পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষায়ই ভর্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

এইচএসসি পরীক্ষা না হলেও পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দিতেই হবে। সরকারি উদ্যোগে এবার বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ই গুচ্ছ পদ্ধতির আওতায় আসছে। কাজেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ছোটাছুটি কিছুটা কমবে। তবে ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে পরিচালিত চারটিসহ আট বিশ্ববিদ্যালয় থাকছে এই পদ্ধতির বাইরে। গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ একাধিকবার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন, আহ্বান জানান এমনকি সব ভিসিদের নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানান। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দ থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও পরীক্ষা কমানোর চেষ্টা করে আসছে। কিন্তু নানা অজুহাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভিসিরা এড়িয়ে গেছে।

দেশে প্রায় অর্ধশত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে এবার ৩৯টিতে স্নাতক পর্যায়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে পরিচালিত ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় একলা চলো নীতিতেই আছে। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে বসেছিলেন। তাদের প্রয়োজনে আলাদা গুচ্ছ করারও পরামর্শ দেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তা উপেক্ষা করেছে। অন্য দিকে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটিও আলাদা পরীক্ষা আয়োজনের কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি)। ফলে এই সাতটি গুচ্ছবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ইউজিসি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিয়ে একটি গুচ্ছ করার উদ্যোগ নিয়েছে। সে অনুযায়ী রুয়েট, চুয়েট ও কুয়েট সম্মত হয়েছে। কিন্তু জটিলতা তৈরি রেখেছে বুয়েট। ভর্তি পরীক্ষা কমিটির সভাপতি আর ভেন্যু নিয়ে বুয়েট শর্ত আরোপ করায় বাকি তিনটি বেঁকে বসেছে। অবশ্য গত ২০ ডিসেম্বর সাত দিনের মধ্যে আরোপিত শর্ত সম্পর্কে জানাতে সময় নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। যদিও শুক্রবার পর্যন্ত কিছু জানায়নি। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, বুয়েটকে বাদ দিয়ে বাকি তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা গুচ্ছে পরীক্ষা নিতে পারে। এছাড়া শিক্ষা প্রদানের ধারা ভিন্ন হওয়ায় জাতীয় এবং উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় আলাদা ভর্তি করাবে। এর মধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজগুলো পরীক্ষা ছাড়া কেবল জিপিএর ভিত্তিতে ভর্তি নেবে। 

দেশে গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষার প্রবর্তক হচ্ছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। গত বছরই অভিন্ন পরীক্ষা নিয়েছে। এবার এই গ্রুপে যুক্ত হয়েছে সাতটি প্রতিষ্ঠান। অবশিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২০টি সাধারণ এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় একসঙ্গে অভিন্ন গুচ্ছে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত ইতোমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে। পাশাপাশি পরীক্ষা নেওয়ার আংশিক নীতিমালাও প্রকাশ করেছে। তারা এই গ্রুপের নাম দিয়েছেন জিএসটি (জেনারেল, সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি)। এই গুচ্ছের পরবর্তী বৈঠক আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে বলে এ সংক্রান্ত কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদ জানিয়েছেন। তিনি সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। তিনি শুক্রবার রাতে জানান, বিনা টাকায় ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারে ইউজিসি থেকে একটি বক্তব্য এসেছে। সেটা পারলে ভালো হতো। কিন্তু পরীক্ষার সফটওয়্যার তৈরি, প্রশ্ন মুদ্রণসহ আনুষঙ্গিক খরচ দরকার। তাছাড়া এ খাতে ইউজিসি থেকে কোনো তহবিলও বরাদ্দ নেই। তাই খরচ বহনের জন্য যে পরিমাণ টাকা দরকার ততটুকু আবেদন ফি হিসেবে শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেবেন।

ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর বলেন, জিএসটি এবং কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গুচ্ছ পদ্ধতির পরীক্ষা নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বুয়েট না এলেও বাকি তিন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা একগুচ্ছে নেবে। তবে বুয়েট এলে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রকৌশল গুচ্ছে আসত। তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশে পরিচালিত চার বিশ্ববিদ্যালয় একটি গুচ্ছে আনার প্রস্তাব ছিল। আর বিশেষ পদ্ধতি পরিচালিতসহ বিইউপিসহ তিনটিকে নিয়ে একটি গুচ্ছ করার আলাপ হয়েছে। তেমনটি হলে শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষা অনেকটাই কষ্টমুক্ত হতো। অর্থ ব্যয়ও কম হতো।

