নতুন পে স্কেলের বৈষম্য দূর করতে টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এই টাস্কফোর্স ১৪ সপ্তাহের মধ্যে পদোন্নতির সোপান তৈরি করে সমাধানের সুপারিশ করবে। এর আলোকে ব্যবস্থা নেবে সরকার। এ ছাড়া কোন কোন সেক্টরে ক্যাডার-ননক্যাডার বৈষম্য সৃষ্টি হবে তার তালিকা তৈরি করবে প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটি।
তালিকা তৈরির পর সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেবে সরকার। গতকাল অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে চার সচিবের সঙ্গে প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটির বৈঠকে এসব সিদ্ধান্ত হয়। বৈঠক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, অর্থসচিব মাহবুবুর রহমান, জনপ্রশাসনসচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এবং শিক্ষাসচিব সোহরাব হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।
প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের সভাপতি বাহাউদ্দিন নাসিম, প্রকৃচি স্টিয়ারিং কমিটির সচিব মোবারক আলী, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. এম ইকবাল আর্সলান, স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য স ম গোলাম কিবরিয়া প্রমুখ।
বৈঠক শেষে প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটির নেতা বাহাউদ্দিন নাসিম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। বৈঠক খুবই ফলপ্রসূ। আশা করি, শিগগিরই সব কিছুর সমাধান হবে।’ প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটি তাদের ঘোষিত কর্মসূচি প্রত্যাহার করবে কি না জানতে চাইলে নাছিম বলেন, ‘১১ তারিখ থেকে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি আমাদের পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি। এ কর্মসূচি প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।’
কর্মবিরতি পালন করলেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা
অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে বৈষম্য নিরসনের দাবিতে দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট পালিত হয়েছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির মোর্চা বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি পালিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
বেতন কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের পদের অবনমন ও বৈষম্য নিরসন না করা হলে ১১ জানুয়ারি থেকে লাগাতার কর্মবিরতির ঘোষণা রয়েছে শিক্ষকদের। গত ২ জানুয়ারি ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাধারণ সভা শেষে ১১ জানুয়ারি থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি ও ৭ জানুয়ারি সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের সামনে বটতলা প্রাঙ্গণে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির কর্মবিরতি ও অবস্থান ধর্মঘট পালিত হয়। এই কর্মসূচিতে শতাধিক শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি অধ্যাপক ইমদাদুল হক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াতুল ইসলাম, অধ্যাপক আ জ ম শফিউল আলম ভূঁইয়া, অধ্যাপক লুত্ফর রহমান প্রমুখ।
মাকসুদ কামাল বলেন, ‘আট মাস ধরে আমরা শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করেছি। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার ক্ষতি হয় এমন কর্মসূচি দিইনি। কিন্তু এখন দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। আমরা আবারও বলছি, দাবি মেনে নেওয়া না হলে ১১ জানুয়ারি থেকে পূর্বঘোষিত লাগাতার কর্মবিরতি ছাড়া কোনো বিকল্প থাকবে না।’
ইমদাদুল হক বলেন, ‘এই আন্দোলন শিক্ষকদের বেতনের পরিমাণ বৃদ্ধি নিয়ে নয়, মর্যাদার আন্দোলন। আমরা ছাত্রদের জিম্মি করতে চাই না বলেই পেট্রলবোমাকে উপেক্ষা করে ক্লাস চালু রেখেছি। শুক্রবার ছুটির দিনেও ক্লাস করতে হয়েছে। অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতিতে যেতে হলে এর দায় শিক্ষকরা নেবেন না। যারা শিক্ষকদের নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে দায় তাদের ওপরই বর্তাবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান ধর্মঘট পালন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষক সমিতি এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের ‘গেইট গ্যাদারিং’
নতুন বেতন কাঠামোয় পদবৈষম্য দূর করাসহ তিন দফা দাবিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চত্বরে ‘গেইট গ্যাদারিং’ কর্মসূচি পালন করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। এর আগে গত বুধবার এক সভায় ‘গেইট গ্যাদারিং’ শীর্ষক আন্দোলনের এ কর্মসূচি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী গতকাল সকালে সর্বস্তরের কর্মকর্তা কাজ বন্ধ রেখে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় চত্বরে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এ সময় বাইরে থেকে কাউকে ব্যাংক চত্বরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি।
‘গেইট গ্যাদারিং’য়ের সময় বাংলাদেশ ব্যাংক অফিসার্স ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান মোল্লা বলেন, ‘গভর্নর বলেছেন, আমাদের দাবি পূরণের দায়িত্ব তিনি নিচ্ছেন। কিন্তু আমরা এতে সন্তুষ্ট নই। আমরা আর কথায় বিশ্বাস করতে চাই না। বাস্তবায়ন চাই।’ দাবি মানা না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
দাবি আদায়ে আগামী ১০ ও ১১ জানুয়ারি সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এবং ১২-১৪ জানুয়ারি সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত একই ধরনের কর্মসূচি পালন করা হবে বলে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শাহরিয়ার সিদ্দিকী জানিয়েছেন। এর মধ্যে সরকার দাবি মেনে না নিলে ১৫ জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা গণছুটিতে যাবেন বলে কাউন্সিলের সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান মোল্লা জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অভিযোগ, অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে তাঁদের মর্যাদাহানি করা হয়েছে। এর আগে সব বেতন স্কেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক, বিসিএস ক্যাডার ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা একই স্কেল বা গ্রেডভুক্ত থাকলেও নতুন বেতন কাঠামোয় সহকারী পরিচালক পদ এক ধাপ নামিয়ে নবম গ্রেড করা হয়েছে। আর বিসিএস ক্যাডার ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অষ্টম গ্রেডে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বেতন স্কেলের গেজেটে বাংলাদেশ ব্যাংককে রাষ্ট্রীয় অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে দেখানো হয়েছে।