পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। এখানে উচ্চতর জ্ঞান বিতরণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের উন্নত মানসিকতাসম্পন্ন করে গড়ে তোলা হয়। গবেষণার মাধ্যমে অর্জিত জ্ঞানের সর্বোত্তম প্রয়োগে উৎসাহিত করা হয়। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তেমন পরিবেশ আছে কি? বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা না হয় বাদই দিলাম। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও গবেষণা নেই বললেই চলে। উপাচার্য নিয়োগ করা হয় রাজনৈতিক বিবেচনায়। শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়। 

সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, শিক্ষকরা এখন শিক্ষার চেয়ে রাজনীতি করতেই ব্যস্ত থাকেন বেশি। নৈতিকতার অধঃপতন ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। প্রায়ই ঘটছে যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা। এমন অভিযোগ আসছে উপাচার্যদের বিরুদ্ধেও। আসছে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগও। সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসির তদন্তেও সত্যতা মিলেছে এমন অভিযোগের। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে প্রমাণ ও সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হলেও প্রায় কোনো ব্যবস্থাই নেওয়া হয় না অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে।

বিশ্ব র্যাংকিংয়ে দিন দিনই পিছিয়ে যাচ্ছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। লন্ডনভিত্তিক শিক্ষাবিষয়ক সাময়িকী টাইমস হায়ার এডুকেশন প্রতিবছর বিশ্বের সেরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর তালিকা করে। শিক্ষার পরিবেশ, গবেষণার সংখ্যা ও সুনাম, সাইটেশন বা গবেষণার উদ্ধৃতি, এ খাত থেকে আয় এবং আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বা সংশ্লিষ্টতাসহ পাঁচটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই তালিকা করা হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য যে প্রথম এক হাজারের মধ্যে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ই নেই। ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, দেশে ৪৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, তার মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান রয়েছে ৪৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রতিবছর রাষ্ট্র তথা জনগণের বিপুল অর্থ ব্যয় হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায়। কিন্তু জাতি কি পাচ্ছে? ধারাবাহিক অধোগতি? এখন এসব বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠছে দুর্নীতির আখড়া। আর তাতে জড়িয়ে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। ইউজিসি সাবেক ও বর্তমান মিলিয়ে ১০ উপাচার্যের অনিয়মের অভিযোগ তদন্ত করছে। সম্প্রতি তিনজন উপাচার্যের ব্যাপারে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে। অতীতের মতো এই তদন্ত প্রতিবেদনও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ফাইলচাপা পড়ে যাবে কি? 

অর্থনৈতিকভাবে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। মাথাপিছু আয় কয়েক গুণ বেড়েছে। স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ ঘটেছে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক অনেক সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশকে পেছনে ফেলে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু আসল জায়গা অর্থাৎ শিক্ষায় যদি আমরা এভাবে পিছিয়ে যাই, তাহলে সেই উন্নয়ন স্থায়ী হবে কি? শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এমন অধোগতির কারণ এখানে যোগ্যতার চেয়ে রাজনৈতিক বিবেচনা বেশি গুরুত্ব পায়। সে কারণে শিক্ষকরাও শিক্ষা ও গবেষণার চেয়ে রাজনীতিকেই বেশি গুরুত্ব দেন। ক্রমে বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে উঠছে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও অনিয়মের আখড়া।

আমরা উন্নত দেশ হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। উন্নত দেশের অভিজ্ঞতা বলে, সে জন্য শিক্ষিত জাতি অপরিহার্য। রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0044760704040527