পেছনেই বসা খুনি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ইসমাইল হোসেন জিসান। বয়স ২৪। ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। রাজধানীর শ্যামলীর ২ নম্বর রোডে বন্ধুর সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন। তিনি গাজীপুর জেলার গাছা থানার কাথোরা গ্রামের সাব্বির হোসেন শহীদের ছেলে। পড়াশোনার ফাঁকে ইসমাইল রাইড শেয়ারিং সার্ভিস পাঠাওয়ের মোটরসাইকেল চালাতেন। গত ১২ মে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থেকে হঠাৎ নিখোঁজ হন ইউনিভার্সিটির ছাত্র ইসমাইল হোসেন জিসান। তিনি পাঠাওয়ের মোটসাইকেল চালক ছিলেন। ওই দিন সকালে জিসানের পাঠাও মোটরসাইকেল ভাড়া করে গাজীপুরের গাছা থানা এলাকায় যান এক যাত্রী। এর পর থেকে তার কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। ইসমাইলের সন্ধান না পেয়ে রাতে গাছা থানায় একটি জিডি করেন তার বাবা সাব্বির হোসেন। এর একদিন পর ছেলের কোনো খোঁজ না পাওয়ায় শেরেবাংলা নগর থানায়ও জিডি করেন তিনি। এর পরই অভিযানে নামে পুলিশ। মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মির্জা মেহেদী তমাল।

গাছা ও শেরেবাংলা নগর থানাপুলিশ এক অভিযানে গাছা এলাকার একটি ভাড়া বাড়ি থেকে হাসিবুর নামের এক যুবককে গ্রেফতার করে। হাসিবুর কামারজুরি বাজার এলাকায় খাবার হোটেলের ব্যবসা করেন এবং ওই এলাকার জাহাঙ্গীর আলম নামের এক ব্যক্তির বাসায় ভাড়া থাকেন। এ সময় সেখান থেকে জিসানের মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে হাসিবুর জিসানকে হত্যার কথা স্বীকার করেন এবং তার মৃতদেহ তার বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে ফেলা হয়েছে বলে জানান। শেরেবাংলা নগর থানা ওসি (অপারেশন) আহাদ আলী বলেন, ২৩ মে ওই বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে জিসানের লাশ উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ হাসিবুরকে জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারে, পাঠাওয়ের মোটরসাইকেলটি ছিনতাইয়ের জন্য যাত্রী সেজে জিসানের বাইকে চড়ে ছিল। পরে তাকে হত্যা করে বাইক ছিনিয়ে নেয়। গত রোববার দিবাগত মধ্যরাতের ঘটনা। রাজধানীর মালিবাগ ফ্লাইওভারের তৃতীয় তলায় মিলন (৩৫) নামে এক যুবককে গলা কেটে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। তারা মিলনের মোটরসাইকেলটিও ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
মিলন অ্যাপসভিত্তিক রাইড শেয়ারিং ‘পাঠাও’য়ের চালক ছিলেন। দুই সন্তানের জনক মিলন পরিবারের সঙ্গে মিরপুর-১ গুদারাঘাট এলাকায় থাকতেন। ময়নাতদন্তের জন্য তার মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল দুপুরে শাহাজানপুর থানার (এসআই) আতিকুর রহমান বলেন, গুরুতর অবস্থায় মিলনকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তার গলায় সাতটি সেলাই দেন। পরে চিকিৎসকদের নির্দেশে মিলনকে হৃদরোগ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

পাঠাও অফিসে তথ্যের বরাতে তিনি আরও বলেন, মিলনের লাস্ট কল ছিল ৭ আগস্ট। হয় এর মাঝে সে পাঠাও চালায়নি অথবা চালিয়ে থাকলেও অ্যাপস ছাড়াই যাত্রী পরিবহন করেছেন। ঘটনার পর ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটিও উধাও। ধারণা করা হচ্ছে, যাত্রীবেশে ছিনতাইকারী তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে মোটরসাইকেলটি নিয়ে পালিয়েছে। শুধু মোটরবাইক নয়, উত্তরায় উবার চালককে গলা কেটে হত্যা করে গাড়ি ছিনতাইয়ের চেষ্টা করা হয়। দুর্বৃত্তরা গাড়িটি নিতে না পারলেও চালককে হত্যা করে গেছে। এ ঘটনায় খুনিরা ধরা পড়েছে। ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে। এ তিনটি ঘটনাই নয়, আরও বেশ কয়েকটি ঘটনা রাজধানীর সড়কে ঘটেছে। যাত্রী বেশি খুনি পেছনের সিটে বসা রয়েছে, তা পাঠাও বা উবার চালক ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারে না। যাত্রীর কথামতো চালক কোনো নীরব জায়গায় যাওয়া মাত্রই তারা আক্রান্ত হচ্ছেন। কেউ প্রাণ হারাচ্ছেন, কেউ জীবন জীবিকার অবলম্বনটি ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। যারা প্রাণে বেঁচে যাচ্ছেন, তাদের পথে বসে যেতে হচ্ছে। আর প্রিয় মানুষকে হারিয়ে পরিবারের সদস্যদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় এখন উবার, পাঠাও চালকরা। পুলিশ বলছে, যারা অ্যাপস থাকা সত্ত্বেও অ্যাপস ব্যবহার করছে না, তারাই বিপদে পড়ছে। তাই মধ্যরাতে কোনো নীরব জায়গায় রাইড শেয়ারিং করা থেকে বিরত থাকা উচিত। আর অবশ্যই অ্যাপস ব্যবহার করেই রাইড শেয়ারিং করতে হবে। নিজেদের সচেতন থেকেই রাইড শেয়ারিং করতে হবে।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান - dainik shiksha সফটওয়্যারে কারিগরি ত্রুটি/ ইনডেক্সধারী শিক্ষকদের তথ্য ইমেইলে আহ্বান শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! - dainik shiksha শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বৈত নীতি! হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে শিক্ষকের মৃত্যু লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা - dainik shiksha লিখিততে প্রক্সি দিয়ে পার, মৌখিক পরীক্ষায় এসে ধরা কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে - dainik shiksha এসএসসির খাতা চ্যালেঞ্জের আবেদন যেভাবে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে শিক্ষক কেনো বদলি চান - dainik shiksha শিক্ষক কেনো বদলি চান ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে - dainik shiksha ১৮তম শিক্ষক নিবন্ধনের লিখিত পরীক্ষা হতে পারে জুলাইয়ে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035209655761719