পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ক্লাস নেন প্রাইভেটে: সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী মনে করেন বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় ঠাঁই না পাওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক। শিক্ষার গুণগত মানের ব্যাপারে প্রশ্ন তুলে এই গবেষক বলেন, ‘পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এখন ব্যস্ত প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়া নিয়ে। সঙ্গত কারণেই উচ্চশিক্ষার মান কমছে।’

আজ শনিবার (১১ মে ) জাগো নিউজকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ বিষয়ে আলোচনা করেন এই শিক্ষাবিদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু। 

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘সত্যি বলতে কী, আমরা এখনও আমাদের শিক্ষার উপযুক্ত কাঠামোই দাঁড় করাতে পারেনি। তা সেটা প্রাথমিক স্তরে হোক আর প্রাইমারি স্তরেই হোক। শিক্ষার সর্বনাশ ঘটেছে অতিরিক্ত পাবলিক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে। কোনোপ্রকার সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করেই একের পর এক পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। তাতে করে গোটা শিক্ষার আয়োজন পরীক্ষা নির্ভর হয়ে পড়ছে। যেটুকু পড়লে পরীক্ষায় ভালো করা যাবে, সেটুকু নিয়েই ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। ক্লাসে মন নেই, গোটা বইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক নেই। আর শিক্ষক, অভিভাবকরাও তাতেই আটকে আছেন। এই ধারণা কোনোভাবেই শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নে সহায়ক হতে পারে না।’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষা এখন পুঁজি নির্ভর। রাষ্ট্র, সমাজ পুঁজির ওপর দায় দিতেই অভ্যস্ত। শিক্ষাকে উপলক্ষ করে কত রকমের ব্যবসা! শত শত কোচিং ব্যবসা গড়ে ওঠেছে। কোচিং করে শিক্ষার মূলে যাওয়া সম্ভব না। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ক্লাসে না পড়িয়ে কোচিংয়ে গিয়ে পড়াচ্ছেন। রীতিমত ফাঁদ পেতে এই ব্যবসা। আবার গাইড বই বের করে শিক্ষার আরও ক্ষতি করা হয়েছে। নির্দিষ্ট ছকের বাইরে আর শিক্ষার্থীরা ভাবতে পারছে না। সর্বশেষ আমরা সৃজনশীল পদ্ধতির সংযোজন দেখলাম। কাজে আসল না। এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের আরও ক্ষতি করেছে। অর্থাৎ সব আয়োজন মূলত পরীক্ষাকে কেন্দ্র করেই।’

এই এমিরেটরস অধ্যাপক বলেন, ‘পরীক্ষা নির্ভর শিক্ষা আসলে কী দিচ্ছে আমাদের, তা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার সময়ে দেখা যাচ্ছে। হাজার হাজার শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষায় ফেল করছে। তারা ন্যূনতম নম্বরও পাচ্ছে না। আবার যারা পাস করে ভর্তি হচ্ছে, তাদেরও অবস্থাও ভালো বলা যাবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েই শিক্ষার্থীরা চাকরির পড়া নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। তাদের মধ্যে কোনো গবেষণার প্রবণতা নেই, সৃজনশীলতা নেই। নেই সাংস্কৃতিক চেতনার মধ্যে দিয়ে শিক্ষা অর্জনের প্রবণতা। আবার চাকরির পড়া পড়েও যখন লাখ লাখ শিক্ষার্থী বেকার হয়ে পড়ছেন, তখন অন্যরাও শিক্ষার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।’

উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে তিনি আরও বলেন, ‘মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও আর আগ্রহ নিয়ে পড়ান না। তাদের মধ্যেও গবেষণার প্রবণতা নেই। বেতন-ভাতার ঘাটতি নিয়েও তাদের মধ্যে হতাশা আছে। এ কারণেই অর্থের পেছনে ছুটছেন। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষকই এখন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। যেখানে টাকা সেখানেই ছুটছেন। এটি একেবারে অনৈতিকভাবেই। সুতরাং বিশ্ব র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই, এতে আমি অবাক হইনি।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ - dainik shiksha সব মাদরাসার ওয়েবসাইট ও তথ্য হালনাগাদের নির্দেশ অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক : দুই মন্ত্রণালয় যা করবে নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ - dainik shiksha নার্সিং-মিডওয়াইফারি ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ স্থগিতের নেপথ্যে - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষকদের বদলির উদ্যোগ স্থগিতের নেপথ্যে শিক্ষাখাতে অপপ্রচারে ভূয়া অভিভাবক ফোরাম, জাল সনদের অধ্যক্ষ - dainik shiksha শিক্ষাখাতে অপপ্রচারে ভূয়া অভিভাবক ফোরাম, জাল সনদের অধ্যক্ষ please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.002485990524292