শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ প্রথম বলেছেন, পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জনের কাজ সমন্বয়ের জন্য অনানুষ্ঠানিকভাবে আলোচনা হয়েছিল। সেটাই ভুলবশত প্রজ্ঞাপন আকারে চলে যায়। এ নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল, এ জন্যই কমিটি বাতিল করা হয়েছে।
বিনামূল্যের পাঠ্যপুস্তক সংশোধন ও পরিমার্জনের কাজ সমন্বয়ের লক্ষ্যে গঠিত সমন্বয় কমিটি বাতিল করার পর সিদ্ধান্তটি নিয়ে বিতর্ক ও সমালোচনা হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, এটা সরকারের দুর্বলতার প্রকাশ। এমন প্রেক্ষাপটে আজ রোববার ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এমন কথা বলেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। তারা আওয়ামী লীগ সরকারের করা নতুন শিক্ষাক্রম অব্যাহত না রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্ত হয়েছে যে, ২০১২ সালের পুরোনো শিক্ষাক্রম অনুযায়ী আগামী বছর পাঠ্যবই দেওয়া হবে। ২০২৬ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রম প্রণয়ন করে বই দেওয়ার পরিকল্পনাও আছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রমতে, আগামী বছর চতুর্থ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত নতুন শিক্ষাক্রমের পরিবর্তে ২০১২ সালে প্রণীত শিক্ষাক্রমের আলোকে তৈরি পাঠ্যবই পাবে শিক্ষার্থীরা। তবে বইয়ের বিষয়বস্তুতে কিছু পরিবর্তন হবে। বিশেষ করে ইতিহাসভিত্তিক বিষয়ে বেশি পরিবর্তন হচ্ছে। দু-একটি নতুন গল্পও যুক্ত হতে পারে।
এনসিটিবি সূত্র বলছে, পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে পাঠ্যবই আছে। সেই বই পরিমার্জন করে ছাপার উপযোগী করা হচ্ছে। কাজটি করছেন ৫০ জনের বেশি বিশেষজ্ঞ। তাঁদের মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক এবং শিক্ষা নিয়ে কাজ করা একাধিক ব্যক্তি যুক্ত হয়েছেন।
সমন্বয় কমিটিতে কারা ছিলেন
১৫ সেপ্টেম্বর এনসিটিবি প্রণীত ও মুদ্রিত সব পাঠ্যপুস্তক সংশোধন এবং পরিমার্জন কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন ও সমন্বয়ের লক্ষ্যে ১০ সদস্যের একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করেছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব খ ম কবিরুল ইসলামকে আহ্বায়ক করে গঠিত ওই কমিটিতে সদস্য হিসেবে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মাসুদ আখতার খান, এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম রিয়াজুল হাসান, সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক রবিউল কবীর চৌধুরী, সদস্য (প্রাথমিক শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক এ এফ এম সারোয়ার জাহান, গবেষক রাখাল রাহা এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. ইয়ানুর রহমান (সদস্যসচিব)।
এর মধ্যে অধ্যাপক সামিনা লুৎফা ও অধ্যাপক কামরুল হাসানকে নিয়ে আপত্তি তোলে ধর্মভিত্তিক কয়েকটি সংগঠন। তাঁদের ‘ইসলামবিদ্বেষী’ বলে দাবি করে তারা।
অধ্যাপক সামিনা লুৎফা ও অধ্যাপক কামরুল হাসান আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় সক্রিয় ছিলেন। তাঁদের ‘ইসলামবিদ্বেষী’ দাবি করে বক্তব্য দেওয়ার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন অনেকে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এ ঘটনায় দুই শিক্ষকের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। তাঁদের নিরাপদে চলাচলের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।