পেনশন বৈষম্য দূর করুন

মো. কামরুজ্জামান |

জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫-তে পেনশনপ্রাপ্ত অবসরভোগী সরকারি চাকরিজীবীদের মাসিক নীট পেনশনের পরিমাণ ৬৫ বছরের উর্ধ্বদের ক্ষেত্রে ৫০% এবং অন্যদের ক্ষেত্রে ৪০% বৃদ্ধি করা হয়েছে।

অথচ দেখা যায়, চাকরিরত সরকারি চাকরিজীবীদের উক্ত জাতীয় বেতন স্কেলের কোনো কোনো স্কেলে শতভাগ বেতন এবং অন্যান্য স্কেলে শতভাগের কাছাকাছি বেতন বৃদ্ধি করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে বর্তমান জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ থেকে মাঝামাঝি দুটি স্কেলের বেতন বৃদ্ধির হার নিম্নে উল্লেখ করা হল। উল্লেখ্য, বর্তমান জাতীয় বেতন স্কেলে ২০টি স্কেল আছে। এর মধ্যে মাঝামাছি দুটি স্কেল হচ্ছে, দশম স্কেল ও এগারোতম স্কেল।

বর্তমান জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫- এর দশম স্কেলের প্রারম্ভিক বেতন হচ্ছে ১৬,০০০ টাকা। আর এ স্কেলের পূর্ববর্তী জাতীয বেতন স্কেল, ২০০৯-তে পূর্ববর্তী জাতীয় বেতন স্কেলের প্রারম্ভিক বেতন হচ্ছে ৮,০০০ টাকা।

অর্থাৎ দশম স্কেলে বর্তমান জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫-তে পূর্ববর্তী জাতীয় বেতন স্কেল, ২০০৯ থেকে ১০০% বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫-তে এগারোতম স্কেলে প্রারম্ভিক বেতন হচ্ছে ১২,৫০০ টাকা।

আর এ স্কেলের পূর্ববর্তী জাতীয় বেতন স্কেল, ২০০৯-তে প্রারম্ভিক বেতন হচ্ছে ৬,৪০০ টাকা। অর্থাৎ এগারোতম স্কেলে বর্তমান জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫-তে পূর্ববর্তী জাতীয় বেতন স্কেল, ২০০৯ থেকে ৯৫% বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে।

এখন যদি নিুতম বৃদ্ধিটাও ধরা হয়, তাহলে দেখা যায়- কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন পূর্ববর্তী জাতীয় বেতন স্কেল, ২০০৯ থেকে ৯৫% বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ বর্তমান জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫-তে ৬৫ বছরের উর্ধ্বদের ক্ষেত্রে ৫০% পেনশন বৃদ্ধি করা হয়েছে।

অর্থাৎ পেনশন প্রাপ্ত অবসরভোগী সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন বর্তমান কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীদের তুলনায় ৯৫%-৫০% = ৪৫% কম বৃদ্ধি করা হয়েছে। এটা অযৌক্তিক ও বিরাট বৈষম্য।

এখন দেখা যাক, পূর্ববর্তী জাতীয় বেতন স্কেল, ২০০৯-তে এর পূর্বের জাতীয় বেতন স্কেল, ২০০৫ থেকে উক্ত দশম ও এগারোতম স্কেলে কী হারে বেতন বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং কী হারে পেনশন বৃদ্ধি করা হয়েছিল? জাতীয় বেতন স্কেল, ২০০৯-তে পেনশনপ্রাপ্ত অবসরভোগী সরকারি চাকরিজীবীদের মাসিক নীট পেনশনের পরিমাণ ৬৫ বছরের উর্ধ্বদের ৫০% এবং অন্যদের ক্ষেত্রে ৪০% বৃদ্ধি করা হয়েছিল। অর্থাৎ এই একই হারে জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫-তে পেনশন বৃদ্ধি করা হয়।

জাতীয় বেতন স্কেল, ২০০৯-তে দশম স্কেলে প্রারম্ভিক বেতন ছিল ৮,০০০ টাকা। আর এ স্কেলর পূর্ববর্তী জাতীয় বেতন স্কেল, ২০০৫-তে একই স্কেলে প্রারম্ভিক বেতন ছিল ৫,১০০ টাকা।

অর্থাৎ দশম কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীদের মাসিক বেতন বর্তমান জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫-এর পূর্ববর্তী জাতীয় বেতন স্কেল, ২০০৯-তে তারও পূর্ববর্তী জাতীয় বেতন স্কেল, ২০০৫ থেকে ৫৭% বৃদ্ধি পেয়েছিল। জাতীয় বেতন স্কেল, ২০০৯-তে এগারোতম স্কেলে প্রারম্ভিক বেতন ছিল ৬,৪০০ টাকা। আর এ স্কেলর পূর্ববর্তী জাতীয় বেতন স্কেল, ২০০৫-তে প্রারম্ভিক বেতন ছিল ৪,১০০ টাকা। অর্থাৎ এগারোতম স্কেল, ২০০৫ থেকে ৬৫% বৃদ্ধি পেয়েছিল।

