পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

গত ২৫ জুন ইউজিসির এক ভার্চুয়াল সভায় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। যদিও এক মাস পূর্বেই ঘোষণা করা হয় যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে অনলাইন ক্লাসের পরিবেশ ও প্রস্তুতি কোনোটিই নেই। করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদেরকে সেশনজট থেকে মুক্ত রাখতে ও পড়াশোনার পরিবেশ রাখতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেয়। মে মাসে ইউজিসির জরিপে বলা হয়, ৮৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর ক্লাস করার মতো ডিভাইস রয়েছে। কিন্তু এর পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট সেবার খরচসহ অন্যান্য অসুবিধার কথা তুলে ধরা হয়। রোববার (২৩ আগস্ট) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরও জানা যায়, ইউজিসি জুনের পাঁচ তারিখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জরিপের ফলাফল সাবমিট করে এবং বলে যে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইন ক্লাস নেওয়ার অবস্থায় নেই। অন্য দিকে এডিবির পক্ষ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের ফ্রি ইন্টারনেট দেওয়ার কথা ইউজিসি থেকে বলা হলেও সে বিষয়ে কোনো অগ্রগতি দৃষ্টিগোচর হয়নি। অনলাইন ক্লাস নেওয়ার জন্য যে শিক্ষার্থীদের আর্থিক, মানসিক ও প্রযুক্তিগত অবস্থা এবং কার্যকরী নীতিমালা ও শিক্ষকদের যে প্রশিক্ষণ থাকা দরকার সেরকম কোনো অবস্থা তৈরি না হলেও সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হয়।

অনলাইন ক্লাসের পক্ষে-বিপক্ষে অনেক আলোচনা হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। এক্ষেত্রে চমত্কার ব্যাপার হলো—সবই হচ্ছে অনলাইন মাধ্যমেই। এটাই স্বাভাবিক বর্তমান পরিস্থিতিতে। তবে যে সমস্যার সম্মুখীন আমরা হচ্ছি, তা হলো অনলাইনে যুক্ত না থাকা শিক্ষার্থীদের বাস্তবিক অবস্থা ও আসল সংখ্যা অজানাই রয়ে গেছে। অনেক বিভাগে জরিপ হলেও সেটা নামকাওয়াস্তে এবং তা দ্বারা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল উঠে আসেনি। যার দরুন শিক্ষার্থীদের অনেকের অবস্থা অবগতির বাইরে রয়ে গেছে এবং অনেক শিক্ষক ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের অবস্থা জেনে তাদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী যেহেতু নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের তাই তাদের অনলাইন ক্লাসের জন্য জরুরি স্মার্টফোন/ল্যাপটপ/ট্যাব নেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে কি না তা অনিশ্চিত। এমতাবস্থায় শিক্ষার্থীদের এককালীন সুদবিহীন ঋণদান এবং ঋণ অথবা কিস্তিতে ল্যাপটপ/ট্যাব/স্মার্টফোন কেনার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি ছিল। যা করা হয়নি। কিছুদিন আগে প্রকাশিত ডেটা প্যাকেজের মূল্য বিচারে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান আমরা দেখেছি। করানোর সময়ে শিক্ষার্থীদের পার্টটাইম আয়ের অংশ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের এক বড় অংশ বর্তমানে আর্থিক সংকটে রয়েছে। তার ওপর রয়েছে ডাটা প্যাকেজ কেনার সামর্থ্য। নতুন বাজেটে মোবাইল সার্ভিস চার্জ বৃদ্ধি করায় তা ইন্টারনেটের খরচ আরো ৫% বাড়িয়ে দিয়েছে।

এমতাবস্থায় এই বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনাবিহীন যাত্রা সংকটময় এই অবস্থাকে আরো বৈষম্যময় করে তুলছে, যা শিক্ষার্থীদের এক বড় অংশের অনলাইন ক্লাস অনিশ্চিত করে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চরিত্রের সঙ্গে যা সাংঘর্ষিক। আবার শিক্ষাক্ষেত্রে বৈষম্যের বিষয়টি আলোচনায় এলেও অনেকটা ধরি মাছ না ছুঁই পানির মতো রয়ে গিয়েছে বিষয়টি। এমতাবস্থায় টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা করে শিক্ষার্থীবান্ধব ইন্টারনেট প্যাকেজ নিশ্চিত করা সম্ভব ছিল অনলাইন ক্লাস শুরুর আগে। এর মধ্যেই কর্তৃপক্ষের চাপে কোনোরকম প্রস্তুতি ছাড়াই সীমিত সক্ষমতা নিয়েই ক্লাস শুরু করেছে ঢাবিসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। অনলাইন ক্লাসের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। সীমিত পরিসরে চালানোর জন্য যে প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ দরকার সেটাও অনুপস্থিত। তাছাড়া পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী যেহেতু প্রত্যন্ত অঞ্চলে রয়েছে সেহেতু নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবার বিষয়টি উপেক্ষিতই রয়েছে।

