গাজীপুরে পুলিশের নির্যাতনে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যুর অভিযোগে বুধবার সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধ করেছে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। এসময় কয়েকটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। পরে পুলিশ লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন পুলিশ।
নিহত ওই ব্যবসায়ীর নাম রবিউল ইসলাম (৪০)। আব্দুল বাকীর ছেলে রবিউল গাজীপুর মহানগরীর ভোগরা বাইপাস পেয়ারা বাগান এলাকার মোবারক হোসেনের বাড়ি ভাড়া থেকে সুতার ব্যবসা করতেন।
বুধবার সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ওই ব্যবসায়ীর মৃত্যুর ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশের বিচারের দাবিতে দুই মহাসড়ক আটকে বিক্ষোভ শুরু করেন।
নিহতের পাশের কক্ষের এক ভাড়াটে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, গত শনিবার রাতে অনলাইন জুয়া খেলার অভিযোগে ৪ জনকে ধরে নিয়ে যায় বাসন থানার এসআই নুরুল ইসলাম ও মাহবুব। এরপর ৩ জনকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। পরে পুলিশ নিহত রবিউলের কাছে প্রথমে ১ লাখ টাকা দাবি করে। পরে নিহতের স্ত্রী থানায় গিয়ে ৩৫ হাজার টাকা দেয়। পরে তাকে ছেড়ে দেবে বলে পুলিশ রবিউলের স্ত্রীকে বাসায় চলে যেতে বলে। কিন্তু তারপরও তাকে ছাড়েনি পুলিশ। পরে রবিউলের কাছে আনেক টাকা আছে এমন সন্ধান পেয়ে পুলিশ নিহতের স্ত্রীর কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করে। পরে রবিউলের পরিবার ২ লাখ টাকা দিতে রাজি হলেও পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়নি। মঙ্গলবার রাতে পুলিশ ছেড়ে দেবে বলে নিহতের স্ত্রীকে থানায় ডেকে নিয়ে যায় এবং কাছে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয়। এরপর পুলিশ স্ত্রীকে জানায় রবিউলকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে, কিন্তু পরে সে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হয়েছে । সে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি রয়েছে। এরপর পরিবার হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারে সে মারা গেছে।
এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে প্রথমে ভোগড়া বাইপাস সড়কের ঢাকা-টাঙ্গাইল অংশে এবং পরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে। তবে নিহতের বাড়িতে গিয়ে তার স্ত্রী ও স্বজনদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
বাসন থানার ওসি মালেক খসরু খান জানান, বুধবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এ খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী লাঠি সোটা নিয়ে প্রথমে ভোগড়া বাইপাস সড়কের ঢাকা-টাঙ্গাইল অংশে এবং পরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবরোধ সৃষ্টি করে। একপর্যায়ে তারা ওই মহাসড়কে চারটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয় ভোগড়া বাইপাস মোড়ে পুলিশবক্সেও ভাঙচুর চালায়। এতে ওই এলাকায় গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলে দেড় ঘন্টা পর ওই পথে গাড়ি চলাচল শুরু করে।
বাসন থানার ওসি মালেক খসরু খান সাংবাদিকদের জানান, থানার দুই এসআই রবিউলকে আটক করে থানায় নিয়ে এসেছিলেন। পরে তার স্বজন ও স্থানীয়দের আবেদন এবং তিনি ভালোলোক সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতে রাতে ছেড়ে দেয়া হয়। স্থানীয় লোকজন তাকে নিয়ে যাওয়ার সময় তিনি গাড়িচাপায় গুরুতর আহত হন। নিহতের স্বজনরা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। তবে স্বজন ও এলাকাবাসী রটান যে রবিউল পুলিশ হেফাজতে মারা গেছেন।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া জানান, রাত ৩টার দিকে অচেতন অবস্থায় জরুরী বিভাগে আনা হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার শরীরে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে জানতে পেরেছি।
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ঘটনাটি তদন্তে অতিরিক্ত কমিশনার মো. দেলোয়ার হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে অন্যরা হলেন, উপ-কমিশনার আবু তোরাব মোহাম্মদ শামসুর রহমান ও অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. খায়রুল ইসলাম। তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
পোস্ট মর্টেমের আগের মৃত্যুর কারণ বলা ঠিক হবে না। রবিউলের মৃত্যুতে যদি কোন পুলিশের অবহেলা থাকে বা অপরাধী হয় তবে সে যে-ই হোক তার বিচার হবে।