জিএসটি গ্রুপ : ইতোমধ্যে দুটি বৈঠক হয়েছে এই গ্রুপের বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের। তাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পরীক্ষা হবে ১০০ নম্বরে এমসিকিউ পদ্ধতিতে। তিনটি বিভাগের জন্য তিনটি পরীক্ষা থাকবে। বিভাগ পরিবর্তনের জন্য প্রচলিত ‘ডি’ নামে কোনো ইউনিট থাকবে না। একজন বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী যদি মানবিক বা বাণিজ্য বিভাগের বিষয়ও পড়তে চায় তাহলে তাকে বিজ্ঞান বিভাগেই পরীক্ষা দিতে হবে। তেমনি বাণিজ্য শাখার কেউ মানবিকের বিষয় পড়তে চাইলে নিজের বিভাগেই পরীক্ষা দিতে হবে। এই বিষয়টি মানবিক শাখার ক্ষেত্রেও একই নীতি অনুসরণ করা হবে।

ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে মানবিক শাখার শিক্ষার্থীদের এসএসসি ও এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ-৬ পেতে হবে। কোনো পরীক্ষায় জিপিএ-৩ এর কম থাকলে আবেদন করা যাবে না। বাণিজ্য বিভাগের জন্য ওই দুই পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ-৬ দশমিক ৫ থাকতে হবে। এখানেও কোনো পরীক্ষায় জিপিএ-৩ এর কম থাকলে আবেদন করা যাবে না। আর বিজ্ঞানে দুই পরীক্ষায় ন্যূনতম জিপিএ-৭ থাকতে হবে। এখানেও কোনো পরীক্ষায় জিপিএ-৩ এর কম থাকলে আবেদন করা যাবে না। দ্বিতীয় বারে ভর্তিচ্ছুরাও আবেদন করতে পারবেন।

পরীক্ষার নম্বর বণ্টনও প্রকাশ করা হয়েছে। মানবিক বিভাগের পরীক্ষা হবে বাংলা, ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের ওপর। এর মধ্যে বাংলায় ৪০, ইংরেজিতে ৩৫ এবং আইসিটিতে ২৫ নম্বর থাকবে। ব্যবসা শিক্ষায় হিসাববিজ্ঞানে ২৫ নম্বর, ব্যবস্থাপনায় ২৫ নম্বর, ভাষায় ২৫ (বাংলায় ১৩ ও ইংরেজিতে ১২ নম্বর) এবং আইসিটি বিষয়ে ২৫ নম্বরের পরীক্ষা হবে। বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের ভাষা দক্ষতায় ২০ নম্বরের মধ্যে বাংলায় ১০ ও ইংরেজিতে ১০ নম্বর থাকবে। এছাড়া রসায়ন ২০, পদার্থ ২০ এবং আইসিটি, গণিত ও জীববিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হবে। এর মধ্যে আইসিটি, গণিত ও জীববিজ্ঞানের মধ্যে যেকোনো দুটিতে পরীক্ষা দিতে হবে। প্রতিটির নম্বর থাকবে ২০ করে।

অধ্যাপক ফরিদউদ্দিন আহমেদ বলেন, এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য ৪ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে চূড়ান্তের পর প্রকাশ করা হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস - dainik shiksha কাল খুলছে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শনিবারও চালু ক্লাস সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি - dainik shiksha সরকারি কলেজ মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন ও খাদিমের চাকরি জাতীয়করণ দাবি উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি - dainik shiksha উপবৃত্তির সব অ্যাকাউন্ট নগদ-এ রূপান্তরের সময় বৃদ্ধি শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকের বেতন ও শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে কাজ চলছে: শিক্ষামন্ত্রী বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি - dainik shiksha বিএসসি মর্যাদার দাবিতে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারদের মাসব্যাপী কর্মসূচি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় - dainik shiksha ১৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের হাতে স্মার্টফোন নয় একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব - dainik shiksha একই স্কুলের দুই ছাত্রীকে বিয়ের পর আরেক ছাত্রীকে ল্যাব সহকারীর অনৈতিক প্রস্তাব দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0025300979614258