পাবলিক পরীক্ষায় পাস নম্বর ৪০ করার উদ্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক |

পাবলিক পরীক্ষায় পূর্ণমান ১০০-এর বিপরীতে পাস নম্বর নির্ধারণ করা হচ্ছে ৪০। যুগ যুগ ধরে যা ৩৩ রয়েছে। ২০১৪  খ্রিষ্টাব্দে তৎকালীন শিক্ষাসচিব মো. নজরুল ইসলাম খান এ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। তারই ধারাবহিকতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিষয়টি বাস্তবায়ন করার চিন্তা করছে। পৃথিবীর অধিকাংশ উন্নত দেশে পাস নস্বর ৪০। 

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, গ্রেড পদ্ধতি চালু হওয়ার পর পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার বাড়ছে। পাশাপাশি নতুন এই ব্যবস্থায় উত্তরপত্রে শিক্ষকদের নম্বর দেওয়ার প্রবণতায় আগের থেকে বেড়েছে। পরীক্ষার্থীরা এখন পরীক্ষায় আগের থেকে বেশি নম্বর পাচ্ছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে পরীক্ষায় পাস নম্বর ৪০ করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।

সাবেক শিক্ষা সচিব ও দৈনিক শিক্ষার প্রধান উপদেষ্টা মো. নজরুল ইসলাম খান বলেন, গত এক দশকে এসএসসি, এইচএসসিসহ সব পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার বাড়ছে। কিন্তু শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অভিযোগ করে আসছেন, পাসের হার ও জিপিএ-৫ বাড়লেও শিক্ষার মান সেই অর্থে বাড়ছে না। এসব কারণে গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নানা ধরনের প্রশ্ন তুলে আসছেন।

এন আই খান বলেন, একলাফে নয়, চার ধাপে বাড়ানো উচিত পাস নম্বর।  

দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা এটি নিয়ে কাজ করছেন বর্তমানে। আগামী ২৬ জুন এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন পেশ করবেন তারা। গত ১২ জুন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির উপস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে সব শিক্ষা বোর্ডের সমন্বয়ে গঠিত আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ১১টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানই উপস্থিত ছিলেন। সভায় উপস্থিত একটি বোর্ডের চেয়ারম্যান দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, 'সভায় পাবলিক পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা নিয়ে নানা বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।'

সূত্র জানায়, পাবলিক পরীক্ষার পাস নম্বর ও ফল প্রকাশ নিয়ে সভায় বিশদ আলোচনা হয়। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি সভায় বলেন, আমাদের দেশে শিক্ষার্থী ও অভিভাবক সবাই জিপিএ ৫ এর জন্য ছুটছে। অথচ পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেই জিপিএ ৪ এর মধ্যে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তিনি এ বিষয়টি ভেবে দেখার আহ্বান জানান। এর পরই এ নিয়ে কাজ শুরু করেছেন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা। 

আগামী ২৬ জুন আবারও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যানদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর সভা হওয়ার কথা রয়েছে বলে জানান কয়েকজন বোর্ড চেয়ারম্যান।

২০০১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে পাবলিক পরীক্ষায় গ্রেডিং সিস্টেম চালু করা হয়। এ পদ্ধতি চালুর পর থেকে প্রতি বছর পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার বাড়ছে। পাশাপাশি নতুন সৃজনশীল প্রশ্নপত্র ও মূল্যায়ন ব্যবস্থায় উত্তরপত্রে শিক্ষকদের নম্বর দেওয়ার প্রবণতাও আগের থেকে বেড়েছে। পরীক্ষার্থীরা এখন পরীক্ষায় আগের থেকে বেশি নম্বর পাচ্ছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে পরীক্ষায় পাস নম্বর ৪০ করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিষয়টি এখনও চিন্তা-ভাবনার মধ্যে থাকলেও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা সবাই ইতিবাচক। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, 'বিষয়টি আমাদের ভাবনায় রয়েছে। শিক্ষার উন্নয়নে বিভিন্ন চিন্তা-ভাবনা আমাদের আছে।'

