে আবারও শিক্ষার্থীদের হাতে ভুল বই যাবে। তাই হাইকোর্টে এ রিট করা হয়।  

গাইড বইয়ে ইতিহাস বিকৃত করা শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা : 

গাইড বইয়ে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে দুইজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর। তাদের শোকজ করা হয়েছে। অভিযুক্তরা হলেন, মাগুরার সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান ও কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে প্রভাষক মো. আবু বকর সিদ্দিক। তারা যৌথভাবে ব্যতিক্রম পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ বছর মেয়াদি ডিগ্রি (পাস) দ্বিতীয় বর্ষের ‘বাংলাদেশের সরকার ও রাজনীতি’(রাষ্ট্রবিজ্ঞান তৃতীয় পত্র) বিষয়ের গাইড বইয়ের লেখক। এ গাইডে ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগে তাদের শোকজ করা হয়েছে। গতকাল রোববার অধিদপ্তর থেকে তাদের শোকজ নোটিশ পাঠানো হয়। 

জানা গেছে,  ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে চতুর্থবার প্রকাশিত বইয়ের ৩৯৮ পৃষ্ঠায় স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনৈতিক শাসনামল নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছেন যা চরম ইতিহাস বিকৃতি। এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে সহকারী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান ও প্রভাষক মো. আবু বকর সিদ্দিককে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়, মাগুরার সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. আসাদুজ্জামান ও কুষ্টিয়া সরকারি মহিলা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ে প্রভাষক মো. আবু বকর সিদ্দিক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন বছর মেয়াদি ডিগ্রি (পাস) দ্বিতীয় বর্ষের ‘বাংলাদেশের সরকার ও রাজনীতি’ ব্যতিক্রম পাবলিকেশন্স-এর একটি গাইড বইয়ের লেখক। বইয়ের চতুর্থ প্রকাশ, সেপ্টেম্বর-২০১৯ এর ৩৯৮ পৃষ্ঠায় স্বাধীনতা পরবর্তী রাজনৈতিক শাসনামল নিয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে ভুল তথ্য উপস্থাপন করেছেন, যা চরম ইতিহাস বিকৃতি। লেখায় বঙ্গবন্ধু ও আমাদের স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করেছেন যা সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯ এর ২৩ (১) ধারার পরিপন্থী। এ কর্মকাণ্ড সরকারি কর্মচারী (শৃংখলা ও আপীল) বিধিমালা-২০১৮ এর ২ (খ), ২ (উ) মোতাবেক অসদাচরণও বটে। 

তাই গাইড বইয়ে ইতিহাস বিকৃত করার অভিযোগে কেন তাদের বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা শোকজ নোটিশ পাওয়ার সাত কর্ম দিবসের মধ্যে জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত দুইজন শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা সম্ভব হয়নি। তবে ব্যতিক্রম পাবলিকেশন্স-এর প্রকাশক সাহেব আলী প্রিন্স গতকাল রোববার দৈনিক আমাদের বার্তার কাছে দাবি করেন, বর্তমানে বাজারে থাকা গাইড বইয়ে ভুল তথ্য নেই। বিকৃত তথ্যের কথা স্বীকার করেছেন তিনি। 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি - dainik shiksha আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে - dainik shiksha সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড - dainik shiksha মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি - dainik shiksha ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ - dainik shiksha শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি - dainik shiksha সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042848587036133