পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) ক্যাডার ও নন-ক্যাডার সব ধরনের পরীক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের জন্য সম্মানী বা পারিশ্রমিক বাড়ানো হয়েছে। ৫০ শতাংশ হারে এ খরচ বাড়লেও তা চাকরি প্রার্থীদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। গত ১৭ অক্টোবর অর্থ মন্ত্রণালয় সম্মানী বাড়ানোর আদেশ জারি করলেও দুই মাস আগে তা কার্যকর করা হয়েছে।
পিএসসির চেয়ারম্যান মো. সোহরাব হোসাইন বলেন, ‘সম্মানী বা পারিতোষিক বাড়ানোর বিষয়টি দীর্ঘদিন ঝুলে ছিল। সম্প্রতি তা কার্যকর করা হয়েছে। এ ব্যয় বৃদ্ধি চাকরি প্রার্থীদের ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। চাকরি প্রার্থীরা আগের ব্যয়েই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন।’
পিএসসি সরকারের জন্য ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদে উপযুক্ত প্রার্থী বাছাই করে। ক্যাডার কর্মকর্তাদের জন্য বিসিএস (বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস) এবং অন্যান্য প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের জন্য নন-ক্যাডার পরীক্ষার আয়োজন করে। এসব পরীক্ষায় বিশেষজ্ঞ ব্যক্তি, বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক, আমলাদের সংশ্লিষ্টতা থাকে। বিশেষ করে বিসিএসের প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করেন পিএসসির সঙ্গে সরাসরি সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তবে উত্তরপত্র মূল্যায়ন করে থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ^বিদ্যালয় (বুয়েট)সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাচিত শিক্ষকরা। পিএসসির সদস্যদের নেতৃত্বে মৌখিক পরীক্ষায় শিক্ষক, সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ পেশাজীবীদের রাখা হয়। খাতা দেখা, মৌখিক পরীক্ষা নেওয়া ছাড়াও প্রশ্নপত্র প্রণয়ন, মডারেশনসহ অন্যান্য কাজে পিএসসির বাইরের অনেকে অংশ নেন। পরীক্ষার দিন হলে যে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করেন তিনিও সম্মানী পান। জেলার ডিসি, এসপি থেকে শুরু করে বিভাগীয় কমিশনারও পারিশ্রমিক নেন। বাদ যান না পরীক্ষার হলে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা র্যাব বা পুলিশ সদস্যরাও।
সম্মানী বাড়ানোর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশ অনুযায়ী, প্রশ্নপত্র তৈরি করতে পূর্ণপত্রের ক্ষেত্রে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদের জন্য ৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। আংশিক পত্রের ক্ষেত্রে ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদের জন্য ২ হাজার ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। প্রতি আইটেমের অবজেকটিভ প্রশ্নপত্র প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিসিএস প্রিলিমিনারি টেস্টের প্রশ্ন ও উত্তর এবং বাছাই পরীক্ষার প্রশ্ন ও উত্তরের প্রশ্নপত্র প্রণয়নের জন্য সম্মানী ১৫০ থেকে বাড়িয়ে ২২৫ টাকা করা হয়েছে।
প্রশ্নপত্র মডারেশন : লিখিত পরীক্ষার পূর্ণ বা আংশিক প্রশ্নপত্র মডারেশন ফি ৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। প্রিলিমিনারি বাছাই পরীক্ষার প্রতি আইটেম অবজেকটিভ টেস্টের প্রশ্ন মডারেশন ফি ১৫০ থেকে বাড়িয়ে ২২৫ টাকা করা হয়েছে।
ক্যাডার পদের পূর্ণ উত্তরপত্র পরীক্ষণ ফি ২৫০ থেকে বাড়িয়ে ৩৭৫ টাকা করা হয়েছে। প্রার্থীরা ২০০ নম্বরের জন্য চার ঘণ্টায় এ পরীক্ষা দেন। পূর্ণ উত্তরপত্র পরীক্ষণে এখানে লিথোকোডে গৃহীত পরীক্ষায় বৃত্ত ভরাট করতে হয়।
১০০ নম্বরের তিন ঘণ্টার পরীক্ষার উত্তরপত্র পরীক্ষণ ফি ১০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। আগে এ খাতার পরীক্ষণ ফি ছিল ২০০ টাকা। এখন তা ৩০০ টাকা করা হয়েছে। নন-ক্যাডার পদের জন্য ১০০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পদের জন্য ৫০-এর কম নম্বরের উত্তরপত্র মূল্যায়ন ফি ১৫০ থেকে বাড়িয়ে ২২৫ টাকা করা হয়েছে। এখানেও লিথোকোডে নেওয়া পরীক্ষার ক্ষেত্রে বৃত্ত ভরাট করতে হয়।
