শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান বলেছেন, পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে এমন গুজব ছড়িয়েছে। তিনি বলেন, পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকার বেশিই নির্ধারিত হবে। আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে মজুরি বোর্ড ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করবেন।
তৈরিপোশাক শিল্পে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার (৩০ অক্টোবর) মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ চলাকালে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান।
বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের যে দাম তাতে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কত হওয়া উচিত বলে আপনারা মনে করেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কি সম্ভব? আমি যেখানে বসে আছি এখান থেকে আমি এর উত্তর দিতে পারব না। ন্যূনতম মজুরি বোর্ড এটা নির্ধারণ করবে।
মালিকপক্ষ ১০ হাজার ৪০০ টাকার যে প্রস্তাব দিয়েছে ন্যূনতম মজুরি কি তার থেকে বেশি হবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, অবশ্যই বেশি হবে। পোশাক কারখানার মালিকপক্ষ যে প্রস্তাব দিয়ে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি তার থেকে বেশি অবশ্যই নির্ধারণ হবে। মজুরি বোর্ড বসে আলাপ-আলোচনা করে নির্ধারণ করবে।
একই প্রশ্নের উত্তরে শাজাহান খান বলেন, মালিকপক্ষ এবং শ্রমিকপক্ষ দুটি প্রস্তাব দেবে। তারপর দুই পক্ষ বার্গেইনিং করবে। ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান একটি জায়গায় সুপারিশ করবে। এরপর মন্ত্রণালয়ে আসে, সেখানে প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেন, উনি সাধারণত বাড়িয়ে দেন। এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে, এটা মানতে হবে সবাইকে।
এর আগে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করতে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর থেকে ৫ বছরের জন্য নতুন মজুরি নির্ধারণ করা হয়। আগামী ৩০ নভেম্বর এর মেয়াদ শেষ হবে।
তিনি বলেন, মালিক ও শ্রমিকপক্ষকে নিয়ে মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান বসেছেন। মালিকপক্ষ ও শ্রমিকপক্ষ উভয়েই ন্যূনতম মজুরি কত হতে পারে তা জানিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবি-দাওয়ার কথা জানিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। শ্রমিকদের মধ্যে কে বা কারা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে যে মালিকপক্ষ প্রস্তাব দিয়েছে ১০ হাজার ৪০০ টাকা। আর শ্রমিকপক্ষ প্রস্তাব দিয়েছে ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা। শ্রমিকদের কারা বুঝিয়েছে তাদের মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণ হয়ে গেছে। তারা এই বিভ্রান্তিতে ভুগছেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, মজুরি নির্ধারণের জন্য এখনও এক মাস বাকি আছে। ১ নভেম্বর মজুরি বোর্ডের সভা আছে। শ্রমিকরা কারও কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে কাজে ফিরে ফ্যাক্টরির নিরাপত্তা বিধান করবেন আমি এই আহ্বান জানাই। কারও ফাঁদে যেন তারা পা না দেন।
শাজাহান খান বলেন, গাজীপুরসহ কয়েক জায়গায় গত কয়েক দিন ধরে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে। এর ব্যাপ্তি বাড়ছে।
তিনি বলেন, যারা বিভ্রান্তি ছড়ালেন, কী উদ্দেশ্যে ছড়ালেন? মজুরি বোর্ড চারটি সভা করছে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। অনেকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। শ্রমিকদের খেপিয়ে তোলার জন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তিন দিন আগে একটি বিবৃতি দিলেন শ্রমিকদের ২১ হাজার টাকা মজুরি দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় মজুরি ৫৭০ থেকে ৯৩০ টাকা করা হয়। ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে বিএনপির আমলে মজুরি এক হাজার ৬৬২ টাকা করা হয়।
সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে ২০১০ খ্রিষ্টাব্দে ন্যূনতম মজুরি তিন হাজার টাকা করে দেন। ২০১৩ খ্রিষ্টাব্দে করেন ৫ হাজার ৩০০ টাকা, ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে এসে ৮ হাজার টাকা করে দেন শেখ হাসিনা। বিএনপি রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য এই কাজটি করেছে, বিভ্রান্তি ও অসন্তোষ সৃষ্টি করার জন্য ফখরুল ইসলাম এই বিবৃতি দিয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী একটি গ্রহণযোগ্য মজুরির ব্যবস্থা করবেন। এখনও মজুরি নির্ধারণ হয়নি, এখনো হাতে অনেক সময় আছে। বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রাখেন।