পুনরায় নির্মাণ করা হবে পদ্মায় বিলীন হওয়া ‘আলোর স্কুল’

শরীয়তপুর প্রতিনিধি |

পদ্মায় বিলীন হওয়া শরীয়তপুরের চরাঞ্চলের আলোর স্কুল হিসেবে পরিচিত বসাকের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আগামী শিক্ষাবর্ষের আগেই পুনর্নির্মাণের আশ্বাস দিয়েছেন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য এনামুল হক শামীম। তিনি জানান, নতুন করে স্কুল ভবন নির্মাণের জন্য বিল পাশ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা মাথায় রেখে যত দ্রুত সম্ভব ভবন নির্মাণ করা হবে।

গত ২৯ ও ৩০ জুলাই এক কোটি ৮০ লাখ টাকা মূল্যমানের দুইটি পাকাভবনসহ বিদ্যালয়টির ৪০ শতাংশ জায়গা সম্পূর্ণরূপে পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে যায়।

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, জেলার নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা ইউনিয়নের ৮১ নং বসাকের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে স্থাপিত হয়। অত্র চরাঞ্চলের একমাত্র স্কুল হওয়ায় বিদ্যালয়টি আলোর স্কুল হিসেবে পরিচিত ছিল। ভাঙনের ঝুঁকিতে থাকায় ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যালয়টি একবার সরিয়ে নিয়ে বসাকের চর গ্রামের নতুন স্থানে ৪০ শতাংশ জায়গার ওপর পুনঃস্থাপন করা হয়। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়তে থাকায় শিক্ষা কার্যক্রম সচল রাখতে ২০১২ খ্রিষ্টাব্দে বিদ্যালয়টিতে একটি দ্বিতল ভবন নির্মাণ করা হয়। এরপর ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে আরও একটি একতলা ভবন নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৩৬৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু বিদ্যালয়টি পুরোপুরি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ায় এসব শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘চরের শিশুদের শিক্ষা লাভের একমাত্র প্রতিষ্ঠান ছিল বসাকের চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়ায় বিদ্যালয়ের প্রায় ৪শ’ শিক্ষার্থীর শিক্ষা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তবে স্থানীয় এমপি ও পানি সম্পদ উপমন্ত্রী মহোদয় দ্রুত বিদ্যালয়টি পুনর্নির্মাণের আশ্বাস দেওয়ায় আমরা নতুন করে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছি।’

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর যখন বিদ্যালয়ের পাকা ভবন দুইটি নির্মাণ করে, তখন পদ্মা নদী বিদ্যালয় থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে ছিল। ভাঙনের ঝুঁকিও তেমন একটা ছিল না। কিন্তু গত দুই বছর ধরে পদ্মা তীরবর্তী নড়িয়া ও জাজিরা এলাকার পদ্মার ডান তীর রক্ষার জন্য ৮ দশমিক ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ বাঁধ নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় পদ্মার বাম তীরে স্রোতের তীব্রতা বেড়েছে। যে কারণে চরআত্রা, নওপাড়া, কাঁচিকাটা এলাকায় ভাঙনের ঝুঁকি বেড়েছে।

শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, ‘বসাকের চর স্কুলটি রক্ষার জন্য বর্ষার আগেই অস্থায়ীভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ডাম্পিং করা হয়েছিল। কিন্তু, কোনোভাবেই ভাঙন রোধ করা সম্ভব হয়নি। চরআত্রা ও নওপাড়া এলাকার নদী ভাঙন রোধে সাড়ে ৫শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। আশা করি, ভবিষ্যতে এই এলাকার নদীভাঙন স্থায়ীভাবে রোধ করা সম্ভব হবে।’

এ বিষয়ে শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পানিসম্পদ উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম বলেন, ‘অনেক চেষ্টা করেও বিদ্যালয়টি রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু বিদ্যালয়ের কয়েকশ’ শিক্ষার্থীর পড়ালেখা যাতে ব্যহত না হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্টদের করণীয় বিষয়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব বিদ্যালয়ের জন্য নতুন জমি নির্ধারণ করতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের বলা হয়েছে। জমি পাওয়া মাত্রই নতুন করে বিদ্যালয়টি নির্মাণের কাজ শুরু হবে। আগামী শিক্ষাবর্ষের আগেই নতুন ভবনে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হবে।’


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0031499862670898