পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগে ১০ ছাত্রকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। সোমবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে ৬ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন, বিক্ষোভ ও উপাচার্যের কার্যালয় অবরুদ্ধ করেন।
সোমবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের এক জরুরি বৈঠকে দুইটি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের মঙ্গলবার সকালের মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আগামী ১৬ নভেম্বরের প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে এবং অফিস খোলা থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় জনসংযোগ বিভাগের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন চৌধুরী এ তথ্য জানান।
আরও পড়ুন: পাবনা প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনে তালা
সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ছয় দফা বাস্তবায়নের দাবি করে আসছেন; কর্তৃপক্ষ দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছে। অথচ ৩/৪ মাস অতিবাহিত হলেও প্রশাসন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। এর আগেও শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে আন্দোলন করেছেন।
প্রতিবার আশ্বাস দিয়ে আন্দোলন থামিয়ে দিয়েছে, কিন্তু দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও দাবি বাস্তবায়িত করা হয়নি বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।
শিক্ষার্থীদের ৬ দফা দাবি হলো- ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষসহ পরবর্তী সকল ব্যাচসমূহ অর্ডিন্যান্সের আওতাভুক্ত করা, হলের ডাইনিংয়ের খাবার উন্নয়নের জন্য ভর্তূকি প্রদান, ক্লাস রুম ও চেয়ার সংকট দূর করা, পরিবহন সংকট নিরসণ করা, ক্যাম্পাসে ওয়াইফাই এর ব্যবস্থা করা এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন করা।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৬ দফা দাবিতে বেলা ১১টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। তারা উপাচার্যের বাসভবনও অবরুদ্ধ করেন।
এ সময় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন বলেও প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য।
সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন চৌধুরীবলেন, “সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রিজেন্ট বোর্ডের জরুরি সভায় পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে এবং এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১০ ছাত্রকে চিহ্নিত করে তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।”
“মঙ্গলবার সকাল ৯টার মধ্যে বঙ্গবন্ধু হলের ও সকাল ১১টার মধ্যে শেখ হাসিনা হলের সকল আবাসিক শিক্ষার্থীকে হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। তবে আগামী ১৬ নভেম্বর প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা যথারীতি অনুষ্ঠিত হবে এবং অফিস খোলা থাকবে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বিভাগের চেয়ারম্যান ও ডিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বলেও ফারুক হোসেন জানান।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রোস্তম আলী ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি আওয়াল কবির জয় বলেন, “বিষয়টি উদ্বেগের। এটি প্রত্যাশিত নয়। আশা করি ভিসি স্যার দ্রুত এই অবস্থা নিরসনের উদ্যোগ নেবেন।”
পাবনা সদর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার এবনে মিজান বলেন, “ছাত্ররা তাদের দাবি নিয়ে আন্দোলন করছেন। ভিসি স্যারের সাথে আমার কথা হয়েছে। তিনি বৈঠকের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করবেন।”
পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে বলে তিনি জানান।
পাবনা সদর থানার ওসি ওবাইদুল হক জানান, “বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের বিষয়টি প্রশাসন আমাদের অবহিত করলে সেখানে এসআই মনিরের নেতৃত্বে একটি দল পাঠানো হয়। তবে আইনশৃংখলা স্বাভাবিক আছে।”
