পাস না করেও সুপারিশে ঢাবিতে ভর্তি হন নাথান

দৈনিক শিক্ষাডটকম প্রতিবেদক |

সম্প্রতি পার্বত্য চট্টগ্রামে তাণ্ডব চালিয়ে ফের আলোচনায় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। ১৭ ঘণ্টার ব্যবধানে দুই ব্যাংকে হামলা চালিয়ে সংগঠনটি নতুন করে উঠে আসে আলোচনায়। ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটির নেপথ্য নায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে পাস করা নাথান লনচেও বম ওরফে নাথান বম নামের এক শিক্ষার্থী। এই নাথান বমই সশস্ত্র গোষ্ঠীটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন বলে জানা যায়। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার আলোয় আলোকিত হয়ে নাথান এখন দেশের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছেন। অথচ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির ভর্তি পরীক্ষায় পাসই করতে পারেননি।

পাহাড়িদের একটি পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৬ খ্রিষ্টাব্দে নাথান বম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আবেদন করতে পারলেও ভর্তি পরীক্ষায় পাস করতে পারেননি তিনি। ঘটনাচক্রে ওই বছরই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীণ উপাচার্য ও বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা প্রয়াত এমাজউদ্দীন আহমদ একবার বান্দরবান সফর করে খিয়াং, লুসাই, ম্রো, বম জাতিগোষ্ঠীর শিক্ষার্থীদের সরাসরি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রতিশ্রুতি দেন।

আর তাই পরীক্ষায় পাস না করতে পারলেও এমাজউদ্দীনকে ওয়াদা স্মরণ করিয়ে পিসিপি নেতারা নাথান বমকে চারুকলা অনুষদে ভর্তি করার সুপারিশ করেন। নাথান বম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান।

বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলার ২ নম্বর রুমা সদর ইউনিয়নের ইডেনপাড়ার বাসিন্দা মৃত জাওতন লনচেওর ছেলে নাথান লনচেও বম। বাবা পেশায় জুমচাষি। মা মৃত রৌকিল বম গৃহিণী। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি ছোট।

স্থানীয় অধিবাসীদের তথ্য অনুযায়ী, নাথান বমের পরিবার ছিল অভাবী। নাথান বমদের পরিবার অনেক বড়। পরিবারের এত সদস্যের আহার জোগাতে নাথান বমকেও মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছিল। স্থানীয় সেনা ক্যাম্প, জোন ও ব্রিগেডে সাহায্যের জন্যও যেতেন। 

পরে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) সন্তু গ্রুপের পাহাড়ি ছাত্র পরিষদে (পিসিপি) যোগ দেয়ার কারণে নাথান বমের পড়াশোনার দায়িত্ব নেন সন্তু লারমা। এরপর তার জীবন ও পরিবারের জীবনধারা পাল্টে যায়। পরিবারের অনেক সদস্য সরকারি চাকরি পান। নিজের স্ত্রী লাল সমকিম বম রুমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নার্স হিসেবে যোগ দেন। তাদের দুটি শিশুসন্তান আছে। 

নাথান বম ছাত্রজীবনে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদে যুক্ত ছিলেন। ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দে পার্বত্য শান্তি চুক্তির পর সহশিল্পী নিম্মী দেওয়ানকে সঙ্গে নিয়ে খাগড়াছড়ি শহরের মহাজনপাড়া এলাকার লারমা স্কয়ারে এম এন লারমার একটি ভাস্কর্য নির্মাণ করেন। তখন হিল আর্টিস্টস গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।

নাথানদের নির্মিত লারমার আবক্ষ ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করা হয় ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে। এরপর শিল্পী হিসেবে তার খ্যাতি বাড়ে। তিনি লেখালেখি করতে শুরু করেন। কুকি-চিনভুক্ত জাতিগোষ্ঠীর পরিচিতি নিয়ে ‘দ্য বমজৌ’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন।

তখন থেকেই তিনি কুকি-চিন জাতীয়তাবাদী চিন্তার একটি বলয় তৈরির চেষ্টা করছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দে কুকি-চিন ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (কেএনডিও) নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। ওই সংগঠনের পক্ষে ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও অংশগ্রহণ করতে চেয়েছিলেন নাথান। মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় শেষ পর্যন্ত তার আর ভোট করা হয়নি।

নাথানের গড়ে তোলা কেএনডিও পরে নাম বদলে হয় কুকি-চিন ন্যাশনাল ভলান্টিয়ার্স (কেএনভি)। আরো পরে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের দিকে হয়েছে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ)। এর সশস্ত্র উইংয়ের নাম দেয়া হয় কুকি-চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ)।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, বম পার্টি নামেও পরিচিত কেএনএফের প্রতিষ্ঠাতা নাথান বম ভারতের মিজোরাম রাজ্যে অবস্থান করছেন। মূলত বমরাই এর সদস্য। এটি রাঙামাটি ও বান্দরবানের ৯ উপজেলায় বমসহ ৬টি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ‘কুকি-চিন রাজ্য’ প্রতিষ্ঠার দাবিতে সশস্ত্র সন্ত্রাসী তৎপরতা শুরু করে। সংগঠনের শতাধিক সদস্য মিয়ানমারের কাচিন ও কারেন প্রদেশ এবং ভারতের মণিপুর রাজ্যে প্রশিক্ষণ নিয়ে সশস্ত্র অবস্থায় ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দে ফিরে আসে।

বান্দরবানের রুমা সীমান্ত ও মিজোরাম সীমান্তের জাম্পুই পাহাড়ে এর সশস্ত্র ও নিরস্ত্র মিলিয়ে কেএনএফের সশস্ত্র শাখা কেএনএর ৬০০-এর বেশি সদস্য আছে। তারা চাঁদাবাজি, অপহরণ, মুক্তিপণ আদায়, হত্যাকাণ্ডসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে পুরো জেলায় আতঙ্ক তৈরি করেন। রুমা ও থানচি উপজেলায় তাদের উৎপাত বেশি।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ - dainik shiksha ৬ষ্ঠ ও ৮ম শ্রেণির বাদপড়া শিক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও - dainik shiksha ‘ভুয়া প্রতিষ্ঠাতা’ দেখিয়ে কলেজ সভাপতির প্রস্তাব দিলেন ইউএনও বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল - dainik shiksha বেরোবি শিক্ষক মনিরুলের নিয়োগ বাতিল এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক - dainik shiksha এমপিও না পাওয়ার শঙ্কায় হাজারো শিক্ষক কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক - dainik shiksha কওমি মাদরাসা একটি অসমাপ্ত প্রকাশনার কপিরাইট সত্ত্ব পেলেন লেখক জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত - dainik shiksha জাল সনদে শিক্ষকতা করা আরো ৩ জন চিহ্নিত এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন - dainik shiksha এসএসসি ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের ফরম পূরণের পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞপ্তি দেখুন কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0026218891143799