পিতা-মাতাই আদর্শ শিক্ষক

মোস্তাফিজুর রহমান শামীম |

শৈশব হারিয়েছি যৌবনের আগেই। শৈশবের মধুর স্মৃতি আজও মনে পড়ে যখন ঐ বয়সী ছেলেদের দেখি। বয়স তিন দশক পেরিয়েছে তিন বছর আগেই। তবুও তারুণ্যের প্রাণশক্তি রয়ে গিয়েছে আজ অবধি। মনে হয় না কোনোদিন হারিয়েও যাবে। এসব আবেগের বহিঃপ্রকাশ।

একটি নবজাতক জন্মের পর প্রথম আওয়াজ করে কান্নার মাধ্যমে। যতক্ষণ শিশুটি না কাঁদে ততক্ষণ চেষ্টা করা হয় তাকে কাঁদানোর। কারণ শিশুর জন্মের পর তার কান্নার মাঝেই সুখ লুকিয়ে থাকে। শিশুটি না কাঁদা পর্যন্ত সবাই তাকে অসুস্থ ভেবে নেয়। অথবা শিশুটি মৃতও হতে পারে। এজন্যই শিশুটির কান্না সবার মুখে হাসি ফোটায়। সত্যিই অবাক হওয়ার মতো ঘটনা। জন্মের পরপরই আমাদের কান্না অন্যের খুশির খোরাক হয়েছিল। আরও ভালো লাগছে ভেবে, আমাদের জন্মের শুরুতেই কিছু মানুষকে খুশি করতে পেরেছি। কিছু মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি। এ থেকে স্পষ্ট আমাদের প্রত্যেকের জীবনই অনেক মূল্যবান। 

সন্তানকে নিয়ে বাবা-মার কতো রকম স্বপ্ন থাকে। সবাই চান তাদের সন্তান ভালো কিছু করুক। মানুষের মতো মানুষ হোক। শৈশব থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সন্তানেরা তাদের জীবিত মা-বাবার কাছে ছোট্ট শিশুই থেকে যায়। কি মধুর বন্ধন! সন্তানের চাওয়া পাওয়া, আবদার মা-বাবার কাছে একপ্রকার ভালোলাগা। মা- বাবা আপ্রাণ চেষ্টা করেন তাদের সন্তানদের শখগুলো পূরণ করতে। 

অনেক সময় অভিভাবকগণ অতি আবেগপ্রবণ হয়ে সন্তানদের সব চাহিদাই পূরণ করতে উদগ্রীব হয়ে যান। বুঝতে পারেন না সবকিছুই সন্তানের জন্য শুভকর কিনা। 

বর্তমানে কিশোর-কিশোরীদের জীবনের ধারাপাতে যুক্ত হয়ে যাচ্ছে স্মার্টফোন নামক একটি যন্ত্র। মা-বাবা ভাবেন আধুনিক যুগ, সন্তান স্মার্ট হবে। সন্তান সদ্য এসএসসি দিয়েছে একটি মোটরবাইক না হলে কেমন হয়! 

এসব কারণেই আমরা হারাতে বসেছি সন্তানদের তারুণ্যকে। গাছের ফল যখন প্রকৃতির নিয়মে পেকে যায়, তখন তা অমৃত মনে হয়। আর কেমিক্যাল দিয়ে জোর করে পাকানো ফলের স্বাদ কেমন তা বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। যাই হোক সন্তানের বয়সের সাথে সামঞ্জস্যতা রেখেই তার চাহিদা পূরণ করা উচিত। 

অভিভাবকরা আপনারা হয়তোবা ভাবছেন, আপনার টাকা আপনি আপনার সন্তানের চাহিদা পূরণ করবেন তাতে কার কি আসে যায়। আপনার ভাবনাটাও ফেলে দেয়ার মতো না। কারণ আপনাদের মতো অভিভাবক একেবারেই কম না। 

আপনার অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের হাতের স্মার্টফোন নামক ডিভাইসটির কি সঠিক ব্যবহার হচ্ছে বলে মনে করেন? এই বয়সে সবকিছুই তাদের মনে বিপরীতধর্মী কাজ করে। আপনি আপনার সন্তানকে যেটা নিষেধ করবেন সেটাই সে বেশি করে করতে চাইবে। আপনার অজান্তেই করবে। 

