পি কে হালদারকে ফেরানো নিয়ে যা বলছে দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক |

প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে ভারত থেকে দেশে ফেরত আনতে ইন্টারপোল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে তাঁকে কবে নাগাদ ফেরত পাওয়া যাবে, সে বিষয়ে তারা নিশ্চিত হতে পারেনি বলে দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব ও মহাপরিচালক সাঈদ মাহবুব খান জানিয়েছেন।

 আজ সোমবার বেলা দুইটায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয় প্রাঙ্গণে এক ব্রিফিংয়ে সাঈদ মাহবুব খান বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ইন্টারপোল অথরিটির সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমাদের জন্য খুব ভালো খবর হচ্ছে, ইন্টারপোল অথরিটি খুব দ্রুত রি-অ্যাক্ট করেছে। তারা দ্রুতই আমাদের আসামি ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়েছে।’ 

আইনজ্ঞরা বলছেন, পি কে হালদারকে আনতে চার থেকে পাঁচ মাস সময় লেগে যেতে পারে। কত দিনের মধ্যে আনা যাবে, এমন প্রশ্নের জবাবে দুদকের মহাপরিচালক (বিশেষ অনুসন্ধান ও তদন্ত) বলেন, ‘এটা আসলে সুনির্দিষ্টভাবে বলা কঠিন। কী পরিমাণ মামলা সেখানে (ভারতে) হয়েছে, সে মামলাগুলোর বিচারে কত দিন লাগবে বা বিচারের আগে ফেরত আনা যাবে কি যাবে না, সুনির্দিষ্ট করে বলাটা আসলে সঠিক হবে না।’

এক প্রশ্নের জবাবে দুদকের মহাপরিচালক বলেন, পি কে হালদারকে গ্রেফতারে ইন্টারপোলের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী রেড অ্যালার্ট জারি করানো হয়েছিল, সেটি ভারতেও পৌঁছেছে। সেটি কার্যকর করার জন্য এখন ইন্টারপোলের ভারতীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তারা কী জবাব দিয়েছে জানতে চাইলে দুদকের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এখনো আমরা রিপ্লাই পাইনি।’

ভারতেও পি কে হালদারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগে মামলা হয়েছে, সেখানে বিচার শেষ না হওয়ার আগে তারা আসামিকে ফেরত দিতে চাইবে কি? এ প্রশ্নের জবাবে দুদকের মহাপরিচালক বলেন, ‘এটা একটি প্রশ্ন, নিশ্চয়ই ভারতে যেহেতু তারা বেশ কিছু মামলা করেছে, আরও করবে। দু-একটা মামলায় তারা রিমান্ডেও নিয়েছে। আমাদের দিক থেকে চেষ্টা থাকবে, চাপ থাকবে, যত দ্রুত তাঁকে আমরা আমাদের দেশে নিয়ে আসতে পারি। সে ক্ষেত্রে ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের অনুরোধ, চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।’

পি কে হালদার ও তাঁর সহযোগীদের পাচার করা অর্থ ফেরতের বিষয়ে দুদক কী পদক্ষেপ নিয়েছে, জানতে চাইলে দুদকের মহাপরিচালক বলেন, ‘অর্থ ফেরত আনার পদ্ধতিটা খুব জটিল এবং এর খুব সাফল্য নেই—এটা সত্য। আমরা আশাবাদী যে আমরা যদি তাঁর (পি কে হালদার) কাছ থেকে তথ্য পাই, সেগুলো ফেরত আনতে সক্ষম হব।’

ভারতীয় কর্তৃপক্ষ পি কে হালদারের গ্রেফতারের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দুদকের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা অফিশিয়ালি যোগাযোগ করেনি। তবে পি কে হালদার যে বাংলাদেশের সম্পদ ওই দেশে নিয়ে গেছেন এবং নাম পরিবর্তন করেছেন, এ বিষয়গুলো তাদের (ইডি) অফিশিয়াল প্রেস রিলিজে আছে।’