ক্যাডার পদের ২০০ নম্বরের চার ঘণ্টার পরীক্ষার উত্তরপত্রের খুঁটিনাটি নিরীক্ষার জন্য পারিতোষিক ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৭৫, ১০০ নম্বরের তিন ঘণ্টার পরীক্ষা খাতার পুনঃপরীক্ষার জন্য পারিতোষিক ৪০ থেকে বাড়িয়ে ৬০ টাকা করা হয়েছে।
২০০ নম্বরের চার ঘণ্টার পরীক্ষার প্রশ্নপত্র অন্য ভাষায় অনুবাদ করার ফি ২ হাজার ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। ১০০ নম্বরের তিন ঘণ্টার প্রশ্নপত্র অনুবাদের ক্ষেত্রে ২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা করা হয়েছে।
আবেদনপত্র স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাছাই করা হয় বলে আবেদনপত্র বাছাইয়ের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই।
সাক্ষাৎকার বা মৌখিক পরীক্ষার বিশেষজ্ঞদের জন্য চা বিস্কুট ও ওয়ার্কিং লাঞ্চ ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৪৫০ টাকা করা হয়েছে।
মৌখিক পরীক্ষায় বোর্ড সভাপতি এবং বিশেষজ্ঞ হিসেবে দায়িত্ব পালনকারীদের সম্মানী ৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে। এই সম্মানী শুধু বহিরাগত সদস্যদের জন্য প্রযোজ্য।
লিখিত বা বাছাই পরীক্ষা পরিচালনা : প্রধান পরিদর্শক প্রতি চার ঘণ্টার পরীক্ষার জন্য ৩ হাজার টাকা পাবেন। আগে এর পরিমাণ ছিল ২ হাজার টাকা। তিন ঘণ্টার পরীক্ষার ফি ১ হাজার ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার ২০০ টাকা, ২ ঘণ্টার পরীক্ষার ফি ১ হাজার ২০০ থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৮০০ টাকা করা হয়েছে। পরিদর্শক প্রতি ৪ ঘণ্টার পরীক্ষার জন্য ২ হাজার ২০০, তিন ঘণ্টার পরীক্ষার জন্য ১ হাজার ৮০০, দুই ঘণ্টার পরীক্ষার জন্য ১ হাজার ৫০০ এবং দুই ঘণ্টার কম সময়ের পরীক্ষার জন্য ১ হাজার ২০০ টাকা করে পাবেন।
অফিস সহকারীরা প্রতি ৪ ঘণ্টার পরীক্ষার জন্য ৯০০ টাকা পাবেন। আগে এর পরিমাণ ছিল ৬০০। অফিস সহায়কদের ভাতা চার ঘণ্টার পরীক্ষার ক্ষেত্রে ৮০০ টাকা। আগে এ হার ছিল ৫৫০।
নিয়োগ পরীক্ষার সিলেবাস প্রণয়ন ও মডারেশনের সম্মানী ৩ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৪ হাজার ৫০০ টাকা করা হয়েছে।
বিভাগীয় কমিশনার চার ঘণ্টার পরীক্ষার জন্য সম্মানী পাবেন ৪ হাজার ৫০০ টাকা। ৩ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে এ সম্মানী ৪ হাজার ৫০০ করা হয়েছে। বিভাগীয় কমিশনারদের তিন ঘণ্টার পরীক্ষার সম্মানী ২ হাজার ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার ৫০০ টাকা, দুই ঘণ্টার পরীক্ষার ২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসকের (ডিসি) এবং জেলা পুলিশ সুপারের (এসপি) চার ঘণ্টার পরীক্ষার সম্মানী ২ হাজার ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার ৭০০ টাকা, তিন ঘণ্টার পরীক্ষার সম্মানী ২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার এবং দুই ঘণ্টার পরীক্ষার সম্মানী ১ হাজার ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার ২০০ টাকা করা হয়েছে। র্যাব আনসার ও গোয়েন্দা সংস্থার জেলা পর্যায়ের প্রধানরাও ডিসি ও এসপির সমান সম্মানী পাবেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনের সম্মানী চার ঘণ্টার জন্য ২ হাজার ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ৩ হাজার ৫০০, তিন ঘণ্টার জন্য ২ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার ৮০০ এবং দুই ঘণ্টার পরীক্ষায় ১ হাজার ৫০০ থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার টাকা করা হয়েছে। পরীক্ষায় দায়িত্বপালনকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা চার ঘণ্টার পরীক্ষায় ৬০০, তিন ঘণ্টার পরীক্ষার জন্য ৪৫০ এবং দুই ঘণ্টার পরীক্ষার জন্য ৩০০ টাকা হারে সম্মানী পাবেন।