চারুকলা অনুষদের ব্যবহারিক ও বিজ্ঞান অনুষদের ল্যাবভিত্তিক ক্লাস এখানে অনুপস্থিত। বিজ্ঞান অনুষদের ফলিত বিভাগগুলো শুধু থিওরিভিত্তিক ক্লাস করছে। একই অবস্থা রয়েছে চারুকলা অনুষদেও। লেকচারের বাইরে প্রাকটিক্যাল ক্লাসের যে প্রয়োজনীয়তা তা অনুপস্থিত অনলাইন ক্লাসে। এছাড়া সব বিভাগের জন্যই ক্লাসরুমের বাইরে যে পড়ার আবহ থাকে সে বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত নেই। ডিজিটাল লাইব্রেরির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি সবাই এবং ক্লাসের বাইরের ম্যাটারিয়ালস দেওয়া এবং শিক্ষার্থীদের লজিস্টিক সাপোর্টের বিষয়টিও আমলে নেওয়া হয়নি।

অনলাইন ক্লাসের হাজারো সমস্যা আছে বলেই যে এর প্রয়োজনীয়তা নেই বিষয়টি সেরকমও নয়। ক্লাস না করে এমন অনিশ্চিত যাত্রা কত দিন চলবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এর মধ্যেও আমরা প্রত্যেকেই ক্লাস করতে আগ্রহী। তবে স্বাভাবিক সময়ে ক্লাসে যেমন শিক্ষার্থী থাকে সেরকম সর্বোচ্চসংখ্যক শিক্ষার্থীকে নিয়ে, শিক্ষার্থীরা যেন অর্থনৈতিক অসচ্ছলতার দরুন ক্লাসের বাইরে থেকে মানসিকভাবে হতাশায় না পড়ে। ‘ল্যার্নিং বাই ডুয়িং’ পদ্ধতিতে আপত্কালীন অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়েই ক্রমান্বয়ে অভিযোজন করে নিতে পারবে। এত দিনের ঘরবন্দি জীবন, ভবিষ্যত্ নিয়ে হতাশা থেকে অনলাইন ক্লাস কিছুটা সময়ের জন্য হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস এনে দেবে। তবে এই স্বস্তি সকল শিক্ষার্থীর সমভাবে প্রাপ্য। ঘরবন্দি এই সময়টাতে শিক্ষার্থীরা যেন একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে অন্যান্য পড়াশোনা, শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য, বিশ্বসাহিত্য নিয়ে অধ্যয়ন করে সে বিষয়ে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে, যাতে তাদের সময়টা নষ্ট না হয়।

অনলাইন এবং অফলাইনে স্বেচ্ছামূলক কাজ করার প্রতি শিক্ষার্থীদেরকে আগ্রহী করে তুলতে পারেন শিক্ষকরা। তাছাড়া দৈনন্দিন কাজে ব্যবহূত জরুরি অ্যাপ এবং সফটওয়্যার শিক্ষা শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষত এটা হয়তো শ্রেষ্ঠ সময়, যা তার স্কিল বৃদ্ধিতে সহায়ক হতে পারে। পাশাপাশি আশা করব, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্লাসের বাইরের বিষয়গুলো প্রসঙ্গে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করবেন। শত প্রতিকূলতার মধ্যেও হয়তো এটাই হবে ডিজিটালাইজেশনের পথে যাত্রার প্রথম ধাপ। যুগের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিকায়ন গ্রহণ করে নিয়ে এগিয়ে যাবে সম্মুখযাত্রায়।

লেখকবৃন্দ : তানজিম আহমেদ খান, নাঈম আহমদ সিদ্দীক, আহমাদ নাবীল, আন্নিসা আক্তার মিম, তানিয়া জামান স্বর্ণা, পার্থিব মাহমুদ, মনিমুক্তা, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা - dainik shiksha চাকরির বয়স নিয়ে শিক্ষামন্ত্রীর চিঠির পর সমাবেশের ডাক দিলো ৩৫ প্রত্যাশীরা স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? - dainik shiksha স্কুলে গ্রীষ্মের ছুটি কি এপ্রিলে এগিয়ে আনা দরকার? কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার - dainik shiksha কলেজের শিক্ষকদের ডিজিটাল বদলির আবেদন শুরু রোববার বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর - dainik shiksha বুটেক্সের প্রথম সমাবর্তন ৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি: শিক্ষা মন্ত্রণালয় দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha দুর্যোগে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে বিশেষ কমিটি গঠনে নীতিমালা হবে: শিক্ষামন্ত্রী দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0028460025787354