ব্রিফিংয়ে সাঈদ মাহবুব খান বলেন, ‘পত্রপত্রিকার মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি যে, ভারতে প্রশান্ত কুমার হালদার গ্রেফতার হয়েছেন। সেখানে বেশ কিছু মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাঁকে রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আজ সকালে আমরা (কমিশন) বসেছি। আমাদের পরবর্তী কর্মকাণ্ড কী, এ বিষয়ে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

সাঈদ মাহবুব খান জানান, দুদক বন্দী প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় পি কে হালদারকে বাংলাদেশে আনার ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি লিখবে। এ ছাড়া তাঁর সম্পদের বিস্তারিত তথ্যের জন্য বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) অনুরোধ জানাবে। পাশাপাশি ভারতে বাংলাদেশ দূতাবাসকেও অনুরোধ জানানো হবে, যাতে তারা সেখানকার আদালত থেকে তথ্য সংগ্রহ করে দুদককে দেয়।

ভারতীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুদকের সরাসরি যোগাযোগ না হলেও ইন্টারপোল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে তাদের ভারতীয় উইংয়ে (এনসিবি) যোগাযোগ করেছে বলে জানান সাঈদ মাহবুব খান। তিনি বলেন, ‘এই আসামিকে দ্রুত যাতে বাংলাদেশে ফেরত নিয়ে আসা যায়, সে বিষয়ে ইন্টারপোল কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করেছে। আমরা আশা করছি, হয়তো যত দ্রুত সেটা করা সম্ভব হবে।’

পি কে হালদারের একাধিক বান্ধবী এবং তাঁদের হাজার কোটি টাকা পাচারের সত্যতা কতটুকু? এক সাংবাদিকের এ প্রশ্নের জবাবে দুদকের ভারপ্রাপ্ত সচিব বলেন, ‘আমার যতটুকু স্মরণ আছে পি কে হালাদার–সম্পৃক্ত ৩৩ জনের সম্পদের তদন্ত চলছে। পি কে হালদার সম্পৃক্ত বেশ কিছু পুরুষ আছেন, নারীও আছেন। যাঁদের নামে পি কে হালদারের সম্পত্তি, তাঁরা ভোগ করেন বা তাঁদের নামে রাখা হয়েছে। তাঁদেরও সম্পদের তদন্ত হচ্ছে। এর সত্যতা মামলার পরবর্তী সময়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।’

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পি কে হালদার কৌশলে চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিলেন। সেগুলো হলো ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড এবং বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। বিভিন্ন কাগুজে প্রতিষ্ঠান খুলে এই চার প্রতিষ্ঠান থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ নেন পি কে হালদার।

২০১৯ সালের মাঝামাঝি এসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হতে শুরু করে। সে সময় দেশ থেকে পালিয়ে যান পি কে হালদার। তাঁর ওই অর্থ আত্মসাতের তদন্ত করছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গত শনিবার কলকাতা থেকে পি কে হালদারকে গ্রেফতার করেন ইডির কর্মকর্তারা। পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন জায়গায় নামে–বেনামে থাকা তাঁর বাড়ি ও প্রতিষ্ঠানেও অভিযান চালিয়ে আরও পাঁচ সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা - dainik shiksha শনিবার থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা - dainik shiksha রোববার থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha ট্রেনে কাটা পড়ে স্কুলশিক্ষকের মৃত্যু গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল - dainik shiksha গুচ্ছের ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা কাল শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষকরাই স্মার্ট নাগরিক গড়ার কারিগর: শিল্পমন্ত্রী এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা - dainik shiksha এনটিআরসিএর সার্টিফিকেট সংশোধনের নতুন নির্দেশনা মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা - dainik shiksha মর্নিং স্কুলের ছয় সুবিধা উল্লেখ করলেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা - dainik shiksha দেড় মাস পর ক্লাসে ফিরছেন বুয়েট শিক্ষার্থীরা, স্থগিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার - dainik shiksha অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলের সংখ্যা বাড়াতে চায় সরকার দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0061728954315186