পেনশনের টাকা ভাগাভাগি : দুই দিন পর দাফন হলো সেই বাবার লাশ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি |

চাকরি থেকে অবসরের টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে দ্বন্দ্বে দুই দিন ধরে বাড়ির সড়কে বাবার লাশ ফেলে রাখেন সন্তানেরা। মৃত্যুর দুই দিন পর সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) সকাল ১০টায় জানাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয় মনির আহমদ (৬৫) নামে পদ্মা অয়েল কোম্পানির অবসরপ্রাপ্ত ওই কর্মকর্তার লাশ। তবে দাফনের সময় উপস্থিত ছিলেন না তিন মেয়ের কেউই।

গত শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে চট্টগ্রাম নগরীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান মনির আহমদ। এরপর শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ এনে রেখে দেওয়া হয় বাড়ির পাশের সড়কে। এরপর অবসরে টাকা ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে ভাইবোনদের মধ্যে বিবাদ শুরু হয়। 

ঘটনাটি কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কেরানী বাপের বাড়িতে ঘটে। এই ঘটনা নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সর্বত্র নিন্দার ঝড় ওঠে। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন মনির আহমদের লাশ দাফনের তাগাদা দেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মনির আহমদের সংসারে স্ত্রী,২ ছেলে ও ৩ মেয়ে। তিনি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে ৫০ লাখ টাকা পেনশন পান। সেই টাকা ব্যাংকে তার নামের অ্যাকাউন্টেই ছিলো।

স্ত্রী দিলোয়ারা বেগম (৫৫) ও বড় ছেলে মো. জাহাঙ্গীর আলমের অভিযোগ, মনিরের মেয়ে বেবি আকতার বাবাকে থেরাপি দেওয়ার কথা বলে চাতরী চৌমুহনী শাখার এবি ব্যাংকে নিয়ে ৩০ লাখ টাকা সরিয়ে ফেলেন। 

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের মধ্যস্থতায় আজ লাশ দাফন করা হয়। এ সময় স্ত্রী ও বড় ছেলে উপস্থিত ছিলেন। তবে ছোট ছেলে মো. আলমগীর সৌদি আরবে থাকায় আসতে পারেননি। তিন মেয়ের কেউই লাশ দাফনের সময় ছিলেন না। রোববার রাতেই তারা শ্বশুরবাড়ি চলে গেছেন। 

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মেয়ে লিপি আকতার অভিযোগ করেন, হাসপাতাল থেকে লাশ বাড়ি নেওয়ার পর থেকে ভাই জাহাঙ্গীর আলম তাদের তিন বোনকে একটি কক্ষে আটকে রেখে মারধর করেন। এ কারণে বিকেলে তিনি শ্বশুরবাড়ি চলে যান। রোববার রাতে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় অপর দুই বোন উদ্ধার হওয়ার পর তারাও শ্বশুরবাড়ি চলে যান। আর বাবার দাফনের নির্ধারিত সময় না জানার কারণে তিনি ওই সময় উপস্থিত থাকতে পারেননি।

বড়উঠান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, সত্যি দুঃখজনক ঘটনা আমার ইউনিয়নের মধ্যে। এ ঘটনায় আমরা জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে একটি বৈঠকের সিদ্ধান্ত হয়। মনির আহমদের অসুস্থতার কারণে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়েছে। সেগুলো বাদ দিয়ে তার অ্যাকাউন্টে যে টাকা আছে সেগুলো সন্তানদের মধ্যে ভাগ হবে। সে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আজ সকালে লাশ দাফন করা হয়েছে। 

চেয়ারম্যান আরও বলেন, রোববার বাবার অবসরের টাকার ভাগ নিয়ে বিরোধের জেরে দুই বোনকে আটকে মারধরের বিষয়টি জানানোর পর তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে আমি ইউপি সদস্যকে পাঠাই এবং দুই মেয়েকে উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া লাশ বহনের অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া ১৭ হাজার ৫০০ টাকা আমি নিজ থেকে দিয়ে দিয়েছি। 

কর্ণফুলী থানার ওসি দুলাল মাহমুদ বলেন, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও মৃতের স্বজনদের উপস্থিতিতে সমঝোতার মাধ্যমে আজ সকালে লাশ দাফনের ব্যবস্থা করা হয়।


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
শিক্ষক লাঞ্ছিত ও পদত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদ, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি বিটিএর - dainik shiksha শিক্ষক লাঞ্ছিত ও পদত্যাগে বাধ্য করার প্রতিবাদ, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি বিটিএর মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি - dainik shiksha মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের দাবি আন্দোলনে অসুস্থ ১১ নার্সিং শিক্ষার্থী - dainik shiksha আন্দোলনে অসুস্থ ১১ নার্সিং শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই - dainik shiksha প্রধান শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগপত্রে সই জলবায়ু পরিবর্তন মারাত্মক প্রভাব ফেলছে শিক্ষা খাতে - dainik shiksha জলবায়ু পরিবর্তন মারাত্মক প্রভাব ফেলছে শিক্ষা খাতে বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ - dainik shiksha বয়স ৩৫ করার দাবিতে শাহবাগে চাকরি প্রত্যাশীদের মহাসমাবেশ এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য - dainik shiksha এমপিওভুক্তি: দীপু মনির ভাই টিপুচক্রের শতকোটি টাকার বাণিজ্য অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা - dainik shiksha অধ্যক্ষকে পদত্যাগে বাধ্য, আওয়ামী লীগ নেতাকে স্থলাভিষিক্ত করার চেষ্টা ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর - dainik shiksha ভুয়া নিয়োগে এমপিও: এক মাদরাসার ১৫ শিক্ষকের সনদ যাচাই করবে অধিদপ্তর বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন - dainik shiksha বার্ষিক পরীক্ষার উদ্দীপকসহ ও উদ্দীপক ছাড়া প্রশ্ন একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী - dainik shiksha একসঙ্গে তিন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন তুলতেন মাদরাসা কর্মচারী কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা: একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0029149055480957