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এসএসসি, এইচএসসি, জেএসসি ও প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় পাসের হার প্রতি বছর বাড়ছে। কিন্তু শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা অভিযোগ করে আসছেন, পাসের হার ও জিপিএ ৫ বাড়লেও শিক্ষার মান সেই অর্থে বাড়ছে না। এসব কারণে গত কয়েক বছর ধরে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নানা ধরনের প্রশ্ন তুলে আসছেন।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০০১ খ্রিষ্টাব্দে গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হয়। সেখানে ৮০ থেকে ১০০ নম্বর প্রাপ্তদের গ্রেড পয়েন্ট ধরা হয় ৫। লেটার গ্রেড এ প্লাস। এটিই সর্বোচ্চ গ্রেড। এবার এই পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা হচ্ছে। নতুন গ্রেডিং পদ্ধতিতে সর্বোচ্চ গ্রেড হবে ৪। যার নম্বর হবে ৯৫ থেকে ১০০। এ পদ্ধতিতে লেটার গ্রেডে এ প্লাস বলতে কিছু থাকবে না। প্রতি পাঁচ নম্বরের মধ্যে থাকবে দশমিক ১ গ্রেড। পাস নম্বর হবে ৪০। এ বছরের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা (জেএসসি) থেকেই এ পদ্ধতি কার্যকর করা হতে পারে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, 'নতুন পদ্ধতিতেও সিজিপিএ নয়, জিপিএতেই ফল প্রকাশ করা হবে। সর্বোচ্চ গ্রেড হবে ৪। চলতি বছরের জেএসসি থেকে তা কার্যকর করার কথা ভাবা হচ্ছে। এর পর ২০২০ খ্রিষ্টাব্দের এসএসসি ও এইচএসসি সমমানের পরীক্ষাসহ সব পাবলিক পরীক্ষাতেই এ পদ্ধতি কার্যকর হবে।' এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সব মান ও দেশীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে অর্থাৎ সব প্রতিষ্ঠান যেন তার ফলটা একটি অভিন্ন পদ্ধতিতে প্রণয়ন করতে পারে। 

জানা গেছে, বর্তমান পদ্ধতিতে দেশের মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার ফল প্রকাশের সঙ্গে উচ্চশিক্ষার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। প্রাথমিক সমাপনী বা পিইসি পরীক্ষা থেকে জেএসসি, জেডিসি, এসএসসি, এইচএসসি স্তরের প্রতিটিতেই সর্বোচ্চ ফল জিপিএ ৫। অথচ দেশের বেশিরভাগ প্রাইভেট ও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বোচ্চ ফল সিজিপিএ ৪। বিশ্বের বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ফল প্রকাশ করছে। অথচ আমাদের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে তা করা হচ্ছে না।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীলরা মনে করছেন, গ্রেডিং পদ্ধতিতে পরিবর্তন এলে কমবে শিক্ষার্থীদের নম্বরভিত্তিক বৈষম্য। একই সঙ্গে জিপিএ ৫ নিয়ে এক শ্রেণির অভিভাবকের অসুস্থ প্রতিযোগিতা কমবে। আর শিক্ষাবিদরা জানান, পুরোপুরি প্রস্তুতি নিয়েই নতুন এ পদ্ধতি চালু করা উচিত। শিক্ষার্থীদের যাতে কোনো ভোগান্তি না হয়, সেটিকে বিবেচনায় নিতে হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি - dainik shiksha আপিলে যাবে না শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিকে বৃহস্পতিবারও ছুটি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত - dainik shiksha জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ মে’র পরীক্ষা স্থগিত শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের শাস্তি কোনো সমাধান নয় হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় - dainik shiksha হিটস্ট্রোকের লক্ষণ ও করণীয় দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে - dainik shiksha সেশনজটের শঙ্কা বুয়েটে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড - dainik shiksha মাধ্যমিক প্রজন্মের উপার্জন কমবে ৩১ বিলিয়ন পাউন্ড ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি - dainik shiksha ফিলিস্তিনিদের পক্ষে নির্মিত তাঁবু গুটাতে কলাম্বিয়া শিক্ষার্থীদের অস্বীকৃতি শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ - dainik shiksha শিক্ষিকার উত্যক্তকারীকে ধরতে গিয়ে হামলার শিকার পুলিশ সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি - dainik shiksha সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্তির প্রতিবাদে ঢাবি শিক্ষক সমিতির কর্মসূচি please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0032789707183838