ওপরের আলোচনা ও বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়, পূর্ববর্তী জাতীয় বেতন স্কেল, ২০০৯-তে যেখানে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বৃদ্ধির হার দশম স্কেল ও এগারোতম স্কেল ছিল যথাক্রমে ৫৭% ও ৫৬%, সেখানে উক্ত জাতীয় বেতন স্কেল ৬৫ বছরের উর্ধ্বদের ক্ষেত্রে ৫০% পেনশন বৃদ্ধি করা হয়েছিল। অর্থাৎ জাতীয় বেতন স্কেল, ২০০৯-তে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীদের তুলনায় পেনশনারদের পেনশন দশম স্কেল ৫৭%-৫০% = ৭% এবং এগারোতম স্কেল ৫৬%-৫০% = ৬% কম বৃদ্ধি করা হয়েছিল।

এটাও ছিল একটা বৈষম্য; তবে জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫-এর তুলনায় তা ছিল নগণ্য। যেখানে জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫-তে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য হচ্ছে এক যুগান্তরকারী বেতন স্কেল এবং যে বেতন স্কেলে তারা সার্বিকভাবে সন্তুষ্ট হয়েছে, সেখানে পেনশনারদের প্রতি ২০০৯ সালের তুলনায় বিরাট বৈষম্য করা হয়েছে।

ধারণা করা হয় যে, পেনশনারদের পেনশন বৃদ্ধিতে এ বৈষম্য বেখেয়ালে বা ভুলে হয়েছে। এখানে উল্লেখ্য যে, সে সময় তাড়াহুড়ো করে জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ ঘোষণা করায় তখন তাতে কিছু অসঙ্গতি ও জটিলতা দেখা দেয়।

পরবর্তীকালে সরকারের কাছে যখন কর্মরত ভুক্তভোগীরা সে সমস্ত অসঙ্গতি ও সমস্যা তুলে ধরেন, তখন সরকার সে সমস্ত অসঙ্গতি ও সমস্যা দূর করে দেয়। কিন্তু চাকরিরতদের তুলনায় পেনশনের হার বৃদ্ধিতে যে বিরাট বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে, মনে হয় তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট কেউই তুলে ধরেননি।

শোনা যাচ্ছে, মুদ্রাস্ফীতিজনিত (রহভষধঃরড়হ) ক্ষতির প্রতিকার ও দেশের অর্থিক অগ্রগতির সুফল সরকারি চাকরিজীবীদের প্রদানের জন্য সরকার উদ্যোগ নিচ্ছে এবং তাই আগামী জুলাই থেকে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন সে হারে বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। উল্লেখযোগ্য আর্থিক অগ্রগতির কারণে বাংলাদেশ কিছুদিন পূর্বে ‘নিুবিত্ত’ দেশ থেকে ‘মধ্যবিত্ত’ দেশে উত্তীর্ণ হয়েছে।

এ পরিপ্রেক্ষিতে পেনশনপ্রাপ্ত অবসরভোগী সরকারি চাকরিজীবীদের একান্ত চাওয়া হচ্ছে, জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫-তে কর্মরত সরকারি চাকরিজীবীদের তুলনায় পেনশনারদের পেনশন বৃদ্ধিতে যে বৈষম্য হয়েছে, তা দূর করা হোক এবং আগামী জুলাইয়ে সরকার কর্মরত সরকারি চাবরিজীবীদের যে আর্থিক সুবিধা দিতে যাচ্ছে বলে জল্পনা-কল্পনা চলছে- তা যদি দেয়া হয়, তাহলে পেনশনারদেরকেও সে সুবিধা সমহারে প্রদান করুন।

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা, মিরপুর, ঢাকা


পাঠকের মন্তব্য দেখুন
ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী - dainik shiksha ঢাকার তাপমাত্রা দেখে স্কুল বন্ধের সিদ্ধান্ত নয়: শিক্ষামন্ত্রী আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha আরো ৭২ ঘণ্টার হিট অ্যালার্ট জারি ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা - dainik shiksha ফাঁস হওয়া প্রশ্নেই প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে - dainik shiksha এসএসসি পরীক্ষার ফল ১০ বা ১১ মে কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ - dainik shiksha কুমিল্লায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ঘণ্টা চালুর নির্দেশ দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে - dainik shiksha প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শনিবারের ছুটি বহাল থাকছে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0030810832977295