সাম্প্রতিক সময়ে এই স্মার্টফোন নিয়ে কত ঘটনা ঘটেছে তা আমরা নিশ্চয়ই জানি। কত প্রকার অব্যক্ত, অপ্রীতিকর কার্যকলাপের মাধ্যম এই স্মার্টফোন! আপনার সন্তানকে নষ্ট করে দিচ্ছে এই আধুনিক প্রযুক্তি। প্রযুক্তির দুইটি দিক আছে। একটি ব্যবহার, আরেকটি অপব্যবহার। বর্তমানে কিশোর বয়সে বেশিরভাগ সন্তানই ঝুঁকে পড়ছে অপব্যবহারের দিকে। আর আপনি অভিভাবক সন্তানকে একজন দক্ষ প্রযুক্তিবিদ ভাবছেন। 

আচ্ছা বলতে পারেন, সন্তান প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর এসব শখ পূরণ করলে কি ক্ষতি হতে পারে? পারছেন না! শুরুতেই বলেছি,  সন্তানের শখ পূরণ করা আপনার অন্যরকম ভালোলাগা। কিন্তু যে ভালোলাগাতে আপনার সন্তান সমাজের কীট হয়ে যাচ্ছে, সে ভালোলাগার কি আদৌ কোনো মূল্য আছে? আপনি আবেগ দিয়ে বিবেক নষ্ট করছেন। 

সম্মানিত অভিভাবক আপনার হয়তোবা অনেক টাকা আছে। আপনি চাইবেন আপনার সন্তান একটু আলাদাভাবেই চলুক। এজন্য অপ্রাপ্তবয়সেই তুলে দিচ্ছেন মোটরসাইকেল। ঐ মোটরসাইকেলে পেছনে আপনি বসে আছেন। গর্বে আপনার বুক ভরে যাচ্ছে। কিন্তু আপনার সন্তানকে একজন অবৈধ চালক হিসেবে রাস্তায় চলতে হচ্ছে। সেটা আপনি ভেবে দেখার প্রয়োজন মনে করছেন না। আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে, আপনার সন্তান যেন অন্যের জীবনের কাল হয়ে না যায়। ভুলে যাবেন না, একজন মানুষ যে বয়সেই আপরাধ করুক না কেন তাকে অপরাধী হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়।    

সড়ক দুর্ঘটনায় কিশোর-কিশোরী  নিহত, আহত, পঙ্গু  হওয়ার  ঘটনা এখন নিত্যনৈমিত্তিক। শুনেছি দুর্ঘটনায় মারা গেলে নাকি শহীদের মর্যাদা পাওয়া যায়। তবে কি আপনি একজন শহীদের পিতা হওয়ার জন্যই আপনার অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের হাতে মোটরসাইকেল তুলে দিচ্ছেন? আপনার না অনেক স্বপ্ন ছিল সন্তানকে নিয়ে? সব স্বপ্ন কি তবে রাজপথেই পিষ্ট দেহের মাঝে বিলীন হয়ে যাবে?! 

আপনার সন্তান তার জন্মের পরপরই কেঁদেছিল চিৎকার দিয়ে।  আপনি কি কখনও আগে থেকেই চাইবেন তার মৃত্যর পর চিৎকার করে কাঁদতে। তাহলে আপনার মৃত্যুর পর কাঁদবে কে?! সম্মানিত অভিভাবক আপনার অবেগ সংযত করুন। সন্তানকে মানুষ  হিসেবে গড়ে তুলতে আপনার ভূমিকাই মুখ্য। 

আর তাই আপনার  সন্তানের সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়তে ক্ষেত্রবিশেষ আবেগ বিসর্জন দিন। বিবেকের কাছে প্রশ্ন করে দেখুন আপনার সন্তান সমাজের কাছে বোঝা হয়ে যাচ্ছে কি না? সমাজকে কলুষিত করছে কি না? সমাজের নোংরা জীব হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে কি না?

পরিশেষে বলতে চাই মা- বাবাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। সেই সাথে শ্রেষ্ঠ বন্ধুও বটে। (যদি আপনি তা অর্জন করতে পারেন)।                                                             

মোস্তাফিজুর রহমান শামীম : শিক্ষক ও দৈনিক শিক্ষার বিশেষ প্রতিনিধি । 


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha শুক্রবার স্কুল খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি, জানালো শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় - dainik shiksha স্কুল-কলেজ শিক্ষকদের এপ্রিল মাসের এমপিওর চেক ছাড় গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটে প্রথম লামিয়া প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে দ্বিতীয় ধাপের চূড়ান্ত ফল আগামী সপ্তাহ ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল - dainik shiksha ছাত্রলীগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিলিস্তিনের পতাকা উড়াবে কাল চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন - dainik shiksha চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ করার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী যা জানালেন গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাস ৩৬.৩৩ শতাংশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0023210048675537