প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচনে তাঁর দল আবার ক্ষমতায় আসলে প্রত্যেক বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার (৭ অক্টোবর) বিকেলে গণভবনে বাংলাদেশ মেডিকেল এসেসিয়েশন (বিএমএ) ‘চিকিৎসক সম্মেলন-২০১৮’তে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা সরকার হিসেবে আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে মনে করি। সেজন্য বিশেষায়িত চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান, নার্সিং থেকে শুরু করে সর্বক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ প্রদান একান্ত প্রয়োজন। তার জন্য আমরা যেমন ইনস্টিটিউশনগুলোও করে দিয়েছি, তেমনিভাবে চিকিৎসার সুযোগটাও আরো ব্যাপকভাবে সৃষ্টি করতে চাই। তিনি বলেন, বিদেশ থেকে যেমন প্রশিক্ষণ দিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে, তেমনি বিদেশি প্রশিক্ষক এনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করার ওপরও আমরা জোর দিচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, চিকিৎসক ভাই বোনদের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, মানুষের সেবা করাটা কিন্তু সর্বপ্রথম কর্তব্য। কিন্তু এ প্রসঙ্গে একটা দুঃখের কথা আমি বলতে চাই। সেটা হলো, উপজেলা হাসপাতালগুলোকে উন্নতমানের করার জন্য আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি, যেখানে আমাদের ৫০ বেডের একটি হাসপাতালে কমপক্ষে ১০ জন চিকিৎসক প্রয়োজন, সেখানে কোথাও একজন কোথাও কোথাও খুব বেশি হলে ৪ জন ডাক্তার রয়েছেন। সেখানে কিন্তু ডাক্তার থাকেন না। মানুষ তাহলে সেবা পাবে কীভাবে?
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিএমএ মহাসচিবকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় পতাকা এবং সংগঠনের পতাকা উত্তোলন করে চিকিৎসক সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। এ সময় জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। পরে তিনি শান্তির প্রতীক পায়রা ওড়ান।
প্রধানমন্ত্রী সম্মেলন উপলক্ষে অনুষ্ঠানে স্মরণিকার মোড়ক উন্মোচন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আধুনিক যুগে স্বাস্থ্যখাত বা চিকিৎসাসেবারও অনেক আধুনিকায়ন হয়ে গেছে। নতুন নতুন ডেফিনেশন এসে গেছে। নতুন নতুন চিকিৎসা শাস্ত্রও কিন্তু চলে এসেছে। কাজেই তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের চিকিৎসা সেবা ও শিক্ষার মানটা বাড়াতে হবে। যেন আমরা বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারি।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে প্রাইভেট হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজ খুব বেশি ছিল না, প্রথমবার সরকারে থাকার সময়ই আমি মেডিকেল যন্ত্রাংশ থেকে সকল ট্যাক্স প্রত্যাহার করে নেই বা কমিয়ে দেই যাতে করে আমাদের দেশের বেসরকারি খাতটা আরো উন্মুক্ত হয় এবং বেসরকারি খাতে আরো হাসপাতাল বা মেডিকেল কলেজ গড়ে উঠতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেজন্য আজকে চিকিৎসকও যেমন তৈরি হচ্ছে সেভাবে মানুষ সেবাটাও পাচ্ছে। কিন্তু সেবার মানটাকে আরো উন্নত করতে হবে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলামগুলোর দিকে আরো মনযোগ দেয়া দরকার, যাতে চিকিৎসা সেবাটা তারা যথাযথভাবে করতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজের অত্যন্ত পুরাতন জরাজীর্ণ অবস্থা। সেখানে শত বছরের পুরাতন ভবনও রয়েছে যদিও কেউ কেউ সেগুলোকে হেরিটেজ বলে। তবে, সেই হেরিটেজ মাথায় ভেঙ্গে পড়লে প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে আশংকা ব্যক্ত করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা একটি নতুন পরিকল্পনা তৈরি করেছি একটি অত্যন্ত আধুনিক মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল সেখানে আমরা নির্মাণ করে দেব। এরই মধ্যে দ্বিতীয় ইউনিট করে এর শয্যা সংখ্যা ৮শ’ থেকে বাড়িয়ে ১৩শ’ করা হয়েছে এবং নতুন হাসপাতাল করা হলে এই শয্যাসংখ্যা আরো বৃদ্ধি করা হবে।
সরকার প্রধান বলেন, বাংলাদেশে বর্তমানে মোট মেডিকেল কলেজের সংখ্যা ১১১টি। যার মধ্যে সরকারি ৪২টি এবং বেসরকারি ৬৯টি।
তিনি বলেন, তাঁর সরকার প্রতিটি জেলায় একটি করে মেডিকেল কলেজ তৈরি করতে চায়, যাতে করে নতুন চিকিৎসকের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি জেলার জনগণ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসা সেবা গ্রহণের সুযোগ পান। রাজশাহী ও চট্টগ্রামে নতুন দু’টি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় চালু করার জন্য উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সিলেটে আরও একটি মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি বিভাগে ১টি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হবে।
সরকারি ও বেসরকারি মিলে ২৮টি ডেন্টাল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ট্রমাটোলজি এন্ড রিহ্যাবিলেশনের (নিটোর) শয্যা সংখ্যা ৫০০ থেকে উন্নীত করে এক হাজার করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার ২০০৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১২ হাজার ৮৪৬ জন চিকিৎসক, ৫ হাজারেরও বেশি নতুন নার্স নিয়োগ দিয়েছে। স্পেশাল বিসিএস-এর মাধ্যমে আরও ৬ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হওয়ার পথে। স্বাস্থ্যসেবাকে মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার লক্ষ্য নিয়েই তাঁর সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, সংক্রামক ও অসংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ অনেক সাফল্য অর্জন করেছে। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দ থেকে বাংলাদেশকে পোলিওমুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা এরই মধ্যে আন্তর্জাতিকভাবে ভ্যাক্সিন এন্ড ইমুনাইজেশন অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছি।
তিনি বলেন, আমরা ২০১১ খ্রিস্টাব্দে জাতীয় স্বাস্থ্য নীতি প্রণয়ন করি। ‘জাতীয় ঔষধনীতি, ২০১৬’, ‘মানব দেহে অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন, ২০১৮’- সহ নানাবিধ আইন কাঠামো প্রণয়ন করা হয়েছে। এখন আমাদের নিজস্ব স্যাটেলাইট হয়ে গেছে, আমরা সারাদেশে ইন্টারনেট সুবিধা চালু করে দিয়েছি, প্রায় ৯৯ ভাগ জেলায় ব্রডব্যান্ড এরই মধ্যে চালু হয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. জাহিদ মালিক এবং কনফেডারেশন অব মেডিকেল এসেসিয়েশন অব এশিয়া এন্ড ওশেনিয়া অঞ্চলের সভাপতি ডা. রবীন্দ্রান আর নাইডু অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন। বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) সভাপতি ড. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া এবং বিএমএ মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।