ক্ষমতায় অবৈধভাবে টিকে থাকার জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা আওয়ামী লীগ ঘটাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এ দেশের সমস্ত অর্জনগুলোকে বিসর্জন দিয়ে, ধ্বংস করে আওয়ামী লীগ এ ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে। সরকার তার এজেন্টদের দিয়ে ঘটিয়ে গণতন্ত্রের জন্য বিএনপির সংগ্রামকে ভিন্ন খাতে নিতে চাচ্ছে।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আজ রোববার দুপুরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল। সমসাময়িক বিষয় নিয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ যে সংকটগুলো রয়েছে, মানুষের নিরাপত্তার অভাব—এসব থেকে দৃষ্টি দূরে সরাতে, জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য এ ধরনের ঘটনাগুলো ঘটানো হচ্ছে।
বিভিন্ন মন্দির ও পূজামণ্ডপে হামলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকার সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদাসীনতার কারণে এগুলো হয়েছে। তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে গোটা বিষয়ে। সরকারের মদদপুষ্ট হয়ে এ ঘটনাগুলো ঘটছে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে তখনই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও তাদের ঘরবাড়ি ভাঙচুর হয়েছে।
দুষ্কৃতকারীরা প্রায় সবাই ক্ষমতাসীন দলের লোক মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দুর্গাপূজার প্রাক্কালে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ আশ্বাস দেওয়ার পরও কেন পবিত্র কোরআনের অবমাননা, মন্দিরে হামলা, প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটল। সাধারণ মানুষের মতো আমরাও একমত যে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিলে নানুয়া দীঘিপাড়ের ঘটনাটি এত নির্মম অমানবিকতার দিকে গড়াত না। নোয়াখালীর চৌমুহনীতে ছয় ঘণ্টা ধরে প্রশাসনকে বারবার বলা হলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
মির্জা ফখরুল বলেন, পবিত্র কোরআনের অবমাননা, মন্দিরে নিরাপত্তা না দিয়ে হামলা–ভাঙচুর–সংঘাতকে উসকে দিয়ে, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চক্রান্তে মেতে উঠেছে সরকার। তিনি বলেন, প্রথম দিন থেকেই সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতারা কুমিল্লার ঘটনায় বিএনপিকে জড়ানোর অপচেষ্টা করছেন।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, এ সরকার একটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে, ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার লক্ষ্যে হাজার বছরের যে ঐতিহ্য, ধর্মের সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ—সেটাকে বিনষ্ট করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে।
সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান মির্জা ফখরুল। দেশবাসীকে সজাগ থাকারও আহ্বান জানান তিনি।
মির্জা ফখরুলের অভিযোগ, প্রায় এক লাখ লোক ভাড়া করা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিএনপির নেতাদের নামে গুজব ছড়ানোর জন্য। যে কথোপকথনটি ভাইরাল করা হয়েছে বিএনপির নেতা আমান উল্লাহ আমানের নামে সেটি অসত্য, ভুয়া, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং সুপার এডিটেড।
এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা পত্রপত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে দেখেছি যে প্রায় এক লাখ মানুষকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাজ করার জন্য তারা ভাড়া করেছে। তাদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়েছে।’
নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি নেতারা বলেন, তাঁরা আজ নির্বাচন নিয়ে কোনো কথা বলবেন না। তবে সংবাদ সম্মেলন থেকে উঠে যাওয়ার সময় গয়েশ্বর চন্দ্র রায় পাশ থেকে বলেন ‘নির্বাসিত নির্বাচন’।
‘হিন্দুদের তাড়ালে সম্পত্তি, রাখলে ভোট’
কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলা প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, এটা সরকারের অনেক নাটকের মধ্যে আরেকটি নাটক। গত ৭০ বছরে যতগুলো দাঙ্গা হয়েছে, সবই রাজনৈতিক কারণে এবং গুজবনির্ভর। তবে কুমিল্লার ঘটনায় প্রশাসনের লোক দিয়ে গুজব প্রচার করা হয়েছে। যারা মন্দিরে হামলা করেছে, তাদের পেছনে সরকারের মদদ আছে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কুমিল্লার ঘটনা খুবই নিম্নমানের একটা পরিকল্পনা। কুমিল্লার ওই থানায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। জনগণের আস্থাহীন সরকার এর চেয়ে আরও নাটকীয় ঘটনা ঘটাতে পারে।
গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরও বলেন, এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের বা সরকারের একটা লাভ আছে। হিন্দুদের তাড়াতে পারলে সম্পত্তি পায়, আর রাখতে পারলে ভোট পায়— দুটিতেই লাভ। সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে, কোনো সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে তা নয়।
বিএনপির নেতৃত্বের ওপর পরিকল্পিতভাবে দোষ চাপানো হচ্ছে উল্লেখ করে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান বলেন, যখন জনগণ একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীন নির্বাচনের দাবিতে মাঠে, তখন দৃষ্টিভঙ্গি অন্যদিকে সরানোর জন্য বিভিন্ন ঘটনা ঘটানো হচ্ছে।
‘ফায়দা লুটতে চাচ্ছে সরকার’
দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী বলেন, কুমিল্লা ও সারা দেশে হামলার ঘটনা নতুন কিছু নয়। এর আগে রামু, কালীগঞ্জ, রাউজান, বড়াইগ্রাম ও নাসিরনগরে হামলা হয়েছে এবং এসব হামলা যখন হয়, সেগুলোর সঙ্গে সরকারি দলের লোকেরা জড়িত থাকে। কুমিল্লায় ছয় ঘণ্টা ধরে হামলা ও লুটপাট চলল অথচ সেখানে পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা দাঁড়িয়েছিলেন। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করে ফায়দা লুটতে চাচ্ছে সরকার, তাদের অনিবার্য ভরাডুবি সেটাকে রক্ষা করার জন্য।
নোয়াখালীর চৌমুহনীর সাবেক সাংসদ বিএনপির নেতা বরকত উল্লাহ বলেন, কুমিল্লা ও দেশের বিভিন্ন জায়গায় সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে।
চৌমুহনী উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাক্ষ্যা চন্দ্র দাস বলেন, চৌমুহনীতে সাতটি মন্দির ভাঙা হয়েছে, দেড় থেকে দুই ঘণ্টার মধ্যে লুটপাট হয়েছে, অগ্নিসংযোগ হয়েছে। বাজারে পুলিশ ও বিজিবির সদস্যরা দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু কোনো উদ্যোগ নেননি।